রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক পেরোতেই জোহা চত্বর। এই চত্বর থেকে ডান দিকে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়বে তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে চতুর্দিকে স্থাপন করা হয়েছে লাইটপোস্ট। নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলো সুবিশাল এই মসজিদের অভ্যন্তরে নেই কোনো পিলার। মূল কাঠামোর মধ্যবর্তী স্থানে ওপরের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালাকার গম্বুজ। আজানের সুর দূরদূরান্তে পৌঁছে দিতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সুউচ্চ মিনার। অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতায় অনন্য এই মসজিদ, যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য-শোভাকে বাড়িয়ে সূচনা করেছে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের।
মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য আছে দুটি গেট। একটিতে শুধু পায়ে হেঁটে ঢুকতে হয়। আর অন্যটি দিয়ে গাড়ি নিয়ে। পায়ে হাঁটা রাস্তাটির দুই পাশে সারি সারি ঝাউগাছ। আর তার ফাকে ফাঁকে ডালিয়া ফুলের গাছ। এই রাস্তার ডান পাশে ফুল আর পাতাবাহার গাছের বাগান। বাম পাশে একটি খোলা মাঠ তার ওপারে বড় বড় আমের গাছ। সব মিলিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু এই মসজিদের প্রাঙ্গণ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য-শোভাকে বাড়িয়ে দিয়েছে মসজিদের দৃষ্টিনন্দন নকশা। বলা যেতে পারে, পুরো উত্তরবঙ্গের গৌরবোজ্জ্বল ও মনোমুগ্ধকর মসজিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে। জায়গা দেওয়া হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন একর। মসজিদটি নির্মাণের আগে এখানে ছিল একটি বিশালাকার ক্যান্টিন। এটি নির্মাণ করা হয় ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের নকশাপ্রণেতা ‘থারিয়ানির’ নকশার আলোকে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে। মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় পৌনে চার লাখ টাকা। কিন্তু কাজ সমাপ্ত করতে ব্যয় হয় প্রায় আট লাখ টাকা। কারণ, তিন-চার বছরে দেশে নির্মাণসামগ্রী, শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় যথেষ্ট বেড়ে যায়। এর মূল কাঠামো ৫২ বাই ৫২ গজ। বারান্দা ও বারান্দার বাইরে যে জায়গা রয়েছে তা মূল বা প্রধান কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ। প্রায় পাঁচশ মুসল্লির ধারণক্ষমতা রয়েছে মূল ভবনের অভ্যন্তরে। আর বাইরের জায়গায় তার চার গুণ। অর্থাৎ মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি।
মসজিদটির সৌন্দর্য বাড়াতে নির্মাণ করা হয়েছে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন স্থাপনা। আলাদা করে রাখা হয়েছে মসজিদের আঙ্গিনাকে। এ জন্য চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে ইটের বেষ্টনী। এতে মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। মসজিদ নির্মাণশৈলীর অসাধারণ স্নিগ্ধ অবয়ব সব মুসল্লিকেই মহান সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
মসজিদটির দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হয়েছে অজুখানা, ফোয়ারা, শৌচাগার, অফিসকক্ষ। ইমামের বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তে। আরও আছে ফলের বাগান ও ঈদগাহ। সৌন্দর্য বাড়াতে আছে শ্বেত-শুভ্র কয়েকটি ঝাড়বাতি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ইমাম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা জামাল উদ্দিন। মসজিদের একজন সিনিয়র পেশ ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন আছেন। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের তত্ত্বাবধানের জন্য দুজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও একজন সেকশন অফিসার রয়েছেন। মসজিদের অজুখানার পাশেই রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার। পাঠাগারটি মুসল্লিদের জন্য আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খোলা থাকে।