Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeধর্মপবিত্র কোরআনে রয়েছে সবার জন্য উপদেশ

পবিত্র কোরআনে রয়েছে সবার জন্য উপদেশ

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তো তোমাদের ওপর অবতীর্ণ করেছি কিতাব, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ, তবু কি তোমরা বুঝবে না?’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০)

তাফসির : আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত উপদেশের কথা স্মরণ করিয়ে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে সব মানুষের জন্য উপদেশ রয়েছে। মানবিক গুণাবলি, সামাজিক শিষ্টাচার ও ইহকাল-পরকালের মুক্তির উপায় বর্ণিত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের আহবান জানানো হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও যে আলো (কোরআন) আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করো, তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত। ’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ৮)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। তাতে মুসলিম জাতির জন্য রয়েছে সব বিষয়ের নির্দেশনা, সুপথ প্রাপ্তি ও সুসংবাদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মুসলিমদের জন্য সব বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মহাগ্রন্থে (পবিত্র কোরআন) আমি কোনো কিছুই বাদ দিইনি, অতঃপর তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের কাছে একত্রিত করা হবে। ’

(সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)

মহান আল্লাহ পূর্বাপর সব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো কোরআনে বর্ণনা করেছেন। পথভ্রষ্টতার সময়ে আমাদের জন্য তা আলোকবর্তিকা। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, সাবধান, শিগগির ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। আমি জিজ্ঞাসা করি, তা থেকে বাঁচার উপায় কী? তিনি বলেছেন, আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থ, তাতে তোমাদের আগের ও পরের খবর রয়েছে এবং তা তোমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেবে। তা চূড়ান্ত পার্থক্যকারী। তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়। কোনো ব্যক্তি দম্ভ করে তা ছেড়ে দিলে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করবেন। তা ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছুতে হিদায়াত বা সুপথ খুঁজলে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। তা আল্লাহর সুদৃঢ় রশি, প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ, সরল-সঠিক পথ। তা অনুসরণ করলে মানুষের চিন্তাধারা বিপথগামী হয় না। জিহ্বাও আড়ষ্ট হয় না। আলেমরা তা থেকে পরিতৃপ্ত হন না। বারবার পড়লেও তা পুরনো হয় না। এর রহস্যের শেষ নেই। তা সেই গ্রন্থ, যা শোনামাত্রই জিন সম্প্রদায় বলেছিল, ‘আমরা বিস্ময়কর কোরআন শুনেছি, যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। ’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১)

যে ব্যক্তি কোরআন অনুসারে কথা বলে সে সত্য বলে এবং যে ব্যক্তি তা অনুসারে আমল করে সে প্রতিদান পায়। যে তা অনুসারে বিচার করে সে ন্যায়বিচার করে। যে এর দিকে ডাকে সে সঠিক পথ দেখায়। হে আওয়া, তুমি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৬)

মহানবী (সা.) ও আরবদের কথা মহাগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমার প্রতি পাঠানো ওহিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, নিশ্চয়ই তুমি সরল পথে রয়েছ। নিশ্চয় তা (কোরআন) তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশবাণী এবং শিগগির তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৪৩-৪৪)

যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় পবিত্র কোরআন তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আলো ও সুস্পষ্ট কিতাব তোমাদের কাছে এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়, তিনি এর (কোরআন) মাধ্যমে তাদের শান্তির পথ দেখাবেন, তিনি নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনবেন এবং তাদের সরল পথে পরিচালিত করেন। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১৬)

মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনাকারীর প্রশংসা করে বলেছেন, ‘(তারাই সফল) যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

পবিত্র কোরআনে মানুষকে সৃষ্টিজগৎ নিয়ে ভাবতে বলার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন আল্লাহ সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। তিনি বলেন, ‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরগুলো তালাবদ্ধ?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৪)। কিন্তু অনেক মানুষ ও জিন এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং তাঁর উপদেশ গ্রহণ করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবণ করে না; তারা তো পশুর মতো, বরং তার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট, তারাই উদাসীন। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)

গ্রন্থনায় মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments