পৃথিবীর সব খাদ্যের সেরা খাদ্য দুধ। সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত্ব। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ।
জন্মের পর প্রথমত মানুষ মায়ের দুধের ওপরই নির্ভর করে। অন্যান্য খাদ্য গ্রহণে সক্ষম হয়ে ওঠার আগে এটিই হলো স্তন্যপায়ী (মানুষসহ যারা স্তন্যদুগ্ধপানকারী) শাবকদের পুষ্টির প্রধান উৎস। স্তন থেকে দুগ্ধ নিঃসরণের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলোস্ট্রাম সমৃদ্ধ শালদুধ উৎপন্ন হয়, যাতে মায়ের দেহ হতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শাবকের দেহে নিয়ে যায় এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এতে আমিষ, ল্যাকটোজসহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। আন্ত প্রজাতির দুধ গ্রহণ করা অস্বাভাবিক নয়, বিশেষ করে মানুষের ক্ষেত্রে, যারা অন্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুধও গ্রহণ করে।
কৃষিজাত পণ্য হিসেবে খামারের পশু হতে গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভাবস্থার পর যত দ্রুত সম্ভব গবাদি পশু থেকে দুধ দোহানো হয়। গবাদি পশুর দুধ মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ উত্কৃষ্ট ও সুস্বাদু এই খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে তোমাদের পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীর জন্য সুস্বাদু। ’ (সুরা : নাহল : ৬৬)
সুবহানাল্লাহ, শুধু দুনিয়াতেই নয়, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য জান্নাতেও বিশুদ্ধ দুধের ব্যবস্থা রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তার উপমা হলো; তাতে আছে নির্মল পানির ঝরনা, আর আছে দুধের নদী যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নদী আর পরিশোধিত মধুর নদী। তাদের জন্য সেখানে আছে সব রকম ফলমূল আর তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা। (এরা কি) তাদের মতো যারা চিরকাল থাকবে জাহান্নামে যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে গরম পানীয় যা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)
মহান আল্লাহর এই নিয়ামতটি মানুষের জন্য যেমন উত্কৃষ্ট খাদ্য, তেমনি এটি স্বপ্নযোগে কেউ দেখলে এর ব্যাখ্যাও বেশ ভালো। একবার মহানবী (সা.) স্বপ্নযোগে দুধ পান করতে দেখেছেন, তারপর সাহাবায়ে কিরামের কাছে তিনি নিজেই সে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম। তখন (স্বপ্নে) আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আসা হলো। আমি তা পান করলাম। এমনকি আমার মনে হতে লাগল যে সে পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অবশিষ্টাংশ আমি ওমর (রা.)-কে দিলাম। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ স্বপ্নের কী ব্যাখ্যা করেন? তিনি জবাবে বলেন, তা হলো ইলম (জ্ঞান)। (বুখারি, হাদিস : ৮২)