Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামতাকসিমের কসম, হিরো আলম নিশ্চিত

তাকসিমের কসম, হিরো আলম নিশ্চিত

এ মুহূর্তে আলোচনায় ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান ও হিরো আলম। ঘুরে ফিরে এ দু’জন প্রায়ই আলোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। তাকসিম এ খান ওয়াসার ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে এমডি’র দায়িত্ব পালন করছেন। বেহিসেবি বেতন, বিদেশে বসে দায়িত্ব পালন, উচ্চ আদালতে রিট, বার বার পানির মূল্যবৃদ্ধি, এমনকি দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের জন্য তিনি আলোচনায় সবসময়ই। ওয়াসার পানি তাকে খাওয়ানোর জন্য তার অফিস পর্যন্ত এসেছিলেন জনতা। হয়েছে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন। তারপরও তিনি আছেন ওয়াসায় দাপটের সঙ্গে। আলোচিত সমালোচিত হয়েও তিনি গর্বের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে হিরো আলম উপনির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে এখন আলোচনায়। হিরো আলমও নানা কারণে ভাইরাল।

সামান্য ডিশ লাইনের একজন কর্মচারী হয়ে এখন সারা দেশের পরিচিত মুখ। প্রথমে গানের সঙ্গে নাচ করে তার ডিশ চ্যানেলে প্রচার করতেন। এভাবেই আশরাফুল হোসেন এক সময় হয়ে উঠেন হিরো আলম। চর্তুমুখী প্রতিভা দেখাতে গিয়ে হিরো আলম রবীন্দ্র সংগীতকে বিকৃত করে নিজ কণ্ঠে সুর দেন। শুরু হয় তুমুল আলোচনা। এরই মধ্যে কবিতাও প্রচার হয় তার। আর নাটক- সিনেমা নিজেই তৈরি করে তা প্রচার করেন। অনেক উঠতি মডেল তার পেছনে ঘুর ঘুর করেন। এ ছাড়া নানা সময় অন্যকে নিয়ে তার বিরূপ মন্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া নিয়েও তিনি বেশক’দিন আলোচনায় ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও আলোচনায় আসেন। আসছে পহেলা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও তিনি লড়তে চান। মনোনয়নপত্র জমাও দেন দু’টি আসন থেকে। বগুড়ার দু’টি আসনেই বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এখন নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন। আরও ক’দিন এ নিয়ে হিরো আলম আলোচনায় থাকবেন। 

তাকসিম এ খান ও হিরো আলম দুজনের আলোচনায় থাকা ভিন্ন দু’টি বিষয়ে। তাকসিম এ মুহূর্তে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ি নিয়ে। সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সে রিপোর্ট এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। আলোচনা এত তীব্র যে, তিনি এ নিয়ে নিজেই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি নয়, একটি বাড়ি আছে। আর এ বাড়ি তার স্ত্রীর নামে। তিনি ওই রিপোর্টকে মিথ্যা বলেও দাবি করেছেন। তাহলে ওই রিপোর্টে কী ছিল একটু দেখে নেয়া যাক। রিপোর্টে বলা হয়েছে-প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাকসিম এ খানের নাম থাকা নিয়ে সমপ্রতি দু’টি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। =

অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন, কতো টাকায় কেনা- তা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকসিম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ‘গভর্নমেন্ট ওয়াচ নোটিশ’-এর একটি কপি অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে। সিআইএ সহ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), দেশটির অন্যান্য সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল) তাকসিম এ খানের বিষয়ে কাজ করছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়। সমকালের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিমের বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পদ থাকলেও দেশে তার কোনো সম্পত্তি নেই। গুলশান-২ এর ৫৫ নম্বর সড়কে সরকারি বাসভবনে তিনি থাকেন না। তিনি থাকেন নয়াপল্টনের শ্বশুরবাড়িতে। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বিষয়ে দুদকে অভিযোগ জমা দেয়া দুই ব্যক্তির একজন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মো. সোহেল রানা। 

অভিযোগে বলা হয়, বিদেশি ঋণে করা ওয়াসার বড় বড় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন তাকসিম এ খান। পাচারের অর্থে দেশটির লস অ্যানজেলেস, নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের অভিজাত এলাকায় নগদ ডলারে ১৪টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। অভিযোগে বলা হয়, তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে যোগ দেন। তার পরিবারের সব সদস্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাকসিমও প্রতিবছরে প্রায় তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করেন। দৈনিক সমকাল পত্রিকা নিশ্চিত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টি বাড়ির মধ্যে পাঁচটির তথ্য মিলেছে। ওই সব বাড়ির ঠিকানা ও ছবি সমকালের কাছে রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। বাড়িগুলোর অবস্থান, দাম সবই উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। 

এ রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। বিস্মিত অনেকে। ওদিকে দেশ থেকে টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বিলাসবহুল বাড়ি কেনার তথ্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমার ১৪টি বাড়ি কেনার তথ্য দিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা। এর কোনো সত্যতা নেই। এই ১৪ বাড়ির মধ্যে শুধু একটি আমার স্ত্রীর কেনা। বাকি কোনোটিই আমাদের নয়। তবে ১৪টি বাড়ির মধ্যে ৫টিতে আমার পরিবার বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছে। মঙ্গলবার ওয়াসা ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এই দাবি করেন।   তাকসিম এ খান বলেন,  আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আমার স্ত্রী-সন্তান সেখানে ওয়েল স্টাবলিস্ট, তাই সেখানে একটি বাড়ি কেনা খুব অসুবিধার কিছু নেই। আমার স্ত্রীর নামেই ওই একটা বাড়ি আছে। সেটাকেও বাড়ি বলা যাবে না, এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট। 

ওয়াসার এমডি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে এমন নানান রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই এগুলো পুরোটাই অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যারা ওয়াসা থেকে অনৈতিক সুবিধা পায়নি বা পাচ্ছে না তারাই মূলত এসব করিয়ে থাকে। এর আগেও ওয়াসার এমডি’র দুর্নীতি নিয়ে বেশ আলোচনার মধ্যে তাকসিম এ খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খোদার কসম, আমি কখনো একটি টাকাও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করিনি।

ওয়াসার এমডিকে নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই আলোচনায় প্রবেশ করেন হিরো আলম। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে শূন্য ঘোষিত বগুড়ার দু’টি আসনে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু বাছাইয়ে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে গরমিলের অভিযোগে তার দু’টি মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়। আর এই প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে আপিল করেছেন হিরো আলম।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে হিরো আলম আপিল আবেদন দাখিল করেন। পরে হিরো আলম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিটা মানুষের নির্বাচন করার অধিকার আছে। এবারো নির্বাচন করার টার্গেট আছে আমার। কথায় তো আছে, একবার না পারিলে দেখ শতবার। এমন কোনো বয়স হয়নি যে, আমি নির্বাচন করতে পারবো না। যেহেতু জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছি, দেখি শেষ পর্যন্ত কতোটা করতে পারি। আমি পরিপূর্ণভাবে সব জমা দিয়েছি। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে বুঝতে পারবো, তারা সুষ্ঠু বিচার করলেন না অবিচার করলেন। ২০১৮ সালে যখন ভোট করি তখনো একই কারণে বাতিল করা হয়েছিল। এবার সে ভুল জানামতে করিনি। একটা ভুল তারা ধরেছেন যে, একজন ভোটারের নাকি নাম্বার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ওই নামে আমি কারও নাম্বারই জমা দেইনি, উনারা যে ভুলটা ধরেছে আরেকটা ভোটার লিস্টে নাম পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু নাম্বার পাওয়া যাচ্ছে না। এই দুইটা বিষয়ই আমি কমিশনে জমা দিয়েছি। আগেরবারও বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী হলে হাইকোর্ট থেকে পরে প্রার্থিতা পেয়েছিলাম। সে বারও এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে এতকিছু করার পরও বাতিল করে দিলো। তারপরও আমি হাল ছাড়লাম না। শেষ পর্যন্ত আইনের প্রতি বিশ্বাস ছিল। পরে হাইকোর্ট রায় দিলেন। সেই নির্বাচনে মারামারির কারণে দুপুরে ভোট বর্জন করি। হিরো আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমি জয়লাভ করবো।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments