Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মপ্রাচীন নগরী সুসাতে মুসলিম ঐতিহ্য

প্রাচীন নগরী সুসাতে মুসলিম ঐতিহ্য

মুসলিম শাসনামলে সুসা শহরের বহুমুখী আধুনিকায়ন ঘটে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সেখানে আধুনিক বহু স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে পর্যটকরা এই শহরের নাম দেয় ‘উপকূলের মুক্তা’

পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম শহর তিউনিসিয়ার সুসা শহর। খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার বছর আগে ফিনিশীয়রা এই শহরের গোড়াপত্তন করে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে শহরটি মুসলিম শাসনাধীন। মুসলিম শাসনামলে সুসা শহরের বহুমুখী আধুনিকায়ন ঘটে।

মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সেখানে আধুনিক বহু স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে পর্যটকরা এই শহরের নাম দেয় ‘উপকূলের মুক্তা’।

মুসলিম শাসনামলে সুসা শহরের যেসব স্থাপত্য গড়ে ওঠে তার মধ্যে ‘গ্রেট মসক অব সুসা’ অন্যতম। মসজিদটি ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ‘মদিনা আস-সুসা’-এর অংশ।

মসজিদটি ৮৫১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। আব্বাসীয় খলিফার প্রশাসক আমির আবুল আব্বাস মুহাম্মদ আল-আগলাবি মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে দশম ও সপ্তদশ হিজরিতে মসজিদটির গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন হয়। মসজিদটি আব্বাসীয় আমলের সেনা আবাস ‘রিবাত’-এর পাশেই অবস্থিত এবং তা দ্বারা প্রভাবিত। ধারণা করা হয়, রিবাতের প্রভাবেই গ্রেট মসক অব সুসার বারান্দায় উঁচু দেয়ালে আবদ্ধ করা হয়েছে।

মসজিদের একটি প্রার্থনা কক্ষ ও প্রাঙ্গণ আছে। চতুর্ভুজ আকৃতির প্রার্থনা কক্ষটি দুটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং পশ্চিম দেয়ালের ঠিক মধ্যভাগে আছে একটি মেহরাব। ‘গ্রেট মসক অব সুসা’ উমাইয়া ও আব্বাসীয় আমলে নির্মিত সেই তিন মসজিদের, যাতে গম্বুজটি ঠিক মিহরাবের সামনে স্থাপিত। অপর দুটি মসজিদ হলো দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ এবং জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। মসজিদের মেহরাব জিরিদ আমলে অলংকৃত এবং তাতে ‘কুফি’ শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের সম্মুখভাগে কুফি শৈলীতে একজন আমিরের আজাদকৃত দাসেরও নাম আছে, যিনি মসজিদের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং প্রধান নির্মাতা হিসেবে কাজ করেন। মসজিদে কোনো মিনার নেই। তাই মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত গম্বুজযুক্ত স্থাপনায় দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো।

সুসা নগরীতে প্রাচীন ইসলামী স্থাপত্যের মধ্যে আরো আছে—

১. আল-কাতাতিব : প্রাচীনকালে প্রচলিত প্রাথমিক স্তরের মাদরাসা। যেখানে শিশুরা কোরআন পাঠ ও তা মুখস্থ করত এবং আরবি ভাষা ও ফিকহের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করত।

২. আবু ফাতাতা মসজিদ : এটি সুসা নগরীর সর্বপ্রাচীন মসজিদ এবং আগলাবি আমলেই নির্মিত হয়।

৩. রিবাতাত : রিবাত দ্বারা আধুনিক যুগের সেনা ছাউনির অনুরূপ। তবে এগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতার চর্চাও হতো। এগুলো তৈরি করা হয়েছিল বাইজাইন্টাইন বাহিনীর সামুদ্রিক হামলা থেকে শহরকে রক্ষার জন্য। এটা সেনা ছাউনি হলেও এখানে সেনাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সেখানে আলেম ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং নিয়মিত কোরআন ও সুন্নাহর চর্চা হতো। অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগিতে তাঁদের উৎসাহিত করা হতো। রিবাতগুলো ফাতেমি যুগের শেষভাগ পর্যন্ত টিকে ছিল।

৪. মাদরাসা : সুসাতে পঞ্চম হিজরি শতকে বিকশিত বেশ কিছু মাদরাসাও আছে।

সূত্র : কার্থেইজ ম্যাগাজিন ও ডিসকাভার ইসলামিক আর্ট

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments