গতকাল ছিল নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবস। ২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর দাবি উঠেছিল, সেখান থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাগুলো থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেসব রাসায়নিক গুদাম সরানো যায়নি। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা সেখানে বাস করছেন আতঙ্কের মধ্যে।
পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাগুলো থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগও নিয়েছিল। এ উদ্যোগের অংশ হিসাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করেছিল। সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে যে তালিকা তৈরি করে, সেখানে ১৯২৪ ব্যবসায়ীর নাম ছিল।
এই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছিল। পরে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ীভাবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের তুলসীখালীতে কেমিক্যাল পার্ক নির্মাণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিককে। এ সময় আপৎকালীন সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য পোস্তগোলায় একটি রাসায়নিক গোডাউন নির্মাণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিসিআইসিকে। কিন্তু বিসিআইসি এখনো ওই গোডাউন নির্মাণ করতে না পারায় আজও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানো সম্ভব হয়নি।
নিমতলী ট্র্যাজেডির এক যুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা বলতে চাই, বিলম্ব যা হওয়ার হয়েছে, আর বিলম্ব মেনে নেওয়া যায় না। অচিরেই পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলতে হবে। আমরা আর নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। বোঝাই যাচ্ছে, সমন্বয়হীনতার কারণে কাজটি সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। মুন্সীগঞ্জে কেমিক্যাল পার্ক কেন এখনো নির্মাণ করা যায়নি, সেই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া চাই।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক গুদাম সরে যাবে। আমরা তার এ কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দ্বিতীয় কথা, নতুন করে পুরান ঢাকায় গুদাম স্থাপন করে কাউকে যাতে রাসায়নিক ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।