Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামছাত্রী নির্যাতনের তদন্ত প্রতিবেদন: অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

ছাত্রী নির্যাতনের তদন্ত প্রতিবেদন: অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। তাদের তদন্তে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের প্রমাণই শুধু মেলেনি, নির্যাতনের ধরন এবং নির্যাতনকারীদের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে পৈশাচিক বর্বরতা। উদাহরণস্বরূপ, নির্যাতনের সময় ছাত্রীটি যখন আর্তনাদ করছিলেন, তখন অট্টহাসি আর উল্লাসে মেতে উঠেছিল নির্যাতনকারীরা। ছাত্রীটি চিৎকার করলে তার মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পানি চাইলেও তাকে পানি না দিয়ে বর্বরোচিত আচরণ করা হয়।

জানা যায়, এই পৈশাচিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে বিব্রত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন খোদ তদন্ত কমিটির সদস্যরাও। ভুক্তভোগীর নির্যাতনের বর্ণনার সময় কিছু ঘটনা এমন ছিল যে, কমিটির পুরুষ সদস্যদের বাইরে বের হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন নারী সদস্য। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের নেত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ৩০৬নং কক্ষ থেকে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে গণরুমে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাকে গণরুমে নিয়ে যান আইন বিভাগের মীম ও ঊর্মি নামে দুই ছাত্রী। নির্যাতনের পুরো ঘটনায় তারাই ছিলেন সবচেয়ে উগ্র ভূমিকায়।

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনাটি কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই নবীন ছাত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে সরকারসমর্থিত ছাত্রসংগঠনের একাধিক নেত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি অভিযোগ আমলে নিয়ে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্ট তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নির্যাতনের এ ঘটনা ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে সংঘটিত ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের করুণ মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায়ও জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের কিছু নেতা। তবে ওই ঘটনার পর ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন নীরব ছিল। বর্তমানে আবারও দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠনটির বেপরোয়া তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নয় কর্মীর বিরুদ্ধে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম চারুকলা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও উঠেছে একই ধরনের অভিযোগ। এর আগে রাজধানীর ইডেন কলেজও সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল কথিত ছাত্রলীগ নেত্রীদের তাণ্ডবের কারণে। বস্তুত ছাত্রলীগ নামধারীদের বেপরোয়া ও উদ্ধত আচরণের কারণে দেশের অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের অন্তরায়। বিষয়টিতে অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিত ছাত্রী ন্যায়বিচার পাবেন এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হবে, এটাই কাম্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments