Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeসাহিত্যবরগুনা জেলার সাহিত্য

বরগুনা জেলার সাহিত্য

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের এলাকা বরগুনা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ একটি জেলা। প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে এ জনপদটি বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এ ট্র্যাজেডিগুলো এ অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির অংশ হয়ে মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। ফলে এখানকার লোকসংস্কৃতির বেশিরভাগ উপাদানই বিশেষভাবে গেয়। পাঠ করার চেয়ে তা শুনতেই ভালো লাগে। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো কানের ভেতর দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মর্মে পশে আছে। লোকসংস্কৃতির এ বিষয়বস্তুগুলো মূলত আবর্তিত হয়েছে এখানকার মানুষদের সুখ-সমৃদ্ধি, জীবনযাপন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে। বরগুনার এমন একটি জনপ্রিয় লোক গান-

‘আনন্দ নাই ভাই ওরে, বাংলাদেশে কি আর গান গাই

কি বলিব বন্যার চোটে ঘর দোর নাইকো মোটে

লাশ দেখে কলিজা ফাটে ওরে দয়াল মালেক সাঁই’…

এ জেলার সাহিত্য ভান্ডারের মধ্যে রয়েছে : রূপকথা, ছড়া, পুঁথি, মুর্শিদীগান, কীর্তন জারিগান, সারিগান, দেহতত্ত্ব গান, লোকনাট্য, হয়লা ইত্যাদি। তবে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অনুপস্থিতি, যুগগত পশ্চাৎপদতা, ও সংগ্রহ-সংরক্ষণের অভাবে এখানের লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদানই হারিয়ে গেছে। বরগুনার লোকসংস্কৃতির কথা বললে, অনেকেই এমন সব গান, লোক ছড়া, কিসসা শোনান যে আশ্চর্য না হয়ে উপায় থাকে না। এগুলো কোথায় ছিল, কীভাবে বের হয়ে এলো এটা নিয়ে অনেক সময়ই অবাক হতে হয়।

এখানে পুরোনো দিনের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত অনেক বচন বা লোককাহিনি ফেরে মানুষের মুখে মুখে। এ জেলার বিয়ের গীতও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে এটাকে বলা হয় হয়লা। বাংলাদেশের নিজস্ব নাট্য পরিবেশনা নীতির মধ্যে গাজীর গানকে সর্বাধিক জনপ্রিয় লোকজ ঐতিহ্য হিসাবে গণ্য করা হয়। এ গানের প্রসিদ্ধ এলাকা হচ্ছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলো। তবে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় এ উপাখ্যান ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

অন্যদিকে, বরগুনার সাহিত্য নিয়ে কথা এলে রাখাইনদের সাহিত্য নিয়েও আলাপ চলে আসা অবশ্যম্ভাবী। এর কারণ হচ্ছে, ১৮ শতকের শেষদিকে আরাকান থেকে আসা রাখাইনরা বরগুনার জনবসতিহীন বন্য অরণ্যময় উপকূলীয় এলাকায় বসতি স্থাপন করার মাধ্যমে বরগুনার বিশাল এক ভূখণ্ডে জনবসতির ভিত্তি স্থাপন করে। ফলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কালাদান নদীর তীরে গড়ে ওঠা সুসভ্য রাখাইন জাতির উত্থান-পতনের ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও লোকাচার যেগুলো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে-তার ছোঁয়া এখানকার লোকসংস্কৃতিতেও পড়েছিল।

বরগুনায় সাহিত্য নিয়ে আলোচনায় সাহিত্যিকদের মধ্যে যার কথা সর্বাগ্রে চলে আসে তিনি সৈয়দা মোতাহেরা বানু। মোতাহেরা বানু ১৯০৬ সালে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার জমিদার মীর সারওয়ার জানের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোর এ বাড়িতেই কাটে তার। মুসলিম ভারত, ভারতবর্ষ, সওগাত, মাসিক মোহাম্মদী, আজাদ, বেগম প্রভৃতি পত্রিকায় তার বহু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। মুসলিম মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম তার রচিত গান রেকর্ড করা হয়। শিল্পী ছিলেন কে. মল্লিক। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাকে ‘কবি বোন’ বলে সম্বোধন করতেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ও এ জেলার সন্তান। তিনি ১৯৪০ সালের ১২ ডিসেম্বর বরগুনা জেলার আমতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে বিধবা মাসি তাকে নিয়ে কলকাতায় চলে গেলে সেখানে ১৯৫২ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ৭০ বছর পর ২০১৯ সালে শেকড়ের টানে মাতৃভূমির মাটির গন্ধ নিতে আমতলী এসেছিলেন বাংলা সাহিত্যের এ গুরুত্বপূর্ণ কবি। এ দুজন কবিই পরোলোকগমন করেছেন।

অন্যদিকে, বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের শ্বশুরবাড়ি বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা গ্রামে। সেলিনা হোসেন বরগুনার মাটি ও মানুষের সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছেন যে, এখানকার মানুষজন মনে করেন সেলিনা হোসেন বরগুনারই একজন। তিনি তার অকাল প্রয়াত কন্যা স্মরণে বরগুনায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনটি বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার প্রান্তিক নারী-মেয়ে-শিশু ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। বরগুনার শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেলিনা হোসেনের সরব পদচারণা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি বরগুনা জেলায় তিন দিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন গুণী এ সাহিত্যিক।

আশির দশকের কাব্যজগতের স্বতন্ত্র-পুরুষ মতিন বৈরাগী লাকুরতলার সন্তান। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হওয়া মতিন বৈরাগীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিষণ্ন প্রহরে দ্বিধাহীন’ থেকেই শনাক্ত করা গেছে যে মতিন বৈরাগী জীবন চেতনার কবি। তার বুঝলে রাজা কবিতাটি সমকালীন বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। কবির প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা বিশের অধিক, লিখেছেন প্রবন্ধও। পাথরঘাটার কৃতী সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের মোট ৪২টি গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৭টি। এর পাশাপশি বরগুনা জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ।

ঐতিহ্যে অবগাহন করেই ব্যক্তি-প্রতিভার প্রকাশ ঘটে। বরগুনার প্রায় কবির ক্ষেত্রেই এটি ঘটেছে। সাগর-নদী, লোনা পানি, অপ্রাপ্তি-আর্তনাদ, উল্লাস এখানকার কবি ও লেখকদের লেখার অনুসঙ্গ। বরগুনার সাহিত্যিকদের ভেতরে জাতীয় পর্যায়ে আরও যারা পরিচিত মুখ তাদের মধ্যে অন্যতম একজন নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল, বহুমাত্রিক শব্দসৈনিক কবি মোশতাক আল মেহেদী। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২টি। সাহিত্যের সব শাখাতেই সাবলীল বিচরণ করা জহিরুল হকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১১টি। গুজরাট সাহিত্য একাডেমি থেকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। শূন্য দশকের অন্যতম কবি রাজু আহমেদ মামুনের প্রকাশিত গ্রন্থ ৪টি। গভীর জীবন বোধ ও লৌকিক চেতনাকে তিনি কবিতার অনুসঙ্গ করেছেন স্বার্থকতার সঙ্গে। আরেক পরিচিত মুখ আখতারুজ্জামান আজাদের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯টি। তিনি কবিতা লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার বেশকিছু কবিতা আবৃত্তি হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি তার প্রবন্ধ গ্রন্থও আলোচিত হয়েছে। মর্তুজা হাসান সৈকত কবিতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন। তার কবিতাগুলো থেকে একটি আবৃত্তির একক অ্যালবাম হয়েছে।

উপকূল তীরবর্তী জেলা বরগুনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এ মনোরম পরিবেশ সৌন্দর্যের প্রতিফলন সম্ভবত কবিদের ভেতরেই বেশি ঘটায়। তাই বরগুনায় কবির সংখ্যা যত বেশি সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে সেই তুলনায় অংশগ্রহণ কম। বরগুনার সমকালীন সাহিত্যিকদের ভেতরে আরও যারা নিরলসভাবে সাহিত্যচর্চা করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পাথরঘাটার কবি ইদ্রিস আলী, তিনি লোকসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি কতৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫টি। তিনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন। পরাবাস্তববাদ ও সুফিবাদকে কবিতায় উপজীব্য করেছেন কবি প্রান্তিক জসীম। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৪টি। কবি শেখর বরণের প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৯টি। তার বেশ কিছু কবিতা আবৃত্তি হয়েছে। কবি ফরহাদ নাইয়া সাগরের সঙ্গে এখানকার মানুষের জীবন সংগ্রামকে কবিতায় উপজীব্য করে তুলেছেন। তিনি রাষ্ট্র, হারপুনসহ বেশ কিছু সাহিত্য পত্রিকাও সম্পাদনা করছেন। কবি জাফর ইদ্রিস কবিতার পাশাপাশি ছড়াকার হিসাবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। তার ৬টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অধ্যক্ষ মাসুদ আলম বাবুল গল্প, কবিতা, উপন্যাস সবই লিখে চলছেন সমানতালে। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি পেয়েছেন মাইকেল মধুসূদন পদক। সাবেক সংসদ সদস্য ও কবি নুরুল ইসলাম মনি ‘ইদানিং পাখিরা কবিতা লিখে না’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য এক সময় আলোচিত হয়েছিলেন ব্যাপক।

লিটল ম্যাগাজিনের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি আমতলীর তুহিন ওসমান, তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩টি। পাথরঘাটার আলোচিত কবি অ্যালেন সাইফুল ব্যক্তিগত আক্ষেপ, হতাশা, গ্লানিকে কবিতায় সার্বজনীন করে তুলেছেন, তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২টি। আমতলীর কবি ও ঔপন্যাসিক সুলতান মাহমুদের ৬টি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে, এর মধ্যে ইংরেজিতে লেখা কাব্যগ্রন্থও রয়েছে একটি। কবিতা ও উপন্যাসসহ প্রবীণ লেখক আবুল কাশেমের প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৭টি। মিজান হাওলাদারের প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩টি, তিনি বঙ্গভূমি নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। আরেফিন সায়ন্তী কবিতা ও গল্প লিখছেন, তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২টি। লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক চিত্তরঞ্জন শীলের বেশকিছু নাটক জাতীয় পর্যায়ে মঞ্চস্থ হয়েছে। এর মধ্যে পরিণতি, টিপসই, ঠকবাজ ও পায়রাপাড়ের মাহিনুর অন্যতম। এ ছাড়া তার লেখা গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : বরগুনা জেলা’ বেশ সমাদৃত হয়েছে। বাংলা চলচিত্রের অজস্র গানের স্রষ্টা গীতিকবি আলমগীর কবির পাথরঘাটার সন্তান। জেলার অন্যান্য গীতিকারদের মধ্যে রুদ্র রুহান নাম কুড়িয়েছেন।

এ ছাড়া বরগুনার সাহিত্যিকদের ভেতরে কবি সুশান্ত পোদ্দার, কবি স্বপন বন্ধু, কবি শুক্লা দেবনাথ, কবি নাসরিন হক, প্রাবন্ধিক আবদুর রহমান সালেহ, কবি ও প্রাবন্ধিক ফাতিমা পারভীন, কবি জাকিয়া সুলতানা শিরিন, কবি স্বপন দাস, কবি রুদ্র রুহান, কবি আসাদ জামান, কবি ও প্রচ্ছদশিল্পী আল নোমান, কবি মহিউদ্দিন হেলাল, কবি নজরুল ইসলাম সাজু, কবি সোহেলী পারভীন ছবি, কবি বেলীন্দা তুরকান শাহ্, কবি আবদুল্লাহ আল সাজু, কবি শাওন মুতাইত, কবি রাজিব হাওলাদার, ওপন্যাসিক ওবায়দুল হক মিলন, কবি আসলাম এইচ পাশা, কবি মারুফ রহমান, বিপ্লব কুমার শীল, কবি আতিক রহমান, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ বাবুল আকতার, ছড়াকার মিথু আহমেদ বিন সুলতানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়।

কবি সুশান্ত পোদ্দার কবিতার নতুন একটি ফর্মেট সামনে নিয়ে এসেছেন। অনেকটা হাইকুর আদলে ৭-৫-৭ মাত্রার এ কবিতার ফর্মেট। কিন্তু এগিয়েছে পরমাণুর গঠনরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। রয়েছে সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যতাও। কবিতার এ ফর্মেটের নাম পরমাণুকাব্য। সুশান্ত পোদ্দারসহ বরগুনার একঝাঁক তরুণ কবি নতুন এ ফর্মেটে নিয়মিত কবিতা লিখছেন। এ পরমাণুকাব্য নিয়ে বের হয়েছে বেশকিছু ভাজপত্র। পরমাণুকাব্যের কবিদের ভেতরে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, বিপ্লব কুমার, সুদ্বীপা দাস, রাজীব বিশ্বাস ও শাকিল আহমেদ।

কিছুটা অনিয়মিত হলেও বরগুনা জেলার স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোও এখানকার কবি সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। বরগুনার অধুনালুপ্ত দৈনিক স্বাধীন বানী এক সময় সাহিত্য পাতা নিয়মিত করত। স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকদের লেখাও সেখানে প্রকাশ হতো। কবি প্রান্তিক জসীমের সম্পাদনায় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে প্রকাশ হতো সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা-লাল সবুজ ও রক্তাক্ত প্রান্তর। এ ছাড়া চিরঞ্জীব মুজিব নামে আরেকটি ট্যাবলয়েড পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি।

এ ছাড়া তুহিন ওসমানের সম্পাদনায় সেতু বন্ধন, অঙ্গন ও মার্জিন, সুশান্ত পোদ্দারের সম্পাদনায় মানব, জল ও জীবন, প্রয়াস, আল নোমানের সম্পাদনায় নুরজাহান, চিত্তরঞ্জন শীলের সম্পাদনায় রাজাশাইল, রহমান সালেহর সম্পাদনায় অর্পণ ও অক্ষর, আতিক রহমানের সম্পাদনায় আলোকশিখা, সোহেল হাফিজের সম্পাদনায় ত্রি-পাক্ষিক বরগুনা, মান্না আজাদের সম্পাদনায় বেলাভূমি, বিপ্লব কুমার শীলের সম্পাদনায় পরমাণুকাব্য, সুমন শিকদারের সম্পাদনায় বর্ণে বরগুনাসহ বেশ কয়েকটি সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা ও ভাজপত্র এখানে বেশ কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে।

এক যুগ আগে ফরহাদ নাইয়া, আল নোমান ও আবদুর রহমান সালেহসহ আরও কয়েকজন তরুণ মিলে আমতলীতে গড়ে তুলেছিল নুরজাহান সাহিত্য পরিষদ। বরগুনায় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচারে এক সময় ভূমিকা রেখেছে সেটি। এ ছাড়া চিত্ত রঞ্জন শীল, মনির হোসেন কামাল, ফাতিমা পারভীন, হুমায়ুন কবিরসহ আরও কয়েকজনের প্রচেষ্টায় ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দাঁড়িয়েছে বরগুনা সাহিত্য পরিষদ। এর পাশাপাশি হাসান ঝন্টু, মহিউদ্দিন হেলাল, তরিকুল ইসলাম রিয়াজ ও সোহেলী পারভীন ছবির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বরগুনা সাহিত্য সংসদ নামে আরেকটি সাহিত্য পরিষদ। এখানকার সাহিত্য সংগঠনগুলো নিয়মিত সাহিত্য আসর করাসহ সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, সাহিত্য পরিষদের বাইরেও নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা। ফলে তরুণরা আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে ঝুঁকছে সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার দিকে। বরগুনার সাহিত্য সংস্কৃতির দিগন্ত আরও অনেকদূর প্রসারিত হবে এদের হাত ধরে, প্রত্যাশা এটাই।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments