Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামগণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক বিভক্তি ও বিপদের আশঙ্কা

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে রাজনৈতিক বিভক্তি ও বিপদের আশঙ্কা

জামালউদ্দিন বারী 

প্রায় সব দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ বাহিনীকে কাজ করতে হয়। সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে কর্মরত এসব বাহিনীর কর্মকাণ্ড সব সময়ই আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে। বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকাণ্ডে এক ধরণের স্থবিরতা এবং পুলিশ সদস্যদের একটি শ্রেণীর মধ্যে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে একটা সময় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠন করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে র‌্যাব গঠিত হওয়ার পর দেশের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও রাঘব বোয়াল দস্যুদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও আশার সঞ্চার করেছিল। র‌্যাব গঠনের গোড়ার দিকে সেনা সদস্যদের নিয়ে গঠিত যৌথ বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি’র বেশ কিছু ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ক্যাডারও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিরাপদ, অপারেশন ক্লিনহার্ট এবং র‌্যাবের অভিযানের মধ্য দিয়ে সে ধারনার অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছিল। বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে অপারেশন ক্লিনহার্ট ও র‌্যাবের অভিযানে অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির ত্রাহি অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ ঔৎসুক্য বোধ করলেও সেসব অভিযানে হতাহতের ঘটনাগুলো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। তবে তখনো এসব অভিযানে ক্ষমাতাসীনদের রাজনৈতিক পক্ষপাত বা প্রতিহিংসার কোনো অভিযোগ উঠেনি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের দক্ষ ও সাহসী ভূমিকা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে পুলিশের অসাধু সদস্যদের মত এক সময় র‌্যাব বাহিনীতেও কিছু অসাধু ও বেপরোয়া দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণ সদস্যের কারণে এই বাহিনীর সাফল্য ও গৌরবগাঁথাকে এক সময় ম্লান করে দিতে শুরু করেছিল। নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়া থেকে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও আইনজীবীসহ ৭ জনকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম র‌্যাবের একশ্রেণীর অপরাধী সদস্যের তৎপরতা সম্পর্কে দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিলে সংঘটিত সেই ঘটনায় স্থানীয় বিচারিক আদালত অভিযুক্ত র‌্যাব কমান্ডার তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। মামলাটি হাইকোর্টে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে গত ৮ বছরেও সে মামলার রায় বাস্তবায়িত হয়নি।

কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান আইনগত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে এমন সুযোগ না থাকলেও তথাকথিত ওয়ার অন টেররিজম এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটির নামে বিশেষ নিরাপত্তা আইনের নামে তার ব্যত্যয় দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বর্ণবাদী বৈষম্যের অনেক নজির দেখা গেছে। যদিও বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীর নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে র‌্যাব গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। সেসব প্রয়োজনীয়তার সাথে দেশীয় ও আন্তজার্তিক বাস্তবতারও নিবিড় যোগসাজশ ছিল। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ওয়ার অন টেররিজমের সাথে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশও যুক্ত হয়েছিল। এতদিনে এটা পরিষ্কার যে, ওয়ার অন টেররিজম ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একটি ইন্টারন্যাশনাল হোক্স বা গোপন অভিসন্ধিমূলক মতলবি তৎপরতার অংশ। সে সময় ইরাক-আফগানিস্তানের মত দেশগুলোতে ন্যাটোর সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে আল-কায়েদা বা আইএস’র তৎপরতা বা উত্থানের আশঙ্কা ও প্রচারণা চালিয়ে দেশে দেশে পশ্চিমা বাহিনীর সহায়ক বাহিনী গড়ে তোলা বা বিশেষ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ দেখা যায়। শত শত বিচারহীন হত্যাকাণ্ড, ফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স বা গুম ও ক্রসফায়ারের মত ঘটনার সাথে র‌্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি র‌্যাবের সাবেক-বর্তমান ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন র‌্যাব সৃষ্টির পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। তার এই দাবি হয়তো তাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে নিজেদের জনপ্রত্যাশা, জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সরকার এবং সরকারি বাহিনীর। সে ক্ষেত্রে অন্যদের উপর দায় চাপানোর সুযোগ খুবই ক্ষীণ। ভুল তথ্য ও ভুল নীতির কারণে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইরাক-আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়ে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগসহ গুম-খুনের অভিযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আছে। তবে সেসব ক্ষতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের পেছনে সে দেশের ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন বা কোনো বাহিনীর সদস্য বা কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে গুম-খুনে জড়িত হওয়ার কোনোঅভিযোগ নেই। দেশের পুলিশ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে নাগরিকদের এমন অভিযোগ বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে ভারত-মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম বিদ্বেষী পুলিশি দমন-পীড়ন এবং এথনিক ক্লিনজিংয়ের আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিত করে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারানোর অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়, আগের ধারাবাহিকতায় অনেকটা পাতানো খেলার মত এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদলের আসনে বসানো হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে যখন দেশি-বিদেশি কুশীলবরা আরো তৎপর হতে শুরু করেছে, তখন জাতীয় পার্টির দু’একজন সংসদ সদস্য বিরোধীদলের সাংসদের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। খুব গৌণ সংখ্যক সদস্য নিয়ে নির্জীব বিএনপি’র হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানার মত দু’একজন সংসদ সদস্যকে মাঝে মধ্যেই সংসদে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিতে দেখা গেছে। এবার জাতীয় সংসদে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারিকে সংসদের চলতি অধিবেশনে একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী, প্রয়োজনীয় ও বাগ্মিতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে আলোড়ন তুলতে দেখা গেল। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নোত করা, প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতায় উন্নীত করা সর্বোপরি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব সংকট মোকোবেলার প্রত্যয় ও প্রত্যাশা ফুটে ওঠায় তার বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত ৩১ জানুয়ারী ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় শামীম পাটোয়ারীর বক্তব্য নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। র‌্যাবের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে সৃষ্ট রাজনৈতিক বিতর্ক সামনে রেখে এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অনিবার্য বাস্তবতা অন্যথায় কি ঘটতে পারে সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি এক সময় বিশ্বের চর্তুথ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভেনেজুয়েলার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চরম পরিনতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি সরকারের শীর্ষ কিছু ব্যক্তিত্বের দায়িত্ব জ্ঞানহীন, বালখিল্য কথাবার্তা ও জাতির রাজনৈতিক অনৈক্যের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে আবারো সবাইকে সতর্ক করেই তিনি থেমে থাকেননি। তিনি সমুহ বিপদ থেকে উত্তরণের পথও দেখিয়েছেন। সামাজিক প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝা যায়, তার সব বক্তব্যের সাথে সবাই একমত হতে না পারলেও গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যমত্যের প্রশ্নে তার বক্তব্য নেটিজেন ও সাধারণ মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়। বিশেষত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইন্ডেমনিটি দেয়া হলে তার বিরূপ ফল পুরো জাতিকে ভোগ করতে হয়।

দলীয় লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুযোগ থাকায় ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত হয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই। একইভাবে র‌্যাব-পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ তদন্ত ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন করার আইনগত ক্ষমতা দেশের মানবাধিকার কমিশনের নেই। গত বছর ডিসেম্বরে নিজ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এ তথ্য জানিয়ে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন। দুর্নীতিদমন কমিশন এখনো ক্ষমতাসীনদের জন্য অনেকটাই নখদন্তহীন বাঘের ভূমিকা পালন করে চলেছে। র‌্যাব, পুলিশের মত দুদককেও কখনো কখনো বিরোধিদলের নেতাকর্মী দমনের বিশেষ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হওয়ার অভিযোগ শোনা গেছে। এসব অভিযোগের সুযোগ তারাই সৃষ্টি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আইনগত ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা না থাকলে গণতন্ত্র থাকে না, রাষ্ট্র হয়ে পড়ে দুর্বল ও অকার্যকর। আমলাতন্ত্রসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর অনিরপেক্ষ রেখে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব। এ কারণেই এক সময়ের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ভেনিজুয়েলা বা শৃলঙ্কা আজ শক্তিহীন দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। অনেক সম্ভাবনা সত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কয়েকটি শ্রমবাজার ও গার্মেন্ট রফতানি বাজারের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। অর্থপাচার বন্ধ করার পাশাপাশি রেমিটেন্স ও বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, বাংলাদেশ চলবে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন ইচ্ছায়। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জাতীয় স্বার্থের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মেনিফেস্টো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারহীন হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক দমনপীড়ন ও মামলাবাজি বন্ধ করতে হবে। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা এখনো দাঁত কেলিয়ে হাসে। গত সোমবার মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার দুই প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। আইনের শাসন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির আপবাদ ঘুচাতে আইনী প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ে এদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে।

কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থে বা একপেশে মতাদর্শে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা চলতে পারে না। হঠাৎ বা আকস্মিক উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে চলবে প্রতিটি সাংবিধানিক ব্যবস্থায় তারও দিক নির্দেশনা থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তির দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধের প্রতি কমিটমেন্ট রাষ্ট্রকে অনেক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। আজকে মিয়ানমারে যে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, নাগরিক সমাজের ভূমিকা এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মানুবর্তিতা কিছুটা অবশিষ্ট থাকায় প্রবল হিন্দুত্ববাদি সাম্প্রদায়িকতা সত্বেও ভারতে সে রকম বিপর্যয় এখনো দেখা দেয়নি। উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতা চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার মূল কারণ এখানকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বাজার ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে এসেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য্য শর্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণীত হয়নি। গত এক দশকে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত সংলাপে সংসদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে চলতি সংসদ অধিবেশনে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবিত একটি আইন চুড়ান্ত হয়েছে। তবে প্রধান বিরোধিদল বিএনপিসহ নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়াই যে আইন গৃহিত হতে চলেছে, তা এখন পর্যন্ত বিতর্কের গ্যাড়াকলে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিগত ৫০ বছরেও এই প্রয়োজনীয় আইনটি না হওয়া যেমন সব দলের ব্যর্থতার দায় আছে। তবে একটি মন্দ বা একপেশে আইনের চেয়ে আইনের অনুপস্থিতি সম্ভবত মন্দের ভাল। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যমত্য গড়ে তোলা এখন নানা কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সদিচ্ছা বা গ্রাহ্য করার মত কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজব্যবস্থা এখন একটি সুবর্ণ সম্ভাবনা ও সমুহ বিপর্যয়ের ক্রান্তিকালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমেই কেবল এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments