Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মবই সংগ্রহে আব্বাসীয় খলিফাদের আগ্রহ

বই সংগ্রহে আব্বাসীয় খলিফাদের আগ্রহ

আব্বাসীয় খেলাফতের রাজধানী বাগদাদ তার জ্ঞানগত ঐশ্বর্যের জন্য চির স্মরণীয়। আব্বাসীয় খলিফাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাগদাদ বহুমুখী জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এর প্রভাব পড়ে বাগদাদের জনজীবনে। জ্ঞানচর্চা, পাঠাভ্যাস ও বইপ্রেম তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশে পরিণত হয়।

ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা বিশালায়তন পাঠাগারগুলোর বাইরেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহু পাঠাগার গড়ে ওঠে।

ইসলামের ইতিহাসে আব্বাসীয় খলিফারাই জ্ঞানচর্চা ও তার বিকাশে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন এবং এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তারা মাদরাসা, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগারসহ বহুমুখী জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং তাতে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একত্র করতে তাদের ধনভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

আব্বাসীয় শাসকদের পৃষ্ঠপোষকায় পাঠাগারগুলোর মধ্যে বাগদাদের কেন্দ্রীয় পাঠাগারটি সর্ববৃহৎ। ধারণা করা হয়, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহৎ পাঠাগারগুলোর একটি। মোঙ্গলীয়দের হাতে বাগদাদের পতনের আগে এখানে কমপক্ষে ২০ লাখ বইয়ের বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল। মোঙ্গলীয়রা বাগদাদ দখলের পর কেন্দ্রীয় পাঠাগারে অগ্নিসংযোগ করে এবং বেঁচে যাওয়া বইগুলো দজলা নদীতে ফেলে দেয়।

বাগদাগ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ। তবে পাঠাগারে প্রাণ সৃষ্টি করেন খলিফা আল-মামুন। তিনি এখানে আরবি ভাষার পাশাপাশি গ্রিক, সুরয়ানি, হিন্দি, সংস্কৃত, ফারসি ও লাতিন ভাষার বই একত্র করেন। এটি কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মানুষের জ্ঞানচর্চায় অবদান রাখে। মূলত খফিলা আল-মামুন এটিকে ‘বায়তুল হিকমাহ’র অংশ হিসেবেই গড়ে তোলেন। ইতিহাস গবেষক রাগিব সারজানি লেখেন, ‘এখানে সব জ্ঞান ও শাস্ত্রের ওপর বই ছিল। তার মধ্যে ছিল ধর্মসংশ্লিষ্ট শাস্ত্র যথা—তাফসির, হাদিস, ফিকহ, আকিদা ইত্যাদি। ছিল জাগতিক জীবনসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়। যেমন চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল, রসায়ন, পদার্থ, ভূগোল, গণিত, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ইত্যাদি। বিদেশি ভাষায় রচিত কবিতা, উপাখ্যান, প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন বিষয়ে ১০ হাজার গ্রন্থ ছিল। ’

এ ছাড়া আব্বাসীয় আমলের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল মাদরাসায়ে মুস্তানসিরিয়া। ৬৩১ হিজরিতে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এখানে একটি বৃহৎ ও সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে ওঠে। বিশাল সংগ্রহশালা, বিষয় বৈচিত্র্য ও বইয়ের মানে এই পাঠাগার ছিল প্রবাদতুল্য। এই পাঠাগারের দায়িত্বে ছিলেন ঐতিহাসিক ইবনু সায়ি। তিনি পাঠাগার সম্পর্কে লেখেন, ‘এই পাঠাগারে আছে বইয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা। যার মধ্যে আছে বই, পাণ্ডুলিপি ও বিভিন্ন আইনের অনুলিপি। যেগুলো এখানে বহন করে আনতে ২৯০টি বাহনের প্রয়োজন হয়েছিল। এর পরও আরো বহু বই তাতে যুক্ত হয়েছে। ’

তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা ও তারিকুল ইসলাম

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments