Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামছোট হচ্ছে সাধারণের ইফতার মেন্যু

ছোট হচ্ছে সাধারণের ইফতার মেন্যু

মো. আল-আমিন

তেল, খেজুর, ছোলা, ময়দা, চিনিসহ ইফতারির পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। ফলের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গত রমজানে ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিনি এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাড়ে ৩০০ টাকার খেজুরের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। পঞ্চান্ন টাকা কেজির ময়দার দাম এখন ৭৮ টাকা। ইফতারি পণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এজন্য ইফতারি থেকে আইটেম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আগারগাঁওয়ে বিএনপি বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী শাহানা খাতুন বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি। তাই ইফতারির আয়োজন আগের মতো থাকছে না। শুধুমাত্র খেজুর আর ছোলা-মুড়ি দিয়ে ইফতারির পরিকল্পনা করেছি।

এবারের ইফতারিতে কোনো ফল রাখা সম্ভব হবে না। 
একজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, এবারের ইফতারিতে বেশ কয়েকটি আইটেম বাদ দিতে হবে। প্রতিবছর ইফতারের মেন্যুতে ফল, খেজুর, জিলাপী ও রুহ আফজা রাখার চেষ্টা করি। এবার এসব দিয়ে নিয়মিত ইফতার করা হবে না। এগুলো আর আমাদের মতো মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নেই। তিনি বলেন, এক কেজি ফল কিনতে গেলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। খেজুরের দামও গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। জিলাপীর কেজি ৩০০ টাকা। আগের বছর রুহ আফজা কিনেছিলাম ৩০০ টাকা দিয়ে, এবার সেটির দাম চাচ্ছে ৩৬০ টাকা। এজন্য এগুলো এবারের ইফতারিতে রাখবো না। 
রাজধানীর তালতলা বাজারে পণ্য কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মোস্তফা বলেন, গত বছর যেখানে ৭০ টাকা দিয়ে ছোলা কিনেছি, এবার ৮৫ টাকা দাম চাচ্ছে। গত বছর ৭৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতিকেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। এক কেজি আটা ৪০ টাকা থেকে ৬৮ টাকা হয়েছে। সয়াবিন তেলের দামেও আগুন। প্রতি লিটার কিনতে হয়েছে ১৮৫ টাকা। আর ফলের বাজারে তো যাওয়ারই উপায় নেই। প্রতি কেজি আপেল কিনতে ২৫০ টাকা গুনতে হয়। অন্যান্য ফলের দামও অনেক। গত বছর যে খেজুর ৩০০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম সেটি এবার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এমন অবস্থা হলে ইফতারিতে এসব পণ্য রাখবো কীভাবে? 
রিকশাচালক আশরাফ বলেন, সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে ডাল-ভাতের জোগাড় করতেই কষ্ট হচ্ছে। ইফতারি নিয়ে আমাদের মতো গরিব মানুষের কোনো ভাবনা থাকে না। আগের বছর ছোলা-মুড়ি কিনে ইফতারি করেছি। এবার হয়তো এগুলো দিয়ে ইফতারি করা সম্ভব হবে না। আমাদের মতো মানুষের ভাত খেয়েই ইফতারি করতে হবে। বিএনপি বাজারে ইফতারি আইটেম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য ইফতারিতে ফলসহ অনেক কিছুই রাখতে পারছি না। সবকিছু কম করে কিনছি। গত বছর রমজান শুরুর আগে পুরো রমজানের জন্য ৫ কেজি আটা কিনেছিলেন। দাম বৃদ্ধির কারণে এবার ৩ কেজি কিনেছি। গত বছর এক কেজি চিনির দাম যেখানে ৭৫ টাকা ছিল, সেটি এবার বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। গত বছর শরবত ও অন্যান্য উপকরণ তৈরির জন্য ৩ কেজি চিনি কিনেছিলাম, এবার দেড় কেজি কিনেছি। এ ছাড়া রোজার জন্য গত বছর ৪ কেজি ছোলা কিনলেও এবার ৩ কেজি কিনেছি। এটা দিয়েই পুরো রোজার মাস চালাতে হবে। ইফতারে কোনো ফলের আইটেম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। 
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছর রমজান শুরুর সপ্তাহখানেক আগে ১ মাসের বাজার একবারে করলেও এবার এখনো পর্যন্ত করতে পারিনি। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এবার ইফতারিতে খেজুরের সঙ্গে ছোলা আর শরবত রাখার চিন্তা করেছি। অন্যবার ফল রাখতাম। এবার সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments