Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeলাইফস্টাইলপ্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার যখন জন্ডিসের কারণ

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার যখন জন্ডিসের কারণ

পরিপাকতন্ত্রের যেসব ক্যান্সার হয় তার অন্যতম প্যানক্রিয়াটিক বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার। অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় একটু বেশি প্রাণঘাতী এই রোগ।

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার কী?

পেটের ভেতর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়। এটি ইনসুলিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরির পাশাপাশি প্যানক্রিয়াটিক জুস তৈরি করে থাকে, যা আমাদের খাবারকে হজম করে। প্যানক্রিয়াসে অনেক ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকলেও প্যানক্রিয়াটিক জুস নিঃসরণ হয় যে নালি দিয়ে, সেই নালির কোষ থেকেই মূলত বেশির ভাগ ‘প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার’ হয়ে থাকে। আর এটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘প্যানক্রিয়াটিক ডাক্টাল এডিনোকার্সিনোমা’ বলে।

কাদের এই রোগ বেশি হয়?

প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার সাধারণত বেশি বয়স্ক মানুষের হয়ে থাকে। পুরুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। পরিবারে কারো এই ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, স্থূলতা এবং ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

লক্ষণ

প্যানক্রিয়াসের ঠিক পাশেই থাকে পিত্তনালি। প্যানক্রিয়াসে টিউমার হলে পিত্তনালি থেকে পিত্তরস প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসব রোগীর সাধারণত চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ তথা জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিসের পাশাপাশি সারা শরীরে চুলকানি হতে পারে। পেটে চাকা এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া অল্প সময়ে ওজন কমে শরীর শুকিয়ে যেতে পারে, বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। মনে রাখা ভালো, সব জন্ডিস কিন্তু লিভারের অসুখের কারণে হয় না। প্যানক্রিয়াস এবং পিত্তনালির ক্যান্সার থেকেও জন্ডিস হতে পারে।

লক্ষণ দেখা দিলে কোথায় যাবেন?

যেহেতু জন্ডিস এই রোগের প্রধান লক্ষণ, তাই উল্লেখিত উপসর্গের সঙ্গে মিলে গেলে নিকটস্থ কোনো গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, মেডিসিন অথবা সার্জারি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত হওয়ার পর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে প্রথম চিকিৎসকই রেফার করে দেবেন।

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রক্ত বা অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি এই রোগের মূল পরীক্ষা সাধারণত ইমেজিং বা রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পেটের আলট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এমআরসিপি—এসব পরীক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে প্যানক্রিয়াসের টিউমার এবং ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়েছে কি না, তা সহজেই নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। ক্যান্সারটি যখন প্যানক্রিয়াস থেকে শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই সাধারণত লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে যদি ক্যান্সারটি অন্য কোথাও না ছড়িয়ে শুধু প্যানক্রিয়াসেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সার্জারি করে রোগটির সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। সার্জারি-পরবর্তী কেমোথেরাপিও লাগতে পারে। আর ক্যান্সারটি যদি প্যানক্রিয়াস ছাড়িয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে প্যালিয়েটিভ কেমোথেরাপি বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।

কোথায় যাবেন?

প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার সাধারণত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, সার্জন বা অন্যান্য চিকিৎসকের চেম্বারে ধরা পড়লেও শেষ চিকিৎসা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে নিতে হয়। ‘জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ ছাড়াও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল এবং বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এই রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকে।

যেহেতু ‘প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার’ রোগীদের একটি বড় অংশকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব হয় না। তাই তাদের প্রয়োজন প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা। এই চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ইআরসিপি’। এটি দেশের সবচেয়ে স্বল্প মূল্যে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করা হয়ে থাকে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক

গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments