Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeজাতীয়তিনি স্মরণীয় অনুসরণীয়

তিনি স্মরণীয় অনুসরণীয়

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সাবেক মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আলমগীর ছিলেন নির্মোহ, দায়িত্বশীল ও পেশাদার সাংবাদিক। তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার শিক্ষক। তার অকালে চলে যাওয়ায় সাংবাদিকতার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি স্মরণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবেন।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে স্বজন ও সুহৃদদের আয়োজনে প্রয়াত শাহ আলমগীর স্মরণে ‘সাংবাদিকতায় শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। 

বক্তব্য দেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, প্রয়াত শাহ আলমগীরের সহধর্মিণী ফৌজিয়া বেগম মায়া, ছোট বোন তাহমিনা চৌধুরী, বজলুর রহমান, রহমান মোস্তাফিজ, শাহ মুহাম্মদ মুহতাসিম বিল্লাহ, মানিক লাল ঘোষ, রফিকুল ইসলাম সুজন, লাবণ্য আহমেদ প্রমুখ। 

উপস্থিত ছিলেন সমকালের নগর সম্পাদক শাহেদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে। 

ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শাহ আলমগীর অকালে চলে যাওয়ায় সাংবাদিকতার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশাকে যদি সম্মান না দিই, তাহলে সমাজ কীভাবে এগোবে। একজন সাংবাদিক সত্য চিত্র তুলে ধরেন। ফলে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রু বেশি। শত্রু সবারই আছে। কিন্তু এ ধরনের পেশা (সাংবাদিকতা) যারা বেছে নেবেন, তাদের যদি আমরা সম্মান দিতে না পারি তবে তারা কেন সাংবাদিকতায় থাকবেন।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নের জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলো এবং এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই না সাংবাদিকতা কোনো জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হোক। সেটা সরকার বা মালিকপক্ষ- যেই হোক।

ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট একটি নিয়ন্ত্রণমূলক আইন। আজকে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে। সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু না কিছু আইন থাকা দরকার। কিন্তু কোনোভাবেই এ আইন যেন সাধারণের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব না করে। সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।  সে আইন অনুসারে আমরা অধিকারগুলো পাচ্ছি কিনা, তা দেখা দরকার। অ্যাক্টের যেমন দরকার আছে, তেমনই সেটি যেন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন না করে সেটাও দেখতে হবে।

সাইফুল আলম বলেন, শাহ আলমগীরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছেচলি­শ বছরের। প্রথম দিন থেকেই আমরা সান্নিধ্যে ছিলাম। একসঙ্গে পড়াশোনা, সংগঠন পরিচালনা ও চাকরি করেছি। আরও অনেক বিষয় আছে যেগুলোর সূচনা আমরা একসঙ্গে করেছি। তিনি বলেন, শাহ আলমগীরকে আমি একাধারে সাংবাদিক, সংগঠক, সাংস্কৃতিককর্মী, রাজনৈতিককর্মী, বন্ধু, ভাই হিসেবে দেখেছি। আমাদের মধ্যে এ রকম অন্তরঙ্গতা ছিল। 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, গণমাধ্যমের সামনে যেমন বড় চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি সম্ভাবনাও আছে। এই চ্যালেঞ্জটা নিজেদের মধ্যে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, কীভাবে গণমাধ্যম গণমানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গাটায় যাবে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

ওমর ফারুক বলেন, শাহ আলমগীর ভাইকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তিনি সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের শত্রু এখন সাংবাদিক। আমাদের ঘরের লোকরাই আমাদের ক্ষতি করছে। এজন্য মেধাবী লোকরা এখন এই পেশায় আসতে চান না। সাংবাদিক রোজিনার জন্য সংগঠনগুলো মাঠে নামল, আন্দোলন করল। কিন্তু কোনো নিউজ প্রথম আলোতে দেখিনি। সেখানে আমাদের নিউজ ছাপে না। 

প্রয়াত শাহ আলমগীরের বোন তাহমিনা চৌধুরী বলেন, দাদা (শাহ আলমগীর) একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন। তার অনেক কবিতাই পরে গান হয়েছে, সেগুলো আমরা জানতাম না। পরে শুনে জেনেছি। বাবা-মা পারলে আমাকে অষ্টম শ্রেণি পড়ার সময় বিয়ে দিয়ে দেয়, শুধু দাদার জন্যই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমার জন্য সব বকা খেতেন উনি। দাদা আমাদের দশ ভাইবোনের দীক্ষা ছিলেন। সবাই আমার দাদাকে ক্ষমা করবেন এবং দোয়া করবেন।

কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, শাহ আলমগীর একদিকে ভালো সংগঠক ছিলেন, অন্যদিকে ভালো সাংবাদিক হওয়ার বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি সবাইকে সম্মান করতেন। কোনো কারণে কাউকে অপছন্দ হলে তাকে বোঝাতেন। সবাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। এত অল্প সময়ে উনি চলে যাবেন, এটা ভাবিনি।

আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, শাহ আলমগীরের মতো মানুষ প্রতিটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানে থাকলে সবাই ইথিকস মেনে চলত। তার মতো এখন কেউ নেই বলেই কোনো প্রতিষ্ঠান ইথিকসে চলে না। এখন যে কেউ সংবাদ প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সবারই এটির বিরোধিতা করা উচিত। সাংবাদিকতার ইথিকস মানার জন্য বড় বড় জায়গাগুলোতে ভালো মানুষ বসাতে হবে। বর্তমানে আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না, আমাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করে না। কিন্তু শাহ আলমগীরের দিকে হাত তুলে কেউ বলতে পারে না, তিনি দুর্নীতিবাজ ছিলেন। 

সোহরাব হোসেন বলেন, আজকে সাংবাদিকরা যদি শাহ আলমগীরের ‘ছড়িয়ে দেওয়া’র নীতি অনুসরণ করেন তাহলে অন্তত সাংবাদিক ইউনিয়ন নিয়ে যত বদনাম ও সমালোচনা আছে সেসব থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। আমরা জানি রাজনৈতিক বাস্তবতা কঠিন। কিন্তু সংগ্রাম তো করাই যায়। সবকিছু আপাদমস্তক মেনে নেওয়া সাংবাদিক বা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ নয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments