Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মপরম সৌভাগ্যের অধিকারী যারা

পরম সৌভাগ্যের অধিকারী যারা

আল্লাহর অপার অনুগ্রহে যারা হেদায়েত লাভ করেছেন তারা সৌভাগ্যবান। সৌভাগ্যবানকে আরবিতে ‘সাঈদ’ বলে। তারা দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত বরকত লাভে ধন্য।

পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ গ্রন্থে অসংখ্য স্থানে আল্লাহ ও তার প্রিয়তম রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) সৌভাগ্যবানদের সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। পরম সৌভাগ্যের অধিকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিতে তুলে ধরা হলো।

মুক্বিনীন তথা নিশ্চিত বিশ্বাসী

যারা মহান আল্লাহর প্রতি দৃঢ়ভাবে ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে তারা সৌভাগ্যবান। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অদৃশ্যে ইমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং তোমার প্রতি যা নাজিল হয়েছে ও তোমার আগে যা নাজিল হয়েছে তাতে যারা ইমান আনে ও আখিরাতে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী, তারাই তাদের প্রতিপালক নির্দেশিত (হেদায়েতের) পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সূরা বাকারা : আয়াত : ৩-৫)।

ইবাদতকারী পরহেজগার অবলম্বনকারী

আল্লাহপাক মানুষকে কেবল তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যারা তার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক না করে কেবল তার জন্য ইবাদত করে, তাকে সর্বান্তকরণে একমাত্র ইলাহ হিসাবে মান্য করে তারাই সফলকাম ও সৌভাগ্যবান। আল্লাহপাক বলেন, ‘পরহেজগারদের বলা হয়-তোমাদের পালনকর্তা কী নাজিল করেছেন? তারা বলে, মহাকল্যাণ। যারা এ জগতে সৎকাজ করে, তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। পরহেজগারদের গৃহ কী চমৎকার? (সূরা আন নাহল : আয়াত : ৩০)।

আমলে সালেহ বা সৎকর্ম সম্পাদনকারী

মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ইমান আনয়নের পর যারা কেবল তারই সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করে তারা সত্যিকার অর্থে পরম সৌভাগ্যবান। তাদের প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ইমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেব যা তারা করত।’ (সূরা আন নাহল : আয়াত : ৯৭)।

আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) কে যে ভালোবাসে

যারা মহান আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)কে একনিষ্ঠভাবে ভালোবাসে এবং কুফুরিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে, তাকওয়া অবলম্বন করে তারাই সৌভাগ্যবান। এ প্রসঙ্গে আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে সে ইমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে-১।

আল্লাহ ও তার রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া; ২। কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা; ৩। কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ১৬)।

শুকরিয়া আদায়কারী

আল্লাহ প্রদত্ত যে কোনো নেয়ামত চাই সেটি ভোগ্য কিংবা অভোগ্য হোক সব ক্ষেত্রেই যারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তারা পরম সৌভাগ্যের অধিকারী। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীদের অচিরেই প্রতিদান দেবেন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত : ১৪৪)।

আবু বাকরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবি (সা.)-এর কাছে কোনো খুশির খবর এলে অথবা তিনি কোনো সুসংবাদ পেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া স্বরূপ সিজদায় পড়ে যেতেন। (সুনানে আবু দাউদ : হাদিস : ২৭৭৪)।

ইস্তেগফার তথা অত্যধিক ক্ষমা প্রার্থনাকারী

যারা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কৃত অপরাধ ও পাপ মার্জনার জন্য মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করে তারা পরম সৌভাগ্যবান। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি (সা.) বলেছেন-যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দ অর্থাৎ সে পরম সৌভাগ্য। (সুনানে ইবনে মাজাহ : হাদিস: ৩৮১৮)।

অসুস্থ ব্যক্তির সেবাকারী

মানবসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি বিশেষ করে যারা বিকলাঙ্গ, জখমপ্রাপ্ত মুমূর্ষু ব্যক্তি, যে কোনো ধরনের রোগীর খেদমতে নিয়োজিত তারা সৌভাগ্যবান।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে লোক আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় কোনো অসুস্থ লোককে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফিরিশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকেন-কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময়, তোমার এ পথচলাও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে। (জা’মে তিরমিযি : হাদিস : ২০০৮)।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী

যারা যে কোনো মূল্যে সদাচরণের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে তারা সৌভাগ্যবান। আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পর সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ২০৬৭)।

সংকটকালীন আল্লাহর কাছে প্রার্থনাকারী

যারা বিপদ আপদে ধৈর্যহারা না হয়ে আল্লাহর কাছে পরিত্রাণের আশায় প্রার্থনা করে তারা পরম সৌভাগ্যবান। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন-যে লোক বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ লাভ করতে চায় সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময় বেশি পরিমাণে দোয়া করে। (জামে তিরমিযি : হাদিস : ৩৩৮২)।

চারটি জিনিস আছে যার

আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে যে ব্যক্তি চারটি জিনিসের মালিক সে পরম সৌভাগ্যবান। হজরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, চারটি জিনিসে সৌভাগ্য বিদ্যমান-নেককার স্ত্রী, প্রশস্ত সুরম্য গৃহ, উত্তম প্রতিবেশী, আরামদায়ক দ্রুতগামী যানবাহন। (সহিহ ইবনে হিব্বান : হাদিস : ৪০৩২, সহিহ আলবানী : হাদিস : ২৮২)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্তু। আর দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্তু) সাধ্বী নারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।

লেখক : মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments