Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মপ্রচারবিমুখ মানুষ আল্লাহর প্রিয়

প্রচারবিমুখ মানুষ আল্লাহর প্রিয়

এখন সর্বত্র চলছে আত্মপ্রচারের হিড়িক। সবাই নিজেকে প্রচারের নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন নিয়ে ব্যস্ত। এমনকি দ্বীন ও ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকরাও বর্তমানে এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে, যেন সবাই ‘প্রচারেই প্রসার’এই নীতিমালার পরীক্ষা করছে। অথচ আমাদের পূর্বসূরিদের রীতিনীতি ছিল এর বিপরীত। তারা নিজেকে প্রচার ও প্রসিদ্ধি থেকে লুকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। জনপ্রসিদ্ধি ও আলোচনা কারও সফলতা ও পূর্ণাঙ্গতার মানদণ্ড নয়।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসন্তানরা তথা লক্ষাধিক নবী-রাসুলের মধ্য থেকে আমরা মাত্র ২৬-২৭ জন নবীর নাম জানি, যাদের কথা কোরআনে কারিমে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু যাদের আমরা চিনি না, তারা কি ছোট হয়ে গেছেন? কারও আলোচনা না থাকা তার ছোট হওয়ার প্রমাণ নয় এবং কারও আলোচনা থাকা তার বড় হওয়ার দলিল নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি তোমার আগে অনেক রাসুল পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে কারও কারও কাহিনী আমি তোমাকে বর্ণনা করেছি আর অনেকের কাহিনী বর্ণনা করিনি।’ সুরা গাফির : ৭৮

প্রচারবিমুখ ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় : হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, অনেক এলোকেশ, ছিন্নবস্ত্র ও উপেক্ষিত ব্যক্তি সে যদি আল্লাহর ওপর কোনো কসম করে বসে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তা পূরণ করেন।’-মুসলিম : ২৬২২

হজরত মুআজ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সামান্যতম লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে কৃতকাজও শিরিকের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন ওইসব নেককার প্রচারবিমুখ লোককে, যারা কোথাও অনুপস্থিত থাকলে কেউ তাদের স্মরণ করে না এবং কোথাও উপস্থিত হলেও কেউ তাদের চেনে না। তারা ঝামেলা ও ফিতনা থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলে।’ ইবনে মাজাহ : ৩৯৮৯

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের বাদশাহদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন, দুনিয়াতে যাদের প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না, যখন তারা প্রভাবশালীদের কাছে যাওয়ার অনুমতি চায়, তখন অনুমতি হয় না, তারা কোনো মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণীয় হয় না, তারা কথা বললে কেউ শোনে না, অথচ কিয়ামতের দিন যদি তাদের নুর ভাগ করে দেওয়া হয়, সব মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। আত্তাওয়াজু, ইবনে

আবিদ দুনইয়া : ১৯

জনপ্রসিদ্ধি অর্জন বিপজ্জনক : হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির অকল্যাণের জন্য এটুকু যথেষ্ট যে তার দ্বীন-দুনিয়ার উন্নতির প্রতি মানুষ আঙুল উঠিয়ে দেখায়। তবে আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন (তার কথা ভিন্ন)। শোয়াবুল ইমান : ৬৫৭৯

হজরত সুলাইম (রহ.) বলেন, একদা আমরা উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর পেছনে পেছনে হাঁটছিলাম, তা দেখে হজরত ওমর (রা.) বেত উঁচিয়ে বলেন, এভাবে চলবে না। কেননা এটি (কারও পেছনে পেছনে চলা) অনুসরণকারীর জন্য লাঞ্ছনা আর অনুসরণীয়ের জন্য ফিতনার কারণ। আত্তাওয়াজু : ৫১

হজরত আবান ইবনে উসমান (রহ.) বলেন, যদি তুমি চাও তোমার দ্বীন নিরাপদে থাকুক, তাহলে তুমি তোমার পরিচিতিকে সীমিত করো। তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৪২

পূর্বসূরিদের দৃষ্টিতে আত্মপ্রচার : হজরত ইবরাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) বলতেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি চায়, সে আল্লাহর সঙ্গে সততা রক্ষা করেনি। তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৩৪২

হজরত ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.) বলেন, যদি তুমি এতে সক্ষম হও যে তোমাকে কেউ না চিনুক, তাহলে তা-ই করো। তোমার প্রশংসা না করা হলে তোমার কোনো ক্ষতি নেই আর এতেও তোমার কোনো ক্ষতি নেই যে তুমি মানুষের কাছে নিন্দনীয় হলেও আল্লাহর কাছে প্রশংসনীয় হবে। বায়হাকি : ১৪৮

বিশর ইবনে হারেস (রহ.) এই দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! যদি তুমি আখেরাতে আমাকে লাঞ্ছিত করার জন্য দুনিয়ায় প্রসিদ্ধি দিয়ে থাকো, তাহলে তুমি আমার থেকে তা ছিনিয়ে নাও। আজজুহদুল কাবির : ১৪৭

হজরত খলিল ইবনে আহমাদ (রহ.) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান বানান, আমার নিজের কাছে সর্বনিম্ন বানান আর মানুষদের কাছে মধ্যবর্তী অবস্থানে রাখুন। ইবনে কাসির : ৬/৩৪২

অনিচ্ছায় জনপ্রিয়তা অর্জন অপছন্দনীয় নয় : উপরোক্ত আলোচনার উদ্দেশ্য হলো, নিজেকে নিজে প্রচার করা এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য মেহনত করা অপছন্দনীয়। তবে যদি কোনো ব্যক্তি স্বীয় কৃতকর্মের কারণে তার অনিচ্ছায় জনপ্রিয়তা ও সুখ্যাতি অর্জন করে, তাহলে তা অপছন্দনীয় নয়, বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অপ্রত্যাশিত নিয়ামত হিসেবে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন কোনো বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তখন হজরত জিবরাইল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ভালোবাসি, অতএব তুমিও তাকে ভালোবাসো। হজরত জিবরাইল (আ.) আসমানবাসীর মধ্যে তা ঘোষণা করেন। অতঃপর জমিনবাসীর অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসা অবতীর্ণ হয়। এটাই আল্লাহর বাণীতে ফুটে উঠেছে, ‘যারা ইমান আনয়ন করেছে এবং উত্তম কার্য সম্পাদন করেছে, শিগগিরই দয়াময় আল্লাহ (লোকদের অন্তরে তাদের প্রতি) ভালোবাসার উদ্রেক করবেন (সুরা মারইয়াম : ৯৬)। সহিহ মুসলিম : ২৬৩৭

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments