Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামবিদেশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়

বিদেশি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়

দেশের আর্থরাজনীতি ও আভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এ প্রবণতা চলে আসছে। সদ্য স্বাধীন বিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য বন্ধু প্রতিম দেশগুলোর সাহায্য-সহযোগিতা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তা যদি যুগের পর যুগ চলতে থাকে, তখন দেশটির নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এ থেকে বের হওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন পড়ে। যে নেতৃত্ব দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। এ কাজটি করতে ব্যর্থ হলে, যারা বন্ধু হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বা দিয়েছে, তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কতৃর্ত্ব করতে শুরু করে। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুরূপী বিদেশিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কর্তৃত্ব থেকে আমরা বের হতে পারেনি। এটি আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধীদল প্রত্যেককেই কোনো না কোনোভাবে বিদেশীদের তুষ্ট করে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার ব্যাপারে সরব থাকে। বিদেশিদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য অনেকটা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকে। মুখে মুখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বললেও বিদেশি সহযোগিতার প্রত্যাশা থেকে বের হতে পারেনি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রদেয় অর্থ কীভাবে ব্যয় করতে হবে, তার দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ, আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ শর্ত ও চাপ দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রতি পদে পদে খবরদারি করে। তাদের কথা মানা ছাড়া গতিও নেই। অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে হলে এসব দাতা সংস্থার ঋণ ছাড়া চলে না। সবাই জানে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এমন প্রতিষ্ঠান, যাদের জন্মই হয়েছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর খবরদারি করার জন্য। দেশগুলোর উন্নতি ও অগ্রগতির চাবিকাঠি অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। পুঁজিবাদি বিশ্বের অগ্রযাত্রাকালে ধনিক শ্রেণীর আধিপত্য ও সা¤্রাজ্যবাদী মনোভাব দরিদ্র দেশগুলোর উপর ধরে রাখা এবং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যেই সংস্থা দুটির জন্ম। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রথমত, দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে এগুতে হলে যে অর্থের প্রয়োজন, তা ঋণস্বরূপ যোগান দেয়া। দ্বিতীয়ত, দেশগুলোর উপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা, যাতে তাদের কথার বাইরে যেতে না পারে। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর এছাড়া কোনো উপায়ও থাকে না। বাধ্য হয়ে তাদের সহায়তা নিতে হয় এবং সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কথা শুনতে হয়। এখনও অনেক দেশের অর্থনীতি সংস্থা দুটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশ্য ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশই বিশ্বব্যাংককে বিদায় জানিয়েছে। আমাদের মতো দেশগুলো এখনও এ অবস্থায় উপনীত হতে পারেনি। বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফসহ অন্যান্য সংস্থার ঋণ এবং তাদের কথা ও শর্তের উপর নির্ভর করে চলেছে।

দুই.
বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর খবরদারির মধ্যেই আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। আমাদের উপর বিদেশিদের যে বিশাল ঋণের বোঝা চেপে আছে, তা বহন করেই এ উন্নতি করেছি। বলা হয়, দেশে যে বিদেশি ঋণ রয়েছে, মাথাপিছু তার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিটি মানুষ এই ঋণের বোঝা নিয়েই এগিয়ে চলেছে। আজ যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করছে, সে-ও এই পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জন্মাচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এ বোঝা আমরা চাইলেই নামিয়ে দিতে পারি না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, এ ঋণ নিয়ে তা হতে পারব কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ইতোমধ্যে আমাদের আরও ঋণের বোঝা চেপে বসেছে। আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিতে হচ্ছে। দেশে তীব্র ডলার সংকট চলছে। অর্থনীতি চরম মন্দাবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আরও ঋণ নিতে হতে পারে। তাহলে, উন্নত দেশে পরিণত হবো কি করে? যার নিজের সম্পদের উন্নতি নেই, সে কি করে উন্নতি করবে? ঋণ করে ঘি খাওয়া যেতে পারে, তবে উন্নতি করা যায় না। বাংলাদেশ এখন এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আবার ঋণ নিলেও তা সুদে-আসলে শোধও করতে হবে। ঋণ শোধ করতে গিয়ে এখনই অর্থনীতিতে টান ধরেছে। সামনে টান আরও বাড়চে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা এখনই হতাশায় পর্যবসিত হতে বসেছে। সরকার মানুষকে দূরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের যে দুঃখ-কষ্ট, তা গোচানোর কোনো নামগন্ধ নাই। জিনিসপত্রের আগুনে দামের কারণে মানুষের জীবনযাপন করাই যে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা দূর করার পদক্ষেপ নাই। উল্টো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ভর্তুকি কমানোর জন্য। এই ভর্তুকি কমানোর শর্ত এসেছে আইএমএফ-এর ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ঋণ নিতে গিয়ে মানুষের পকেটের পয়সা কেটে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেই এবং পাচার ঠেকানোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। বৈদেশিক রেমিট্যান্সও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। বিদেশি ঋণের বোঝার নিচে অর্থনীতির এই যে বেহাল দশা, তা কাটানোর কোনো উদ্যোগ নেই। তবে সরকারের উন্নয়নের ফানুস উড়ানো থেমে নেই। কয়েক দিন পরপর সরকারের তরফ থেকে উন্নতির সূচকের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। অর্থনীতির এসব সূচক বাড়লেই কি আর নামলেই কি, এতে সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসছে না। তাদের আলোচনার প্রয়োজনও নেই। কারণ, তাদের দুর্গতি কেবল তারাই জানে। তারা জানে, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। যে টাকা নিয়ে বাজারে যায়, তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে না। পকেট থেকে টাকা বের হয়ে যাচ্ছে, বাজারের ব্যাগ ভরছে না। তারা এটাও জানে, সরকার মানুষের পকেট ভরার চেয়ে উল্টো কীভাবে পকেট থেকে অর্থ বের করে নেয়া যায়, তার নানা ফন্দিফিকির করছে। তাদেরকে গরিবী হালের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে যদি সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, দেশে উন্নয়নের নহর বয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের অসহায় হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। সরকারের উন্নয়নের গর্ব পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারসহ বড় বড় ইট-পাথরের প্রকল্পগুলো এখন তাদের কাছে বড় বড় স্থাপনা ছাড়া কিছু মনে হয় না। তারা কেবল দেখছে, তাদের অর্থে গড়া এসব প্রকল্প ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তাদের টানাপড়েন সহজ করতে কোনো কাজে আসছে না। এসব উন্নয়নের যে প্রয়োজন নেই, তা নয়। তবে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার মধ্যে যদি এসব উন্নয়ন প্রকল্প করা হতো, তাহলে এগুলো নিয়ে তাদের উচ্ছ¡াস থাকত।

তিন.
আমাদের দেশের অর্থনীতিতে যেমন বিদেশিদের আধিপত্য রয়েছে, তেমনি রাজনীতেও রয়েছে। যে দল ক্ষমতায় থাকে বিদেশিদের তুষ্ট করে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। আবার বিরোধী দলকেও বিদেশীদের তুষ্ট করে ক্ষমতায় যেতে বেশ তৎপর দেখা যায়। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিদেশিদের তুষ্ট না করে যেন ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন। এর বাস্তব নজির দেশের মানুষ বহুবার দেখেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কী নগ্নভাবেই না প্রতিবেশি ভারত ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় রাখতে ভূমিকা রেখেছে। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব নিজে এসে কাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে হবে, কাকে করাতে হবে নাÑতা প্রকাশ্যে ঠিক করে দিয়ে যান। বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনীতিতে এমন নগ্ন হস্তক্ষেপ আর কখনো ঘটার নজির নেই। এমনিতে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য দূতিয়ালী করার জন্য বিদেশিদের আগমনের দৃশ্য মানুষ দেখেছে। দিনের পর দিন তারা উভয় দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। তারপর ব্যর্থ হয়ে চলে গেছেন। এ ধরনের দূতিয়ালী কাম্য না হলেও, অনিবার্য সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ হিসেবে দেশের মানুষ তা মেনে নিয়েছে। আমরা প্রথম এ ধরনের দূতিয়ালীর দৃশ্য দেখি ১৯৯৪ সালে। সে সময় ক্ষমতাসীন দল বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে সংকট নিরসনে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেন বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি উভয় দলের সাথে বেশ কয়েক দিন আলোচনা করে সমঝোতায় উপনীত হতে ব্যর্থ হন। তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত আর্জেন্টিনার কূটনীতিক অস্কার ফার্নান্দেজ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে আসেন। কয়েক দিনের আলাপ-আলোচনার পর তিনিও ব্যর্থ হয়ে চলে যান। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিদেশিদের মাধ্যমে এ ধরনের উদ্যোগ দেখা গেছে। এসব উদ্যোগ একটি দেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং সম্মানের না হলেও, শান্তির জন্য দেশের মানুষ মেনে নিয়েছিল। অন্তত এ ভেবে মেনে নিয়েছিল, উদ্যোগটি জাতিসংঘের মাধ্যমেই হয়েছে। তবে যখন একটি দেশ সরাসরি দূত পাঠিয়ে কীভাবে নির্বাচন করতে হবে, তা এসে ঠিক করে দিয়ে যায়, তখন দেশের আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত যে কাজটি করেছে, বোধকরি সচেতন ও দেশপ্রেমিক কোনো মানুষই তা ভালভাবে গ্রহণ করেনি। ভারতের এ ভূমিকাকে যারা স্বাগত জানিয়েছে তাদের বলতে শোনা যায়, বন্ধু রাষ্ট্র বলে সে তা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বন্ধু রাষ্ট্র মানে কি এই, আমরা কীভাবে চলব, কী খাব, কী খাব না, তা তার পছন্দ মতো করতে হবে? আত্মমর্যাদাশীল কোনো রাষ্ট্র কি তা করতে পারে? এর ফলাফল কি ভাল হয়েছে? হয়নি। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী অন্য দেশ ভালভাবে গ্রহণ করেনি। এখন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে চাপ দিচ্ছে। যে ভারত একটি বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছে, সেই ভারতও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার তাকিদ দিচ্ছে। দেশটি নাকি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে। নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত হবে না। এটা অবশ্য বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ, ভারত সব সময় চায় তারপন্থী একটি সরকার এখানে ক্ষমতায় থাক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বছর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তিনি ভারতে গিয়ে দেশটির সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখতে। এ অনুরোধ কি ভারত ফেলে দেবে? এখন দেখার বিষয় কী হয়। ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অধিক উৎসাহ সরকারের মধ্যে বেশ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বলতে হয়েছে, বিদেশি কারো ফরমায়েশে বাংলাদেশের গণতন্ত্র চলবে না। আমাদের নিজ দেশের গণতন্ত্র আমরাই চালাবো। এ বক্তব্যে যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বলা তা বুঝতে বাকি থাকে না।

চার.
আমরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এখনও স্বাধীন হতে পারিনি। বন্ধুত্বের নামে বিদেশিদের কাছে অনেকটা বন্দি হয়ে আছি। স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে অগ্রসর হতে পারিনি। যে দেশের অর্থনীতির বৃহদাংশ বিদেশিদের আর্থিক সহায়তা এবং ক্ষমতাকামী দলগুলো বিদেশিদের সহায়তা ও পরামর্শের উপর নির্ভরশীল, সে দেশের আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকে না। আমরা এখন যতই উন্নতির কথা বলি না কেন, অর্থনীতিতে ইমার্জিং টাইগার বলে আখ্যায়িত হই না কেন, বিদেশিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হতে না পারলে, তা কখনোই টেকসই হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমাদের বন্ধু প্রয়োজন, তবে তাদের খবরদারি বা কর্তৃত্ববাদী ভূমিকার প্রয়োজন নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য পেশাদারি মনোভাব ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বের পন্থা অবলম্বন করা বাঞ্চনীয়। এখানে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নীতিই প্রণিধানযোগ্য। নির্দিষ্ট কোনো দেশের উপর অতি নির্ভরশীল না হয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নীতি অবলম্বন করতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। বিদেশিদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই রাজনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানের নজির আমাদের দেশে রয়েছে। এরশাদ সরকারের পতনের পর গণতন্ত্রের নবযাত্রাকালে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে যে অনন্য নজির স্থাপন করেছে, তা রাজনীতির মূল চেতনা হওয়া উচিত। এই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের উদ্যোগ নিলে বিদেশিরা যেমন হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে না, তেমনি রাজনৈতিকভাবে বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ একটি অবস্থান সৃষ্টি হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments