Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeবিনোদনদুর্দশায় কাঙ্গালিনী সুফিয়া

দুর্দশায় কাঙ্গালিনী সুফিয়া

বাউলশিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। এ শিল্পী সমগ্র দেশ ঘুরে ঘুরে গান পরিবেশন করেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও অনেকবার গান করেছেন তিনি। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজবাড়ী জেলায়। ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি সহজাত টান ছিল। সব সময় গুনগুন করে পল্লীগান গাইতেন। একবার শুনেই যেকোনো গান মনে রাখতে পারতেন অবিকল। নিজেই গান বাঁধতে পারতেন সে সময় থেকেই। জেলে পরিবারে তার জন্ম। তার আসল নাম ছিল অনিতা হালদার বা টুনি হালদার, ডাকনাম বুচি।

সবাই তাকে কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামেই চেনেন। অনেক অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা হলেও গান ছাড়েননি। এখন বসবাস করেন ঢাকার সাভারের জামসিং গ্রামে। এক পারিবারিক গানের অনুষ্ঠানে কথা হয় কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে। তার সঙ্গে সর্বক্ষণ সঙ্গী তার মেয়ে পুষ্প বেগম। এ বাউল শিল্পী বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। বয়সের কারণে কথা বলতেও কষ্ট হয় তার। তবুও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখনো গান পরিবেশন করেন। কানে অনেকটা কম শোনেন। এজন্য প্রায় প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন মেয়ে পুষ্প। মেয়ের ভাষ্য, মায়ের বয়স আশির ওপরে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের বয়স কম দেয়া হয়েছে। কীভাবে হয়েছে তাও বলতে পারলেন না পুষ্প। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার মেয়ে পুষ্পও মায়ের সঙ্গে গান করেন। গানই তাদের একমাত্র উপার্জনের উৎস। মা সারাজীবন গান করে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন, তা দিয়ে সাভারের জামসিংয়ে তিন কাঠার একটি জমি কিনেছিলেন। গড়েছিলেন একতলা বাড়িও। এরমাঝে মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন জমিসহ বাড়িটি বিক্রি করতে বাধ্য হই। মোট ২২ লাখ টাকা দিয়ে জায়গা ও বাড়ি বিক্রি করেছি তিন বছর আগে। চিকিৎসা শেষে মা এখন আগের চেয়ে একটু সুস্থ। সুস্থ হয়েই গানে ফিরতে হয়েছে মা’কে। তিনি আরও বলেন, এখন সাভারে ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাড়িতে আমরা থাকি। তেমন কোনো আয় নেই। বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা পান মা। সেই পুরো টাকাটা ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ার পেছনে। বাধ্য হয়েই অসুস্থ শরীরে মা’কে এখন গান গাইতে হচ্ছে। কাঙ্গালিনী সুফিয়া বলেন, গান তো আমার রক্তে মিশে আছে। এজন্য গান ছাড়া আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন গান ছাড়বো না। রাজবাড়ীতে এ শিল্পীর গ্রামের বাড়ি আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের ২০ শতাংশ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। সেখানে শিল্পীর নামে একটি জাদুঘর হবে। সেখানে থাকবে শিল্পীর স্মৃতি চিহ্ন। কাঙ্গালিনী সুফিয়া ‘শিল্পকলা পদক’সহ জীবদ্দশায় পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments