Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামপ্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য

দেশে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা চালুর পর ওই পরীক্ষা ঘিরে শুরু হয় রমরমা বাণিজ্য। সম্প্রতি পিইসি পরীক্ষা বাতিল হওয়ার ঘোষণা এসেছে। এ ঘোষণা শুনে আমরা মনে করেছিলাম, পিইসি ঘিরে দেশে কোচিং বাণিজ্য এবং নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসায়ীদের যে দৌরাত্ম্য ছিল তার অবসান হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ঘিরে আবারও কোচিং বাণিজ্য এবং নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক।

সম্প্রতি প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, শিক্ষাবিদদের প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তটি বাতিল করা হবে; কিন্তু তা হয়নি। জানা যায়, কিছুসংখ্যক শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ আছে কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের। তারাই ওইসব প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষার্থীদের।

অতীতের তুলনায় এখন বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষকদের বেতনভাতা বেড়েছে। শিক্ষকদের আরও বেতনভাতা বাড়ানো দরকার। এজন্য শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতনভাতা যতই বাড়ানো হোক, প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমবে না।

সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ার এক দশক পরেও দেশের বহু শিক্ষক ওই পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। ওই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, পেশার প্রতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা কতটা আন্তরিক। দেশে শিক্ষার বিস্তার বাড়লেও মান কতটা বেড়েও এটি এক প্রশ্ন। সরকার শিক্ষাবিস্তারে অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে, জানুয়ারিতে বই উৎসব তার অন্যতম উদাহরণ। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও শিক্ষা খাতে কেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা যতদিন চালু থাকবে, তাতে শতভাগ শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। তবে আমরা মনে করি, প্রাথমিকের বিদ্যমান বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে স্কুলভিত্তিক মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া উচিত। অভিভাবকরা যদি চান প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা চালু থাকুক, সেক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলা বা জেলায় আলাদাভাবে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রাইভেট কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

অভিভাবকদের উচিত, শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে যথাযথ মনোযোগী হওয়া। তারা যদি শিক্ষার্থীদের সব দায়িত্ব শিক্ষকদের ওপর ছেড়ে দেন, তাতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক অর্জন সন্তোষজনক হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল উপহার দেওয়ার পাশাপাশি তারা উচ্চ নৈতিকতাও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় উদ্বুদ্ধ হবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।

সমাজের সর্বস্তরে যদি উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চা না থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পাবে কোথায়? কোনো শিশু যদি নিজ পরিবারে নৈতিকতাবিষয়ক পর্যাপ্ত মৌলিক শিক্ষা না পায়, সেই অভাব পূরণে শিক্ষকদের সচেষ্ট হতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, যা দিয়ে তারা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments