Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeজাতীয়নরকে ফেরেননি ফুলপরি

নরকে ফেরেননি ফুলপরি

ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে হল ছাড়া ফুলপরি বলেছিলেন তিনি আর নরকে ফিরতে চান না। নিজের হলটি তার কাছে হয়ে উঠেছিল নরকের মতো। ফুলপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফিরেছেন। তবে তার কাছে নরক হয়ে ধরা দেয়া সেই হলে নয়। উঠেছেন অন্য একটি হলে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হন ফুলপরি। ছাত্রলীগ নেত্রীরা তাকে বিবস্ত্র করে টানা ৫ ঘণ্টা নির্যাতন চালান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অভিযুক্তদের বিচারের দাবি উঠে। সমালোচনার মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।

উচ্চ আদালত থেকেও নির্দেশনা আসে।  সর্বশেষ অভিযুক্ত ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের দিনেই ফুলপরি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৫০১ নম্বর কক্ষে উঠেছেন। নিজ পছন্দে ওঠা কক্ষটিতে ফুলপরিসহ মোট চারজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। ফুলপরি এবং তার বাবার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয় মানবজমিনের। বাবা মো. আতাউর রহমানসহ মোট ৪ জন অভিভাবকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান এই শিক্ষার্থী। এ সময় পুলিশি প্রহরায় হলে প্রবেশ করেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী। ফুলপরি বলেন, আমরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে পাবনা থেকে এখানে এসেছি। এসে হলের কিছু নিয়মকানুন ছিল সেগুলো শেষ করেছি। বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সেলিনা নাসরিন ম্যাডাম বঙ্গমাতা হলে স্থানান্তরিত করে দেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাশিদুজ্জামান স্যার উপস্থিত ছিলেন। ভিসি স্যার প্রভোস্ট স্যারের কক্ষে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেন। সবকিছু মিলিয়ে ইতিবাচক মনে হয়েছে। স্যারেরা জানতে চেয়েছেন, কেমন আছো, কোনো সমস্যা নেই তো। মন দিয়ে পড়ালেখা করবে ইত্যাদি।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকা জিনিসপত্র ইতিমধ্যে নতুন হলে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়েই দুপুরে খাবার খেয়েছি। এখন অনেকটা নিরাপদ এবং নিশ্চিত লাগছে। পূর্বের হলে কেন ফিরতে চান না- জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, আমার ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে নিশ্চয়ই সেই নরক যন্ত্রণা মনে করতে চাই না। আগের হলে উঠলে নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতি সবসময় তাড়িয়ে বেড়াবে। গণরুম, ডাইনিং সর্বত্রই। সব ভুলে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সিট মাইগ্রেশনের আবেদন করলে ‘স্যার ও ম্যাডামরা আমাকে আমার পছন্দ অনুযায়ী সিট বরাদ্দের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।’ তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলসহ মোট তিনটি হলের চয়েস দিয়েছিলাম। এই হলটি মাঝে থাকায় এটি নিরাপদ মনে হয়েছে, তাই এখানে উঠেছি। হলটির প্রতিটি কক্ষে ৪ জন করে শিক্ষার্থী থাকেন। আমার কক্ষেও আমিসহ মোট ৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা আমার সিনিয়র। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ অনেকেই দেখা করেছেন। কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষ করে বিকালে বাড়ি ফিরবো। গ্রামের বাড়ি থেকে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হলে ফিরবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের দিনগুলো আশা করছি অনেক ভালো এবং সুন্দর হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না- এমনটাই প্রত্যাশা। সহকারী প্রক্টর স্যারের সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি। স্যারেরা যোগাযোগ করলে আমরা চলে আসি। এখন আমাদের ক্লাস চলছে। সহপাঠীরা ক্লাস করছে।
ফুলপরির বাবা আতাউর রহমান বলেন, ফুলপরি এখন ভালো আছে। মেয়েকে হলে নিয়ে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে দেশবাসী প্রত্যেককেই ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে ভবিষ্যতে অন্য কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 
গত ১২ই ফেব্রুয়ারি ফুলপরিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে।  

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments