Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeসাহিত্যপ্রসঙ্গ : মাদারীপুরের সাহিত্য

প্রসঙ্গ : মাদারীপুরের সাহিত্য

নদ-নদী, হাওড়-বাঁওড় আর খাল-বিল বিধৌত প্রাকৃতিক নৈসর্গের সমতল ভূমি মাদারীপুর। মাদারীপুরের সাহিত্য প্রসঙ্গে কথা বলার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন-কাকে আমরা মাদারীপুরের লেখক-সাহিত্যিক বলে চিহ্নিত করব? এ প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া জরুরি। কেননা ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হওয়ার আগে মাদারীপুর মহকুমা ছিল। মাদারীপুর মহকুমার দুটি অংশ-একটি পশ্চিম মাদারীপুর অপরটি পূর্ব মাদারীপুর। পশ্চিম মাদারীপুর নিয়ে গঠিত হয়েছে মাদারীপুর জেলা আর পূর্ব মাদারীপুর নিয়ে শরীয়তপুর জেলা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ১৯৮৪ সালের পূর্বে যারা পূর্ব মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং সাহিত্যচর্চা করেছেন তাদের আমরা মাদারীপুরের লেখক বলে গণ্য করছি। এ ছাড়া লেখক নির্বাচনে তিনটি দিক বিবেচনায় রাখছি- এক. যারা মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং মাদারীপুরেই লেখালেখির চর্চা করেছেন। ২. যারা মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন কিন্তু লেখালেখির চর্চা করেছেন অন্যত্র। এবং ৩. যারা অন্যত্র জন্মগ্রহণ করেছেন কিন্তু দীর্ঘদিন মাদারীপুরে অতিবাহিত করেছেন এবং লেখালেখির চর্চা করেছেন-এ তিন ধরনের লেখককেই মাদারীপুরের লেখক হিসাবে গণ্য করে মাদারীপুরের সাহিত্য প্রসঙ্গে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

মাদারীপুরের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এ জেলার কৃতী সন্তানেরা দেশ ও জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। যদিও এর অতীত ইতিহাস সম্পর্কে খুব একটা তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় না। তদুপরি যতটুকু তথ্য আমাদের হাতে আছে তাতেই মাদারীপুরের সাহিত্য নিয়ে গর্ব করা যায়। মহাকবি আলাওলের জন্ম মাদারীপুরে। আলাওল (১৫৯৭-১৬০৭ মতান্তরে ১৬৭৩-১৬৮০) মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তার পূর্ণ নাম সৈয়দ আলাওল। জন্ম মাদারীপুরের ধুরাইল ইউনিয়নের জালালপুরে। তিনি আরবি, ফার্সি, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। ব্রজবুলি ও মঘী ভাষাও তার আয়ত্তে ছিল। প্রাকৃতপৈঙ্গল, যোগশাস্ত্র, কামশাস্ত্র, অধ্যাত্মবিদ্যা, ইসলাম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র-ক্রিয়াপদ্ধতি, যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব চালনা প্রভৃতিতে বিশেষ পারদর্শী আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন।

ব্রিটিশ আমলে মাদারীপুরের সাহিত্যচর্চার ইতিহাস বেশ জ্বলজ্বলে। এ সময়ে মাদারীপুরে এমন কয়েকজন কবি লেখকের জন্ম হয়েছে যারা বাঙলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ স্বল্পপরিসরে তাদের সবার কীর্তি তুলে ধরা অসম্ভব। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের সাহিত্য কর্মের কিঞ্চিৎ তুলে ধরছি। ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে পূর্ব মাদারীপুরের যপসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি জয়নারায়ণ সেন। তিনি শক্তিধর কবি প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থ ‘হরিলীলা’ ও ‘চণ্ডিকাব্য’ সপ্রশংসিত হয়। বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড)-তে জয়নারায়ণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে : ‘জয়নারায়ণ সেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ‘হরি-লীলা’ ও ‘চণ্ডীকাব্য’ প্রণয়ন করেন। ইনি ভারতচন্দ্র ও রামপ্রসাদের সমসাময়িক কবি; এবং উক্ত দুই কবির পরেই সসম্মানে উল্লেখযোগ্য। ইনি অষ্টাদশ শতাব্দীর পূর্ববঙ্গীয় কবিগণের শীর্ষস্থানীয় এবং ওই সমেয়র সমগ্র বঙ্গীয় কবিকুলের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আসীন হইবার যোগ্য।’

পূর্ব মাদারীপুরের যপসা গ্রামে আরও বেশ কয়েকজন কীর্তিমান সাহিত্যিকের জন্ম হয়। তাদের ভেতরে আনন্দময়ী দেবী একজন। তার পিতার নাম রামগতি সেন। আনন্দময়ী দেবী বিদুষী মহিলা ছিলেন এবং সমসাময়িক সময়ে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি অথর্ববেদ থেকে যজ্ঞকুণ্ডের আকৃতি এঁকে রাজা রাজবল্লভকে যজ্ঞের জন্য দিয়েছিলেন। বেদনির্দিষ্ট সেই যজ্ঞকুণ্ডের খসড়া পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। জয়নারায়ণ সেন ছিলেন আনন্দময়ী দেবীর খুল্লতাত। আনন্দময়ী রচিত উমার বিবাহ গান তৎসময়ে বেশ লোকপ্রিয়তা পেয়েছিল। পূর্ব মাদারীপুরের যপসা গ্রামের আরেক কীর্তিমানের নাম আনন্দ নাথ রায়। তার রচিত ‘ফরিদপুরের ইতিহাস’ এবং ‘বারভূঁইয়া বা ষোড়শ শতাব্দীর বাঙ্গলার ইতিহাস’ গ্রন্থ দুটি বেশ সমাদৃত। এ ছাড়া ‘প্রদীপ’ ও ‘সংগ্রাম শাহ্’ নামে তার দুটি গ্রন্থ রয়েছে। যতীন্দ্রমোহন রায় (১৮৭৮-১৯৪৫) পূর্ব মাদারীপুরের যপসা গ্রামের আরেকজন প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ। তার রচিত গ্রন্থের নাম ‘ঢাকার ইতিহাস’ (তিন খণ্ড); ‘মহারাজ প্রতাপাদিত্য’। বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় পূর্ব মাদারীপুরের ছয়গাঁও গ্রামে জন্ম নেওয়া ইতিহাসবিদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসসহ মোট ৭টি গ্রন্থের প্রণেতা তিনি।

পূর্ব মাদারীপুরের শিরঙ্গল গ্রামে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন বাঙলা সাহিত্যের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার আবু ইসহাক। তিনি সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ এবং ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’। সূর্য দীঘল বাড়ির কাহিনি অবলম্বনে সূর্য দীঘল বাড়ি নামে একটি অসামান্য চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে ১৯৭৯ সালে। পদ্মার পলিদ্বীপ উপন্যাসটির বিন্যাস এবং আখ্যান আরও চমকপ্রদ।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় জন্ম নিয়েছেন এমন কয়েকজন কীর্তিমান সন্তান যাদের অবদান ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর হয়ে থাকবে। তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজনের কীর্তি তুলে ধরা হলো : বিশিষ্ট কবি ও লেখক মৌলবী আব্দুল জব্বার ফরিদপুরীর (১৮০১-১৮৭৬) জন্ম রাজৈর উপজেলার পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামে। রাজৈরের সেনদিয়ায় জন্ম নেওয়া প্রথিতযশা কৃতী সন্তান অম্বিকাচরণ মজুমদার (১৮৫১-১৯২২)। তিনি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সমাজ সেবক; ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। তার রচিত গ্রন্থ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইভোলেশন। ইয়াহিয়া মুহম্মদ নুরুদ্দিনের (১৮৫৫-১৯০৯) জন্ম রাজৈরের পূর্বস্বরমঙ্গল। তার রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে ‘যারদেগম’; ‘তোহফেল আখইয়ার’; ‘কলকল বারহিন’; ‘তালিমুদ্দিন বা ধর্মশিক্ষা’। কিরণ চাঁদ দরবেশ (১৮৭৬-১৯৪৬) রাজৈর উপজেলার খালিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ বিশটি। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘মন্দির’; ‘রেবা’; ‘গানের খাতা’; ‘সঙ্গীত সুধা’; ‘কুলসঙ্গীত’; ‘জপসী’। এ উপজেলার আমগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদ মোহন চক্রবর্তী। ‘মায়ের ডাক’ (গল্প সংগ্রহ ১৯৪৫); ‘রামনাথ’ (উপন্যাস ১৯৫০); ‘মিলনের পথে’ (গল্প সংকলন ১৯৫৫) তার রচিত গ্রন্থ। কবি আবুল হোসেন মিয়ার (১৯২০-২০০০) জন্ম রাজৈরের কুঠিবাড়িতে। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ছড়াকার এবং শিশু সাহিত্যক। ১৯৭৮ সালে সাহিত্য কর্মে অবদানের জন্য তিনি ‘কবি শেখর’ উপাধিতে ভূষিত হন। স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ে কবি আবুল হোসেনের বেশ কয়েকটি লেখা তালিকাভুক্ত ছিল। ‘একটু খানি’; ‘তাল বেতালের ছড়া’; ‘অনেক কিছুর আগে’; ‘সবুজ গাঁয়ের সবুজ’ ইত্যাদি তার রচিত গ্রন্থ।

ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে মাদারীপুরের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল উপাখ্যান। মাদারীপুর ছিল বিপ্লবীদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এ কারণে মাদারীপুরকে চিতোর অব বেঙ্গল নামে অভিহিত করা হতো। এসব বিপ্লবীদের অনেকেই পরবর্তী জীবনে বিপ্লবী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। কেউ কেউ সাহিত্য কর্মেও নিয়োজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে খৈয়ার ভাঙ্গা গ্রামের অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯০৩-১৯৫৫) অন্যতম। তিনি ফজলুল হকের ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এখানে তার সহযোগী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৪৬ সাল থেকে আমৃত্যু ‘আনন্দ বাজার’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি ‘বক্সা ক্যাম্প’; ‘ডেটিনিউ’; ও ‘বন্দীর বন্দনা’ গ্রন্থ রচনা করেন। খৈয়র ভাঙ্গা গ্রামের আরেক বিপ্লবী কালি প্রসাদ রায় চৌধুরী লিখেছেন ‘মাদারীপুরের স্বাধীনতা যুদ্ধ’। পূর্ব মাদারীপুরের লোনসিংহ গ্রামের পুলিন বিহারি দাস (১৮৭৭-১৯৪৯) বিখ্যাত বিপ্লবী; ছিলেন ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা। লিখেছেন ‘আমার জীবন কাহিনি’; ‘লাঠি খেলা ও অসি শিক্ষা’। বিপ্লবী ‘যুগান্তর দলে’র সদস্য ছিলেন কলিপদ গুহ রায় (১৯০২-১৯৬৬)। তার জন্ম মাদারীপুরের কেন্দুয়ায়। তিনি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের বন্ধু। ছিলেন ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর প্রধান। বাংলা ও ইংরেজি দুভাষাতেই কবিতা লিখতেন।

বাংলা সাহিত্যচর্চার ইতিহাসে বিখ্যাত ‘কল্লোল’ পত্রিকার সম্পাদক দিনেশ রঞ্জন দাশ; তার আদি নিবাস ছিল পূর্ব-মাদারীপুরের কোয়ারপুর গ্রামে। অর্থাৎ সাহিত্যপত্র সম্পাদনায় বৃহত্তর মাদারীপুরের এক গৌরবময় অতীত ছিল। সে অতীতের উত্তরাধিকারের গৌরব-ভাগ বর্তমান জেলা মাদারীপুরেরও প্রাপ্য।

এ ছাড়া এ কালপর্বের মাদারীপুরের লেখক-সাহিত্যিকদের ভেতরে সাবিত্রী রায়, ব্রজেন্দ্র দে, গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য, যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, আবদুল হালিম বয়াতি, আবদুল করিম মুন্সী, রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী, অখিল বন্ধু সাহা, শেখ শামসুল হক, রাজিয়া মাহবুব প্রমুখ অন্যতম।

বাসুদেব দাশগুপ্ত (১৯৩৮-২০০৫) বাংলা সাহিত্যে হাংরি আন্দোলন-এর একজন বিশিষ্ট গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তার জন্মস্থান মাদারীপুর শহরে। দেশভাগের কারণে ১৯৪৭ সালে উদ্বাস্তু পরিবাররূপে তারা পশ্চিমবাংলার অশোকনগরে আশ্রয় নেন। সবসুদ্ধ ১৩টি ছোটগল্প এবং ‘উৎপাত’ ‘খেলাধুলা’ ও ‘মৃত্যুগুহা থেকে প্রথম কিস্তি’ নামে তিনটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি ।

উভয় বাংলায় সমান জনপ্রিয় প্রখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামে। দেশ বিভাগকালে তিনি মাত্র এগারো বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান এবং পরবর্তীকালে সেখানেই সাহিত্যচর্চা করে বিখ্যাত হন। সুনীলের বিভিন্ন লেখায় ঘুরে ফিরে মাদারীপুর প্রসঙ্গ এসেছে প্রবলভাবে। সুনীল মাটি ও মানুষের টানে ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে মাদারীপুরে আসেন। সে সময়ের অনুভব নিয়ে দেশ পত্রিকায় ধারাহিকভাবে ‘মাটি নয়, মানুষের টানে’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকে বর্তমান সময়ে মাদারীপুরের লেখকদের মধ্যে অন্যতম হলেন-ফজলুল হক, আমির হোসেন, মু. মতিয়ার রহমান, অধ্যাপক মোহম্মদ আনিসুজ্জামান, আমির হোসেন, আবি আব্দুল্লাহ্, এম. আজিজুর রহমান, ফকির গোলাম মোহাম্মদ, কবি অসীম সাহা, আব্দুল জব্বার, আনিসুর রহমান, আবদুল আজিজ মিয়া, জ্ঞানেশ মণ্ডল, ডা. আব্দুল বারী, সিকদার আব্দুস সামাদ, দুলাল সরকার, মঞ্জুরুল হক, বাশার মাহমুদ, ফারুক ইরাদ, প্রফেসর এইচএম জহিরুল হক, ড. দুলাল কান্তি, ড. কল্পনা ভৌমিক, রবি ভৌমিক, শিপ্রা গোস্বামী, আহসান হামিদ, আজিজুর রহমান আজিজ, কেয়া বালা, হুমায়ন হাসান, মোহাম্মদ আবদুল মতিন খান, আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার, অ্যাডভোকেট আহসানউল হক টুকু, আকন মোশাররফ হোসেন, মোঃ আব্দুল হালিম, আনোয়ারা রাজ্জাক, দুলাল মণ্ডল, সুবল বিশ্বাস, মহিউদ্দিন ফারুকী, শেখ সিরাজুল হক ফারাজী, ইয়াকুব খান শিশির, শাহানা শৈলী, ডব্লিউ আলী বাদশা, শরীফ মহিউদ্দিন, রাজ্জাক হাওলাদার, বজলুর রহমান খান রুমি, বেনজীর আহম্মদ টিপু, খালেদ খান বেলাল, আহসান হামিদ, কুমকুম রহমান, ফাতেমা বেগম, ড. সন্তোষ ঢালী, জ্যোর্তিময় সেন, মো. এনামুল হক, সবুজ রায়, নকুল কুমার বিশ্বাস, নিত্যানন্দ হালদার, জয় মির্জা, ড. তপন বাগচী, শরীফ সান্টু, আবু সাঈদ লিপু, ডা. রেহানা পারভীন, শওকত হোসেন, মাহমুদ টোকন, রাফিজা ইমরোজ, ইসমাইল খান, মিলন সব্যসাচী, ড. সাখাওয়াৎ নয়ন, তাছলিমা ইয়াসমিন তমা, পরিতোষ বাড়ৈ, জাকির হুসাইন মুন্না, নাছিমা আক্তার, আশিকুর রহমান মনির, মাহবুব হাসান, কাজী সাইফুল ইসলাম, রাসেল য়ারেফীন, মাসুদ সুমন, রিয়াজুল ইসলাম কাওছার, স্বপ্ন সোহাগ, জহিরুল ইসলাম খান, জুন্নুন বাদেশি, রাকিবুল হক ইবন, রুদ্র সাইফুল, জাহিদ সোহাগ, আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, ওয়ালিউর রহমান, আশরাফুল আলম মুকুল, জাহাঙ্গীর আলম শাফরিন মুন্না, মলি, সৌম্য সরকার, সাদাত হোসাইন, রিপনচন্দ্র মল্লিক, বেলাল রিজভী, সালাহ্ উদ্দিন মাহমুদ, ইমতিয়াজ আহমেদ, শানজিদ অর্ণব, প্রিতম আদনান, লিখন মাহমুদ, জাহিদুল ইসলাম, সুলেখা আক্তার শান্তা, সোমা মণ্ডল, মেহেদী শামীম, অঞ্জন হাসান পবন, মো. সোহাগ হোসেন, আফরোজা শায়ান, বিএম আবুবকর সিদ্দিক, তামিম ইসমাইল, আইরিন আক্তার, ইকবাল হোসেন, হামীম আল জাবের, মো. আবু জাফর রাজীব, আবিদ আজম, মুজিব, জিয়া হক, গোলাম রাব্বী, মামুন ফরাজী, সাইফুর রহমান সোহাগ, মেহেদী হাসান, কাজী মারুফ, জামান হোসাইন প্রমুখ।

স্থানীয় সাহিত্য সংগঠনগুলো সাহিত্যচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মাদারীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন। তন্মধ্যে অংকুর সাহিত্য সংসদ, সন্দিপন সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ, মাদারীপুর লেখক গোষ্ঠী, মাদারীপুর সাহিত্য পরিষদ, জয় বাংলা সাহিত্য পরিষদ, নজরুল পরিষদ, কচুপাতা লেখক গোষ্ঠী, শতদল লেখক গোষ্ঠী, গাংচিল সাহিত্য পরিষদ, মাদারীপুর শাখা, বিশ্ব বাংলা সাহিত্য পরিষদ, মাদারীপুর শাখা, উন্মেষ, রাজৈর উপজেলা সাহিত্য পরিষদ উল্লেখযোগ্য। এসব সংগঠন বিভিন্ন সময়ে আয়োজন করেছে সাহিত্য আড্ডার। বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে এবং কোন কোন সংগঠন নিয়মিতভাবেও প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশনা।

এ ছাড়া প্রথম আলো বন্ধু সভা, মাদারীপুর শাখা, উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ, উত্তরণ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ামূলক সংগঠনের ব্যানারে বেশ কয়েকটি সাহিত্যপত্র ও সাহিত্য আড্ডা আয়োজিত হয়েছে।

মাদারীপুর থেকে অনেকগুলো সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এদের বেশিরভাগেরই কলেবর রুগ্ণ; তথাপি এসব সাহিত্যপত্রকে কেন্দ্র করেই মূলত স্থানীয় সাহিত্যিকদের সাহিত্য চর্চিত হয়েছে। পরিসর স্বল্পতার কারণে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকাগুলোর বিশদ বিবরণ না দিয়ে শুধু নামোল্লেখ করছি : সাপ্তাহিক আলোড়ন, বর্ণমালা, লেখক, বন্ধুসভা (কবিতা সংকলন), দ্যুতি, মুক্তি, বাঁশপাতা, আলো, বন্ধুতা, রটনা, অংশু, আকাল, কচুপাতা, বৈশাখ, উচ্ছ্বাস, উৎসব, ঊষা সেই ফাগুন, সংশয়, বুনন, আয়না, নবপ্রতিভা, শীলন, ক্যানভাস, বোধিবৃক্ষ, কথন, দেশের মাটি, গপ্পো, নতুন লেখা, অঁহক, প্রভাতফেরি, আবাদ, আলোকিত বৈশাখ, ঐশী, ঘূর্ণিবাও, স্বীকারোক্তি, সুচেতনা, পূষণ, অনুভূতি, সন্দিপন সংকলন, বিশাখা, অর্জন, রক্তে ফোটা বিজয়, অহংকার, রক্তস্নাত বিজয়, চেতনায় একুশ, সাহিত্য শৈলী, সাহিত্য প্রকাশ, সাহিত্যবরণ, সাহিত্য সংলাপ, নববর্ষ, প্রতিভা ইত্যাদি।

স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোও মাদারীপুরে সাহিত্যচর্চাকে চলমান রেখেছে এবং বেগবান করেছে। এদের মধ্যে আড়িয়াল খাঁ, সুবর্ণগ্রাম, মাদারীপুর বাণী, সাপ্তাহিক আনন্দ বাংলা, শরীয়তউল্লাহ্, দৈনিক বিশ্লেষণ, দৈনিক মাদারীপুর সংবাদ, বর্তমান ইশারা অন্যতম।

২০০৩ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মাদারীপুরে আসেন। পরের বছর ‘সুনীল সাহিত্য ট্রাস্ট’ গঠিত হয়। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হন এটিএম কামালুজ্জামান। ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর সৃজনশীল গল্পের ওপর স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ নামে তিনটি ও কয়েকটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত এটিএম কামালুজ্জামান জীবীত থাকা অবধি এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

দৈনিক বিশ্লেষণ পত্রিকা কর্তৃক ‘বিশ্লেষণ সাহিত্য পুরস্কার’ নামে একটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিশ্লেষণের সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খান। এ পর্যন্ত ৫ জনকে প্রদান করা হয়েছে এ পুরস্কার।

২০১৮ সাল থেকে ‘মাদারীপুর বইমেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে মাদারীপুরে ‘বইমেলা ও সাহিত্য উৎসব’ আয়োজিত হয়ে আসছে। আয়োজক কমিটি সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর একজনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে থাকেন। এ কমিটির সভাপতি খান মো. শহীদ।

এ নিবন্ধের বেশিরভাগ তথ্যই নেওয়া হয়েছে দেশের মাটি ২য় সংখ্যায় প্রকাশিত বেনজীর আহম্মদ টিপুর ‘মাদারীপুরের সাহিত্যচর্চা : অতীত ও বর্তমান’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments