Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামফ্রিল্যান্সারদের আইটি ও ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলতে হবে

ফ্রিল্যান্সারদের আইটি ও ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলতে হবে

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম হচ্ছে, কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রি, সংরক্ষণ ও তার ব্যবহার এবং আইটি, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর উন্নতি ও ব্যবহারকেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলা হচ্ছে। এ বিপ্লবে যে দেশ যত এগিয়ে যাচ্ছে, সে দেশ তত উন্নতি করছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বাধিক এগিয়ে রয়েছে ধনী দেশগুলো। কিন্তু বেশি তাদের অসুবিধা হচ্ছে, দেশে সংশ্লিষ্ট দক্ষ জনবলের পারিশ্রমিক অত্যধিক। তাই তারা প্রযুক্তির কাজগুলো গরিব দেশ থেকে করে নিচ্ছে, যার সদ্ব্যবহার করছে গরিব দেশের বেকার শিক্ষিত তরুণরা। এতে তাদের উপার্জন ভালো হচ্ছে। বেকারত্ব দূর হচ্ছে। দেশেরও উন্নতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দেশের বেকার তরুণরা ধনী দেশগুলোর ডাটা এন্ট্রি ও আইটি খাতের বিভিন্ন কাজে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে। তারা ফ্রিল্যান্সার বলে খ্যাত। সরকারি তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬.৫ লাখ। তাদের মোট আয়ের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ফ্রিল্যান্সারদের বেশিরভাগই বাড়িতে বসেই এই কাজ করতে পারছে। ফলে এতে বহু নারীও সংশ্লিষ্ট হয়েছে। তাই শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে, যা একটি সুখবর। অবশ্য নেতিবাচক খবরও আছে। যেমন: তারা প্রায় সকলেই নি¤œ মূল্যের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। কারণ, উচ্চ মূল্যের কাজে তারা দক্ষ নয়। উৎসাহীও নয়। অথচ, এ কাজেই পারিশ্রমিক বেশি। দ্বিতীয়ত: ভাষার কারণে ফ্রিল্যান্সাদের খুবই অসুবিধা হয়। ইংরেজিতে তারা দক্ষ নয়। অথচ, তাদের কাজের সবই হয় ইংরেজিতে। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত মাউশির প্রতিবেদন মতে, ‘মাধ্যমিকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে বেশি খারাপ।’ প্রাথমিকে শিক্ষার নি¤œ মানের জের এটি। তদ্রæপ মাধ্যমকে খারাপ মানের প্রভাব পড়ছে উচ্চ শিক্ষায়। শিক্ষার খারাপ মানের প্রভাব পড়ছে দেশের সব কর্মেই। উৎপাদনশীলতার হার কম। একই কারণে প্রবাসীদেরও বেতন কম অন্য দেশের তুলনায়। তৃতীয়ত: দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি খুব কম। উপরন্তু শহরের বাইরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেই। চতুর্থত: দেশে অত্যাধুনিক কম্পিউটার নেই। অথচ, এই কম্পিউটারে যেকোন একটি ভার্সনে কাজ করে সেটি ইংরেজিসহ অন্য কয়েকটি ভার্সনে রূপান্তর করা যায়। ফলে ইংরেজিতে অদক্ষ হলেও কোনো অসুবিধা হয় না।

যা’হোক, দেশের ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা অনুযায়ী আয়ের পরিমাণ খুব কম। এ মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট গবেষকদের। ‘আইটি ফ্রিল্যান্সিং ইন বাংলাদেশ: অ্যাসেসমেন্ট অব প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার নিডস’ শীর্ষক এক গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে স¤প্রতি। এটি করেছেন দেশের সেরা তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। গবেষণায় সাতটি সুনির্দিষ্ট খাতে ঘণ্টাপ্রতি মার্কিন ডলারে বৈশ্বিক গড় আয়ের সাথে দেশের ফ্রিল্যান্সারদের গড় আয়ের তুলনা করা হয়েছে। তার চিত্র হচ্ছে: অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খাতে বৈশ্বিক মানদÐে পুরুষ ৩৯.১ ও নারীর ৩০ বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ১৪ ও নারী ১০, ডিজাইন খাতে পুরুষ ৩৮.১ ও নারীর ৬১.১ বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ২০ ও নারী ৭, বিজনেস সার্ভিস খাতে পুরুষ ৩৮ ও নারী ৬২.৩ ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ২৩ ও নারীর ১৯, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ম্যানেজমেন্ট খাতে পুরুষ ৫৪.৪ ও নারীর ৩০ ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ২৪ ও নারী ১৩, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং খাতে পুরুষ ৩৩.৫ ও নারীর ৮৬.১ বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ১০ ও নারী ৩, রাইটিং অ্যান্ড ট্রান্সলেশন খাতে পুরুষ ৪৪.৮ ও নারীর ৩৯.২ বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ১৩ ও নারীর ১২, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট খাতে পুরুষ ৯৭ ও নারীর ৫৯ বিপরীতে বাংলাদেশি পুরুষ ২৩ ও নারী ১৭। দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিক গড় আয়ের চেয়ে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের গড় আয় অর্ধেক, অনেক ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশ। অথচ, এটা না হয়ে সমান হলে দেশের বর্ণিত আয় ১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২-২.৫ বিলিয়ন ডলার আয় হতো। তাতে তারা নিজেরা ছাড়া দেশেরও ব্যাপক কল্যাণ হতো।


বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের গড় আয় বৈশ্বিক গড় আয়ের চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণ হিসাবে দেশের আইটি বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের একটা বড় অংশই প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। এ দিয়ে যেটুকু কাজ করা যায়, তাতেই তারা অভ্যস্ত। নতুন কাজের দক্ষতা বাড়াতে যেসব প্রশিক্ষণ প্রয়োজন সেগুলোতে তারা আগ্রহী নয়। ফলে এ খাতে দক্ষ জনসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। উচ্চ পারিশ্রমিকের কাজ যেমন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে কাজের লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসব কাজে যুক্ত হতে হলে সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরিশ্রম প্রয়োজন, যা অনেকেই করতে চায় না। এছাড়া, ভাষাগত দক্ষতার অভাবে ফ্রিল্যান্সারদের বেশিরভাগ ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগও রক্ষা করতে পারে না। অপরদিকে, সিএনবিসির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের শুধুমাত্র ১২টি বিভাগে দক্ষতা সীমাবদ্ধ। যেমন: কন্টেন্ট রাইটিং, ক্রিয়েটিভ আর্ট অ্যান্ড গ্রাফিকস ডিজাইন, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, মডার্ন অ্যাকাউন্টিং, মোবাইল গেম অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ডাটা অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ভিজ্যুয়ালাইজেশান, ওয়েবসাইট থিম অ্যান্ড প্লাগ ইন ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং ও সিকিউরিটি। এর মধ্যে ৫২% ওয়েব ডেভেলপিং, ৩৫% গ্রাফিক্স ডিজাইন, ৫% ডিজিটাল মার্কেটিং ও ৮% অন্য কাজ । অথচ, বৈশ্বিক মার্কেট প্লেসে অন্তত ১,০১৯ ধরনের কাজ রয়েছে। কিন্তু সেসব কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই এবং ভাষার প্রতিবন্ধকতা রয়েছেই। এ সংক্রান্ত ভালো প্রশিক্ষক ও কোর্সের অভাব রয়েছে। তাই অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ শেখাতে পারার দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি করা প্রয়োজন।

বেকারত্ব ব্যাপক, যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বাজারে কাজের জন্য প্রতি বছর নতুন যত লোক প্রবেশ করছে, তত নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। উপরন্তু দেশ-বিদেশে কর্ম কমছে বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে। তাই দেশের তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজে যুক্ত হওয়া আবশ্যক। সেটা নি¤œস্তরের কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে চলবে না। উচ্চতর কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে। কারণ, তাতে পারিশ্রমিক অত্যধিক। ফলে আয় অনেক বেশি। ফ্রিল্যান্সিং কাজে যুক্ত হওয়ার আগে অ্যাডভান্স লেভেলের কাজের ভালো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ হওয়া দরকার। ভালো ও দক্ষ প্রশিক্ষকের কাছে কিছুদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। তেমনি ইংরেজিতেও ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠানে কয়েক মাসের ইংরেজি কোর্স করলে এবং সব সময় ইংরেজি চর্চা করলে এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা কঠিন নয়। প্রয়োজনে গার্মেন্টের বাইং হাউজের ন্যায় ফ্রিল্যান্সিং হাউজ গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যেই কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারা ভালো কাজ করছে। তাই এ ধরনের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার।

উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হঠাৎ করে আইটি ও ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া কিছুটা কঠিন। তাই এই দু’খাতের দক্ষতা সৃষ্টির সূচনা ঘটাতে হবে শিক্ষার নি¤œ পর্যায় থেকেই। ইংরেজি শিক্ষা সূচনা থেকেই আছে বহুদিন যাবত। কয়েক বছর আগে মাধ্যমিকের মধ্য পর্যায় থেকে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে নীচ লেবেল থেকেই এই দু’বিষয়ে দক্ষ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষকের অভাবে। এ ব্যাপারে গত ১০ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যদের অভিমত স্মরণীয়।উক্ত সভায় কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব করে দেয়া হয়। কিন্তু তার অনেকগুলোই শুরু থেকে চাদর বা টাওয়েল দিয়ে মুড়িয়ে রাখা রয়েছে। এগুলো চালু করা হয় না। আবার কিছু কম্পিউটার গভর্নিং বডির সভাপতি তার বাড়ি নিয়ে গেছেন। শিক্ষকদেরও কেউ কেউ কিছু কম্পিউটার বাসায় নিয়ে গেছেন। কিছু পড়ে আছে। কাগজে-কলমে আইসিটি ল্যাব দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আইসিটি দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী নেই। সরজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা আইসিটি সম্পর্কে বলতে পারে কিন্তু হাতে-কলমে কিছু জানে না’। অপরদিকে, গত ১৪ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, শিক্ষা কমিশন ও ওয়ার্ল্ড ডাটা ল্যাবের সমন্বয়ে গঠিত দ্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস ক্লকের এক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% তরুণ-তরুণীর ডিজিটাল দক্ষতা নেই। শিক্ষার্থীদের আইটিতে অদক্ষতা ও শিক্ষার মানহীনতার প্রভাব পড়ছে দেশের বেশিরভাগ কর্মেই। যেমন: জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স -২০২২ অনুযায়ী, ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১১তম, স্কোর ০.৫৬৩০ এবং ই-পার্টিসিপেশনে ৭৫তম, স্কোর ০.৫২২৭ । গত ২৪ জুন প্রকাশিত ইউএনডিপির বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক-২০২১ মতে, ১৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ১১৯তম, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ৭৭তম, উচ্চশিক্ষায় ১২২তম, গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ১৩৬তম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১১৭তম, অর্থনীতিতে ১০১তম এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশে ১৩৪তম। এই হচ্ছে দেশের শিক্ষা ও কর্ম খাতের চালচিত্র। এ অবস্থায় আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকা থাকা কঠিন।

তাই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কর্মমুখী শিক্ষার দ্রæত প্রবর্তন এবং আইটি ও ইংরেজি শিক্ষার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। উপরন্তু শিক্ষার মানোন্নয়ন করে বৈশ্বিক মানের করতে হবে। সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষকের যে ১.৫ লাখের অধিক পদ শূন্য আছে,তা দ্রæত পূরণ করতে হবে মেধাবীদের দিয়ে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ হলেই মেধাবীরা নিয়োগ পাবে। এছাড়া, চাকরিরত শিক্ষকদের বিরাট অংশ অদক্ষ রয়েছে। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় গবেষণামূলক কাজে প্রাধান্য দেওয়া এবং সব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ল্যাব ও দক্ষ প্রশিক্ষক থাকা এবং নিয়মিত ক্লাশ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।সর্বোপরি কারিগরি শিক্ষার হার দ্রæত কাংখিত পর্যায়ে উন্নীত করা দরকার। অন্যদিকে, ইসলামী পÐিতদের মতে, কওমিতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে ধর্মীয় শিক্ষার কোন ক্ষতি হয় না। বরং শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হয়। বেকার থাকতে হয় না। তাই সব কওমিতে কর্মমুখী শিক্ষা চালু করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। সে ব্যাপারে শিক্ষকদের দক্ষ করতে হবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। সৃজনশীল প্রশ্নের ব্যাপারে কিন্তু এখনো ৩৮% শিক্ষক অদক্ষ রয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের বৈষম্য রয়েছে, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ বৈষম্য দূর এবং শিক্ষকতা পেশাকে মর্যাদাশীল করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘প্রাথমিকে ঝরে পড়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ৬০%। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তা ২৫-৩০% দাঁড়ায়। আর দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আসতে পারে মাত্র ১০-১২% শিক্ষার্থী। যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারে, তাদেরও শিক্ষার মান নিয়েও সংশয় রয়েছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত শিক্ষার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এখনো তা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ’। উল্লেখ্য যে, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে শিক্ষার্থী টিকে থাকে তার বেশিরভাগই ঝরে পড়ে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগ হলেও তা উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারে মাত্র ৪-৫%! শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া এই হার বন্ধ করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার! শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধ করার জন্য দারিদ্র দূর ও শিক্ষা ব্যয় কমাতে হবে। সে জন্য শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করে জিডিপির অন্তত ৬% করতে হবে। এতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। কারণ, এটা ব্যাপক মুনাফা ভিত্তিক বিনিয়োগ।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments