বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে রাব্বী মিয়া এমপির নামাজে জানাজা ২৩ জুলাই শনিবার বাদ জোহর নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম ও খতিব মির্জা আবু জাফর বেগ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সভাপতি এডভোকেট নুর উদ্দীন চৌধুরী নয়ন এমপি, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকীব মন্টু এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি এই নামাজে জানাজায় অংশ নেন।
গাইবান্দা-৫ আসন থেকে সাতবার নির্বাচিত এমপি, ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া ২২ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ম্যানহাটানের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
জানাজা নামাজের আগে জেএমসি পরিচালনা কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের সঞ্চালনায় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান, ডেপুটি স্পিকারের এপিএস তৌফিকুল ইসলাম, জেএমসির ট্রাস্ট্রিবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ এম রহমান ও সেক্রেটারি আফতাব মান্নান। জানাজা নামাজের পর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরীর নেতৃত্বত্বে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা সালাম জানিয়ে মরহুম ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রতি সম্মান জানান। এসময় সংসদের পতাকায় কফিন ঢাকা হয়। এর আগে জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত মরহুমের দেহ ফিউনেরাল হোম থেকে জেএমসি ক্যাম্পাসে আনা হয়। ডেপুটি স্পিকারের মরদেহ ২৩ জুলাই শনিবার রাতেই নিউইয়র্ক জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠানো হয়। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার নামাজে জানাজায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, প্রচার সম্পাদক এনাম মিয়া দুলাল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আব্দুল বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির একাংশের সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আমিনুল ইসলাম চুন্নু, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধূরী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আতিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা সেবুল মিয়া সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া দুরারোগ্য ক্যানসার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ৯ মাস মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ইন্তেকালের সময় মরহুমের বড় মেয়ে অ্যাডভোকেট ফাহিমা রাব্বী রিটা এবং তাঁর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ে রেখে গেছেন। ২০২০ সালে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান। ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ই এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। তিনি গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে ফজলে রাব্বী মিয়া গাইবান্ধা কলেজ থেকে থেকে পাস করে পরে বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন। পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন। সে বছর আইয়ুব খান পাকিস্তানে মার্শাল ল চালু করেছিলেন। সে সময় ফজলে রাব্বীর চাচা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেছেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। পরে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এসময় তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন।