Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মনিরন্ন ও অভাবীদের ভরসাস্থল মেহমানখানা

নিরন্ন ও অভাবীদের ভরসাস্থল মেহমানখানা

মেহমানখানা অর্থ অতিথিশালা। যেখানে পরিচিত-অপরিচিত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। ইতিহাসে মেহমানখানার কথা নানাভাবে ওঠে এসেছে। হাল সময়ে রাজধানীতে নিরন্ন ও অভাবীদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা মেহমানখানার কথা জানাচ্ছেন- আহমদ মানিক

প্লেটে প্লেটে ইফতারের সময় খাবার মিলছে লালমাটিয়ার ডি-ব্লকের মেহমানখানার অতিথিদের জন্য। মেহমানখানার স্বেচ্ছাসেবীরা রাস্তার ওপর কেউ থালা-প্লেট পরিষ্কার করছেন, কেউ সবজি কাটছেন, কেউ আবার খেজুর-কলা সাজাচ্ছেন। বিশাল ডেগে সবজি ও মুরগি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি, আরেক ডেগে ছোলা ও পাশে মুড়ির বস্তা। কেউবা বিশাল ড্রামে লেবু চিপে শরবত তৈরিতে ব্যস্ত।

গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার পর সরেজমিন দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে রিকশাচালকরা রিকশা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আসছেন ফুটপাতের আশ্রয় নেওয়া অসহায় ভাসমান ছিন্নমূল মানুষ ও বাসাবাড়ির সিকিউরিটি গার্ডরাও। তারা জানেন লালমাটিয়ার ডি-ব্লকের মেহমানখানায় গেলেই মিলবে খাবার। তাই তারা মেহমানখানার মেহমান হয়েছেন, এসেছেন ইফতার করতে।

আগতদের জন্য ইফতার ভ্যানগাড়িতে সাজিয়ে বিতরণ করা হয় সুশৃঙ্খলভাবে। প্রতিদিন প্রায় ২-৩ হাজার মানুষ মেহমানখানার ইফতারে অংশগ্রহণ করেন। মাগরিবের আজানের পরও প্রায় আধা ঘণ্টা ইফতার বিতরণ করা হয়।

মেহমানখানার অতিথি রিকশাচালক রফিক মিয়া বলেন, ‘মুই এ্যাটি (এখানে) তিন বছর হলো ইফতার করি। কিনে খাইতে ৫০-৬০ টাকা লাগে, এখানে বিনামূল্যে ইফতার ও খিচুড়ি পাওয়া যায়।’

সুফিয়া খাতুন অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘রোজার প্রতিদিন তারা মানুষদের কাছ থেইকা সহযোগিতা নিয়ে আমাদের মতো গরিবদের খাওয়ায়। রোজা ছাড়া সপ্তাহে দুদিন খাওয়ায় গরু বা খাসির মাংস।’

বিধবা আকলিমা বলেন, ‘ওগোর জন্য সব সময় আল্লাহ কাছে দোয়া করি। ওরা যেন আরও মানুষকে খাওয়াতে পারে।’

সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের খাবার জোগাড় করে এবং মেহমানদারি করে ভরসাস্থল হয়ে উঠছে মেহমানখানা। রমজানে প্রতিদিন ইফতারের রান্না করা ও পরিবেশন নিয়ে মেহমানখানার স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন অতিথিদের জন্য।

মেহমানখানার উদ্যোক্তা আসমা আক্তার লিজা বলেন, ‘করোনার সময় লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে এটা (মেহমানখানা) শুরু করি। আমরা যতদিন পারি ততদিন খাওয়াব। মানবিকতা থেকে কেউ যদি এগিয়ে আসতে চায় আসবে। আমার যতটুকু সামর্থ্য আমি করে যাব। বিভিন্ন পেশার মানুষ সহযোগিতা করে, কেউ ছোলা, কেউ চাল-ডাল তেল দেয় আর রান্না আমরা নিজেরাই করি। নিজের অর্থায়ন থেকে ৫০ থেকে ১০০ জন মানুষের রান্না করে খাওয়ানোর শুরু হলেও এখন হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াতে পারে তারা। এ ছাড়া সারা বছরই রাজধানীজুড়ে অসহায়-দুস্থদের খাবার বিতরণ করা হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের বাজারের সহযোগিতা করে থাকে। চাল-ডাল, কাঁচা সবজি, এ ছাড়া সপ্তাহে দুদিন গরু, কখনো খাসির গোশত রান্না করে অসহায় মানুষের ক্ষুধার জ্বালা মেটানো হয়। স্কুলের কার্যক্রমও রয়েছে তাদের। স্কুলের নাম আনন্দ পাঠশালা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments