ঠাট্টা-বিদ্রুপ মানুষকে নিন্দিত করে তোলে, মানুষের ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। বিদ্রুপকারীরা পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে, সর্বত্রই মানুষের চোখের কাঁটা হয়ে ওঠে। কারণ এই অভ্যাস অত্যন্ত জঘন্য হিসেবে বিবেচিত। অহেতুক ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা কোনো সুশিক্ষিত, ভদ্র মানুষের কাজ নয়। পবিত্র কোরআনেই এ ধরনের কাজকে মূর্খদের কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তার গোত্রকে বলল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে তোমরা একটি গাভি জবাই করবে। তারা বলল, তুমি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছ? সে বলল, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬৭)
অনেকে ঠাট্টা-বিদ্রুপকে এতটাই হালকা বিষয় মনে করে যে কখনো কখনো ধর্ম নিয়েও বিদ্রুপাত্মক উক্তি করে বসে, কোনো ধার্মিক বা আলেমকে পেলে ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন বিদ্রুপাত্মক উক্তি করে বসে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়। এ ধরনের লোকজন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেরাও ধর্মে বিশ্বাসী হয়, কিন্তু তারা যেহেতু মজা করতে পছন্দ করে, তাই না জেনে ধর্ম নিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করে মজা নেওয়ার চেষ্টা করে, যা মানুষকে কঠিন শাস্তির যোগ্য করে তোলে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)। নাউজুবিল্লাহ। ঠাট্টা-বিদ্রুপ এতটাই নিকৃষ্ট কাজ যে মহানবী (সা.) এই কাজকে ‘দূষণ সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)
বিদ্রুপ এমনই জঘন্য বিষয় যে আল্লাহর রাসুলকে বিদ্রুপ করার প্রতিবাদে যেমনিভাবে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছেন, তেমনি মুমিনদের নিয়ে বিদ্রুপের প্রতিবাদেও মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছেন। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, যখন সদকার নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন আমরা পরস্পর অর্থের বিনিময়ে বহন করতাম। তখন আবু আকিল অর্ধ ‘সা’ নিয়ে এলো। অন্য একজন আরো একটু বেশি আনল। তখন মোনাফেকরা বলতে লাগল, আল্লাহ এর সদকা থেকে অবশ্যই অমুখাপেক্ষী আর দ্বিতীয় লোকটিও দেখানোর জন্যই এটি করেছে। তখন আল্লাহর আয়াত নাজিল হয়। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৬৮)
ওই আয়াতটি হলো, ‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে। অতঃপর তারা তাদের নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহ তাদের নিয়ে উপহাস করেন; আর তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭৯)
তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত ঠাট্টা-বিদ্রুপের অহেতুক ও নিন্দনীয় কাজ পরিহার করা; বিশেষ করে যারা আল্লাহর আয়াতগুলো কিংবা ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা। তাদের থেকে দূরে সরে যাওয়া। এটা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তুমি তাদের দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না। (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)
মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।