Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মতুরস্কে ইসলামী পুনর্জাগরণের মহানায়ক

তুরস্কে ইসলামী পুনর্জাগরণের মহানায়ক

শায়খ মাহমুদ আফেন্দির মৃত্যু

তুরস্কের প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শায়খ মাহমুদ উসতা উসমান উগলু আফেন্দি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন শুক্রবার জুমার পর ফাতিহ মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

মাহমুদ উসমান ১৯২৯ সালে তুরস্কের ত্রাবজন প্রদেশের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শায়খ মুহাম্মদ রশিদ আশিক কুতলুর কাছে মাত্র ছয় বছর বয়সে পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। এরপর কায়সারি শহরে শায়খ তাসবিহি জাদার কাছে আরবি ও ফারসি এবং নাহু-সরফ রপ্ত করেন। এরপর শায়খ মুহাম্মাদ রাশদুর কাছে উলুমুল কোরআন ও কিরাআহ, হাদিস, তাফসির, ফিকহ, উসুলসহ নানা শাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি হাদিসের ‘ইজাজাহ’ লাভ করেন।

সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামী শিক্ষার প্রসারে শায়খ মাহমুদ আফিন্দি তুরস্কের আনাচে-কানাচে চষে বেড়িয়েছেন। ১৯৫৪ সালে ইসমাইল আগা মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু  ১৯৯৬ সালে তাঁকে এই পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এর পর থেকে তিনি পাঠদান ও ওয়াজে ব্যস্ত সময় পার করেন। শায়খ আফেন্দি জীবনের নানা সময় হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। ১৯৬০ সালে তুরস্কে অভ্যুত্থানের পর তাঁকে নির্বাসনের নির্দেশ দেয় সামরিক প্রশাসন। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৮৫ সালে তাঁর বক্তব্যকে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য হুমকি বলে অভিযোগ করে নিরাপত্তা আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু এবারও তাঁর প্রতিপক্ষরা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় আদালত তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা দেন। ২০০৭ সালে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে হত্যাচেষ্টা করা হলেও তিনি বেঁচে যান। এরপর হাসপাতালে ধাওয়া করে সেখানেও তাঁকে গুলি করে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়।

প্রতিবছর তিন সপ্তাহ তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী শিক্ষা প্রচারে ব্যয় করতেন। এর পরও ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, উজবেকিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশে ইসলামী শিক্ষা প্রচারে যেতেন তিনি। ইসলামী শিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা চর্চা ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। নকশবন্দি তরিকায় সারা বিশ্বে তাঁর কয়েক কোটি শিষ্য রয়েছে। শিষ্য-ভক্তদের সব সময় তিনি সব ধরনের সহিংস কার্যক্রম পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের মাধ্যমে সবার মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রসারে ভূমিকার রাখার উপদেশ দেন।

জানা যায়, ইস্তাম্বুলের ফাতেহ নগরীর অন্যতম মসজিদ ছিল ইসমাইল আগা মসজিদ। ১৯৫৩ সালে সরকার এটি এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। মসজিদকে তিনি গোডাউন হিসেবে ব্যবহার শুরু করলে শায়খ মাহমুদ আফেন্দি খুবই দুঃখ ভারাক্রান্ত হন। আফেন্দি ওই মসজিদটি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনে নামাজের জন্য প্রস্তুত করেন। এরপর স্থানীয় আলেম শায়খ আলী হায়দারকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেখানে তখন কেউ নামাজ পড়ত না। ধর্মীয় বিষয়ে কারো জ্ঞান ছিল না। দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েকজন মুসল্লি নামাজ পড়া শুরু করে। তখন অত্যন্ত গোপনে ছাত্র সংগ্রহ করে তাদের পার্শ্ববর্তী বাড়িতে পড়াতেন শায়খ আফেন্দি। এক দশক পর তাঁর কাছে পড়া শিষ্যদের তিনি দেশের নানা প্রান্তে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে পাঠিয়ে দেন। ওই শিষ্যরা অনেক বাধা-বিপত্তির পরও কোরআনের শিক্ষা অব্যাহত রাখেন। এমনকি তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের কোরআনের শিক্ষক শায়খ কামাল আফেন্দি ছিলেন তাঁর হাতে গড়া শিষ্যদের অন্যতম। এভাবেই পুরোপুরি প্রতিকূল পরিবেশে শায়খ মাহমুদ আফেন্দি তুরস্কে ইসলামী শিক্ষা বিস্তার ও ইসলামী পুনর্জাগরণে ব্যাপক অবদান রাখেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments