Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মধৈর্য ও সাহসিকতার অনন্য উদাহরণ খাব্বাব (রা.)

ধৈর্য ও সাহসিকতার অনন্য উদাহরণ খাব্বাব (রা.)

খাব্বাব (রা.) ইসলামের ইতিহাসের সেই বীর, যিনি সর্বপ্রথম স্বীয় ইসলামগ্রহণের কথা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি তাঁর মনীবা উম্মে আন্মারের কানে গেলে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। এবং সিবা ইবনে আব্দুল উজ্জাসহ বনু খুজাআর কতিপয় লোককে সঙ্গে নিয়ে সোজা উপস্থিত হয় খাব্বাবের দোকানে। তখন তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে কাজ করছিলেন।

সিবা এগিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, খাব্বাব! তোমার সম্পর্কে আমরা যা শুনেছি, তা কি সত্য? তিনি অকপটে জবাব দিয়ে বলেন, হ্যাঁ, সত্য। আমি তোমাদের মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি এবং মোহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছি।

কথাগুলো বলতেই তারা তাঁর ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রচণ্ড মারধর করে দোকানের হাতুড়ি ও লোহাজাতীয় সরঞ্জামাদি তাঁর গায়ে ছুড়ে মারে। ফলে তিনি মুহূর্তেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর সারা শরীর রক্তে ভিজে যায়। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা ২/৮৩)

এখানেই শেষ নয়, এর পর থেকে তার ওপর শুরু হয় পাশবিক নির্যাতন। যে উম্মে আন্মার (তাঁর মনীবা) তাঁর প্রতি ছিল পরম আন্তরিক; তাঁকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সার্বিক সহায়ক, সে-ই তাঁর প্রতি হয়ে ওঠে চরম নিষ্ঠুর। প্রায়ই লোহা গরম করে তাঁর মাথায় ঠেকাত। নিয়মিত তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে দায়িত্ব দেয় সিবা ইবনে আব্দুল উজ্জাসহ বনু খুজাআহ গোত্রের কতিপয় উগ্র যুবককে। (আনসাবুল আশরাফ ১/১৭৮—১৭৯)

ঠিক দুপরে আরবের মাটি যখন উত্তপ্ত হতো, তখন তারা খাব্বাব (রা.)-এর পোশাক খুলে তাঁকে লোহার বর্ম পরাত। এরপর অগ্নিঝরা রোদের মধ্যে ফেলে রাখত। প্রচণ্ড রোদে তিনি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়তেন। পাষণ্ডরা তাঁকে এক ফোঁটা পানিও দিত না। কঠিন পিপাসায় যখন তিনি ছটফট করতেন, তখন তারা তাঁকে ইসলাম ত্যাগ করার প্রস্তাব দিত। কিন্তু এমন কঠিন অবস্থায়ও তিনি দীপ্ত কণ্ঠে একত্ববাদের সত্যতা এবং পৌত্তলিকতার অসারতার কথাই বলতেন। এভাবে তারা নিত্যনতুন পদ্ধতিতে খাব্বাব (রা.)-কে নির্যাতন করত। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা : ২/৮৪—৮৫)

একদিন কাফিররা লোহা গরম করে খাব্বাব (রা.)-এর মাথায় ঠেসে ধরেছে। ঠিক ওই সময় রাসুল (সা.) তাঁর পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। নিষ্ঠুর এই আচরণ দেখে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। মোমের মতো গলে গেল তাঁর হৃদয়। চুর-চুর হয়ে গেল তাঁর অন্তর। তিনি খাব্বাবকে সান্ত্বনা দিলেন, আর আকাশের দিকে দুহাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করলেন হৃদয় উজাড় করে—হে আল্লাহ! আপনি খাব্বাবকে সাহায্য করুন। (রিজালুন হাওলার রাসুল : ১/১৭০)

নিষ্ঠুর কাফেররা ঈমানছাড়া করতে তাঁকে শুধু শারীরিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমেও তাঁকে নিদারুণ কষ্টে ফেলে দিয়েছিল। যেহেতু তিনি পেশাগত দিক থেকে ছিলেন একজন কামার, তরবারি তৈরিতে তাঁর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। ইসলাম গ্রহণের কারণে দুষ্ট কাফেররা তাঁর পাওনাগুলো ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাল।   তিনি বলেন, একবার আমি আস ইবনে ওয়াইলের একটি তরবারি তৈরি করলাম। পারিশ্রমিকের জন্য তার কাছে গেলে সে আমাকে পরিষ্কার বলে দেয় যে মুহাম্মদ (সা.)-এর ধর্ম ত্যাগ না করলে কিছুই দেবে না। আমি বললাম, তুমি মরার পর জীবিত হলেও না? সে বিদ্রুপ করে বলল, মরার পরে আবার জীবিত হব! ঠিক আছে তখন দেব তোমার পাওনা।

এত কিছুর পরও খাব্বাব (রা.) তাদের সঙ্গে আপস করেননি, তিনি নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ঈমানকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবং আমৃত্যু ইসলামের ওপরই অটল থেকেছেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাইজদী নোয়াখালী

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments