Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeজাতীয়চারপাশে কেউ নেই

চারপাশে কেউ নেই

আশ্রয়ের খোঁজে কানাডা দুবাই হয়ে আবার দেশে মুরাদ

কোনো দেশ প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় ঘরে ফিরেছেন সদ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান। কানাডার পর দুবাইয়ে প্রবেশের চেষ্টাও ব্যর্থ হলে রোববার বিকালে তিনি দেশে ফেরেন। এদিন বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ডা. মুরাদ হাসান। তিনি যে ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন, সেটির নম্বর ইকে ৫৮৬। বিমানবন্দরে নামার পর ট্রলি ব্যাগ নিয়ে তাকে একা একা বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সারতে দেখা যায়। তিনি অভ্যন্তরীণ লাউঞ্জ দিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে যান। এ সময় তার কাঁধে ঝুলানো ছিল সাইড ব্যাগ। পরনে ছিল ব্লু জিন্সের প্যান্ট, কালো মাস্ক, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা এবং ফুল স্লিপ হুডি। বিমানবন্দরে অবস্থানকালীন তার মাথা এবং পুরো মুখমণ্ডল ছিল ঢাকা। তিনি ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।

জানা যায়, বিমানবন্দরে নামার পর ডা. মুরাদ হাসানকে প্রথমে ইমিগ্রেশন অফিসে নেওয়া হয়। সেখানে ইমিগ্রেশন কাজ শেষে তিনি আসেন ভিআইপি লাউঞ্জে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিটে টার্মিনাল-২ (ভিআইপি গেটের পাশে) দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। পরে তিনি উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় উঠেন বলে জানা যায়।

এর আগে রোববার সকালেই এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮২ নম্বর ফ্লাইটে দুবাই থেকে তার ঢাকায় পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু ওই ফ্লাইটে তিনি আসেননি। সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটের ওই ফ্লাইটে তার আসার খবরে সাংবাদিকরা ভোর থেকেই ভিড় করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। কিন্তু নির্ধারিত বিমানটি অবতরণ করলেও এই ফ্লাইটে ডা. মুরাদ হাসান আসেননি। তবে ওই সময় ডা. মুরাদ হাসানকে গ্রেফতারের দাবিতে বিমানবন্দরের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় তারা নানা ধরনের স্লোগন দেন। একপর্যায়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার এসআই সাজ্জাদ শাকিল যুগান্তরকে বলেন, কিছু লোক সড়কে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।

বিক্ষোভকারীরা জানান, ডা. মুরাদ হাসান আমাদের মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে কটূক্তি করেছে। তার অনেক দুর্নীতি আছে। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

সূত্র জানায়, কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ডা. মুরাদ। কিন্তু সেই চেষ্টায়ও ব্যর্থ তিনি। এ কারণে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বিতর্কিত এই রাজনীতিক। ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তার কাছে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট চাওয়া হয়। কিন্ত তিনি তা দেখাতে পারেননি। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়। পরে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। দুবাইয়ে নামার পর তিনি ভিসা সংগ্রহ করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ-সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই দিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ডিসেম্বর তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments