বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ (পজীপ)-এর আওতায় ২২২টি ফটোকপিয়ার মেশিন ক্রয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য লঙ্ঘন করা হয়েছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর)। ধাপে ধাপে অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, বিল পরিশোধেও অনিয়মের অনন্য নজির স্থাপন করা হয়েছে।
কার্যাদেশ দেওয়ার পর এক মাসের আগে বিল পরিশোধের সুযোগ না থাকলেও সরবরাহকৃত পণ্যের বিল পরদিনই পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপে আরও যে ১১১টি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই এর বিল পরিশোধের অনিয়মটি সম্পন্ন হলে দুর্নীতিবাজ চক্রটি দুই কোটি টাকারও বেশি পকেটস্থ করবে, যা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। এই দুর্নীতিবাজদের কেন শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না-এটা এক বড় প্রশ্ন।
অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে নির্বিকার থাকায় দেশে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে টেন্ডার কারসাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অপকর্মের হোতারা বেশিরভাগ সময় শাস্তি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত। দুর্নীতিবাজদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করি আমরা।
কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আদায়ের গতি শ্লথ হওয়াসহ সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে কেউ যাতে ব্যক্তিগত ‘ধান্ধা’ হাসিলের সুযোগ না পায়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
দেশে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, প্রকল্পকেন্দ্রিক অনিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, সর্বোপরি দেশের প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এর মূলোৎপাটন করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়-নীতিবোধ, সততা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এ ধরনের দুর্নীতির তালিকা দীর্ঘতর হতে থাকবে, যা মোটেই কাম্য নয়।