Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ডলার সংকট ঠেকাতে চার সুপারিশ

ডলার সংকট ঠেকাতে চার সুপারিশ

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সময়ে ডলারের বাজারের অস্থিরতায় নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। হু হু করে বাড়ছিল ডলারের দাম। ধাপে ধাপে টাকার মান কমানোয় তেজি ডলারের দাম রেকর্ড ১২০ টাকা ছাড়ায় খোলাবাজারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নানামুখী উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎপর হয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব উদ্যোগে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খোলাবাজারে দাম কিছুটা কমে এসেছে। হঠাৎ করে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি সামনে এমন পরিস্থিতি এড়াতে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। 

গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৮ কারণে ডলারের সংকট এবং দাম উঠানামা করছে। এর মধ্যে আছে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে বাইরের দেশে যাওয়া নাগরিকদের ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি, করোনায় ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্রদান, হঠাৎ  রেমিট্যান্স কমে যাওয়া, ব্যাংকে ডলারের ঘাটতি, ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়া, বিদেশগামীরা উচ্চমূল্যে ডলার সংগ্রহ করা এবং বিদেশে শ্রমিক নিয়োগে এক শ্রেণির দালালদের ডলার বাণিজ্যের কারণে ডলারের দাম বেড়েছে।

পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একটি সংস্থার করা  প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।  সংস্থাটি মানুষের চাহিদা মোতাবেক ডলার সরবরাহ করার জন্য সুপারিশ করেছে। নইলে সরকারের গৃহীত এসডিজি এবং এমডিজি বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে। 

এই সংকট ঠেকাতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। ডলার বিক্রি করে এজেন্সিগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে তারা। ডলারের সংকট ঠেকাতে সংস্থাটি সরকারকে ৪টি সুপারিশ করেছে। সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেয়া হয়েছে জোর তাগিদ। 
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের ব্যাংক নির্ধারিত বিনিময় হার এবং মানি এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রার হার নির্ধারণের নিয়ামক ও পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণ তো মানি এক্সচেঞ্জ এবং কার্ব মার্কেটে ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের বিনিময় হার থেকে কয়েক টাকা বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়। এর সঙ্গে চাহিদা ও জোগানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেল, মানি এক্সচেঞ্জ এবং কার্ব মার্কেট থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ইউএস ডলার অতি মাত্রাই কেনাবেচা শুরু হয়। 

সংকটের কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ, চাকরি, চিকিৎসা, পড়াশোনা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশযাত্রা  বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশগামীরা ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য ডলার এনড্রোস করে নিয়ে যাচ্ছেন। যারা যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি প্রায় ৫০০ ইউএস ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। মার্কেটে ডলারের বৃদ্ধি থাকায় এবং ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জের ক্রয়-বিক্রয়ের সীমা নির্ধারিত হওয়ায় কার্ব মার্কেটে ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। 

করোনা পরবর্তী সময়ে সরকার কর্তৃক ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে ঋণ দেয়ায় ব্যবসায়ীদের পুনরায় পুরাতন ব্যবসা চালুর পাশাপাশি নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। এতে দেশের বাইরে থেকে নতুন যন্ত্রপাতি, তুলা, সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামাল আমদানির চাহিদা ও দাম দুই-ই বেড়ে গেছে। এতে আমদানি খরচ বাড়লেও সে তুলনায় ডলার আসছে না। সার, চাল, ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী এবং পেট্রোলিয়াম আমদানির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ব্যয় গত বছরের তুলনায় ২১.৬০ শতাংশ  বেড়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর ডলারের ঘাটতি থাকায় তারা অব্যাহতভাবে বিক্রয় করছে। বিদেশ গমনেচ্ছুরা খুচরা মার্কেট থেকে ডলার ক্রয় করছে। এতে বাড়তে শুরু করেছে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম। এ ছাড়াও ব্যাংক আমানত এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়ায় মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্যত্র বিনিয়োগ করছে। বিশেষ ক্ষেত্রে সামর্থ্যবান লোকেরা ওই টাকা ডলারে রূপান্তর করে তা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিদেশগামী যাত্রীগণ পাসপোর্ট ইস্যুকৃত ভিসা প্রদর্শন করে ব্যাংকগুলো হতে ডলার ক্রয় করতে গেলে তাদের খুব সামান্য পরিমাণ ডলার দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে খালি হাতে ফেরত দেয়া হয়। ফলে অসহায় যাত্রীগণ উচ্চমূল্যে ডলার ক্রয়ের জন্য কার্ব মার্কেটের দিকে ধাবিত হয়। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো তাদের দেশে বিভিন্ন পেশায় শ্রমিক নেয়ার জন্য ভিসা প্রদান করে আসছে। এক শ্রেণির দালাল চক্র যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ডলার ঘুষ নিয়ে থাকে। এতে বাজারে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সংস্থাটির সুপারিশে বলা হয় ডলার পাচার রোধে বিমানবন্দরে তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ভিআইপি যাত্রীদের তল্লাশি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার এনডোর্সের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা এবং নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে যেন ডলার পাচার না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments