Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeধর্মপরিবেশ সুরক্ষায় ইসলামের কর্মপন্থা

পরিবেশ সুরক্ষায় ইসলামের কর্মপন্থা

সুস্থ জীবনের জন্য সুস্থ পরিবেশ অপরিহার্য। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা মানুষের অধিকার। তাই পরিবেশ ব্যবস্থার সুরক্ষা আবশ্যক। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, পরিবেশের ক্রমবর্ধন দূষণ মানবজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। প্রায়ই এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোরে ঢাকা দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে থাকছে। দূষণের ফলে বছরে বাংলাদেশেই দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট। তাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সুরক্ষা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য তা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে। নতুবা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে এই মহাবিশ্ব।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ধারণা : সুস্থ জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় উপাদানের সরবরাহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করে। তাই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে বিশুদ্ধ বায়ু, স্থিতিশীল জলবায়ু, পর্যাপ্ত পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি, রাসায়নিক দ্রব্যের নিরাপদ ব্যবহার, বিকিরণ থেকে সুরক্ষা, স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, সঠিক কৃষি অনুশীলন, স্বাস্থ্য-সহায়ক শহর, সুস্থ পরিবেশের পূর্বশর্ত।

পরিবেশ ভারসাম্যের মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদের সুরক্ষা। পবিত্র কোরআনে প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা মাপ ও ওজন ঠিকভাবে দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দেবে না এবং দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় ঘটাবে না, তোমরা মুমিন হলে তোমাদের জন্য তাই কল্যাণকর।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮৫)

পৃথিবী মানুষের আশ্রয়স্থল : মহান আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বিস্তৃত করে সৃষ্টি করেছেন। যেন মানুষ তাতে সহজে বিচরণ করতে পারে এবং কাজকর্মের মাধ্যমে তা আবাদ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে সব বস্তু উদগত করেছি সুপরিমিতভাবে। তোমাদের জন্য সেখানে জীবন উপকরণের ব্যবস্থা করেছি, তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নয় তাদের জন্যও।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ১৯-২০)

প্রাকৃতিক উপাদান সীমিত : উল্লিখিত আয়াতে মানুষের জীবনোপকরণের কথা বলা হয়েছে। যেমন পাহাড়-পর্বত, সোনা-রুপা, লোহাজাত খনিজসম্পদ ইত্যাদি। আয়াতে এসব উপকরণের সীমিত পরিমাণে থাকার দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে। সম্পদ ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি।

কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা :  পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আয়াতে মানুষের জন্য ক্ষতিকর এমন কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে জরুরি নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কোরো এবং নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংস কোরো না, তোমরা ভালো কাজ কোরো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিজের ও অন্যের ক্ষতি নয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯০৯)

বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসের আলোকে ফকিহরা কিছু মূলনীতি তৈরি করেছেন। যেমন—

ক্ষতি দূর করা হবে : সব ধরনের ক্ষতি দূর করা হবে। তাই অন্যের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষয়ে দায়িত্বশীলরা হস্তক্ষেপের অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া যেকোনো ধরনের ক্ষতি যতটুকু সম্ভব দূর করাও কর্তব্য।

ক্ষতি দূর করা অগ্রাধিকার পাবে : অনেক সময় প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে নানা ধরনের উপকার ভোগ করা হয়। তবে তা পরবর্তী সময়ে ক্ষতির কারণ হয়ে পড়ে। তাই এসব ক্ষেত্রে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।

সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার

সৃষ্টিজীবের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় প্রধান ভূমিকা মানুষের। কারণ এর ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রভাব রয়েছে। তাই পরিবেশ থেকে মানুষ যেভাবে উপকৃত হয় তেমনি এর সুফল ধরে রাখতে মানুষের কিছু কর্তব্য রয়েছে।

পৃথিবীতে মানুষের তিন দায়িত্ব : মূলত তিনটি উদ্দেশ্য পালনের মাধ্যমে এই ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে পালিত হবে। আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বান্দাদের কাছ থেকে আল্লাহর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তা হলো : 

এক. জীবনে সব ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনা পালন করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

দুই. পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি করতে যাচ্ছি…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩০)

তিন. পৃথিবী আবাদ করা মানুষের দায়িত্ব। তাই পবিত্র কোরআনে মানুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এর উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাতেই তিনি তোমাদের বসবাসের উপযোগী করেছেন। সুতরাং তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো…।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬১)

এখানে বসবাসের উপযোগী করেছেন বলতে মানুষ যেন চাষাবাদ, বৃক্ষরোপণ, বনায়ন কর্মসূচিসহ ভূপৃষ্ঠের কল্যাণে কাজ করে এবং ক্ষতিকর কাজকর্ম থেকে বিরত থাকে।

সুখী জীবনের নিশ্চয়তা : উল্লিখিত তিনটি দায়িত্ব একটি অপরটির পরিপূরক। একটি পালন করলে অন্যটি পালন করতে হয়। কারণ আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা, তাঁর বিধি-নিষেধ প্রতিষ্ঠা ও পৃথিবীকে আবাদ করে বসবাসের উপযুক্ত করা সবই অন্তর্ভুক্ত। আর এসব দায়িত্ব পালনের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চিয়তা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম…।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৯৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ বা নারীর মধ্যে কেউ মুমিন হয়ে ভালো কাজ করলে আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)

আল্লাহ সবাইকে পরিবেশবিরোধী কাজ থেকে বিরত রাখুন। আমিন

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments