Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মখোদার রহমতে সিক্ত হোক আমাদের জীবন

খোদার রহমতে সিক্ত হোক আমাদের জীবন

মহান আল্লাহর অশেষ রহমত পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে। তিনি রহমতের বিস্তৃতি সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন, ‘আমার রহমত প্রতিটি বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে।’ (সূরা আ’রাফ : আয়াত : ১৫৬)।

তাঁর রহমতের ফল্গুধারা থেকে কেউই বঞ্চিত নয়। তাঁর অশেষ রহমতের সান্নিধ্য লাভ করা সব মুমিনের একমাত্র প্রত্যাশা। রহমত মুমিন জীবনকে আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত করে তোলে। তাই তো যে বান্দা রহমত লাভে ধন্য হয়, সে তার জীবনকে মহান প্রভুর জন্য উৎসর্গ করে।

রহমতের বিপরীতে হতাশা ব্যক্তির জীবনকে বিষিয়ে তোলে। হতাশা তাকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর কুদরত থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়।

পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে, ‘মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না। কোরআনে বর্ণিত ঘটনা। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হজরত ইবরাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ?! কিসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে।

আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হজরত ইবরাহিম (আ.) তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে?’ (সূরা হিজর : আয়াত : ৫৩-৫৬)।

রহমতের আধার আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে বান্দাদের কখনোই নিরাশ না হতে বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, মনে রেখ, একমাত্র কাফেররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যায়।’ (সূরা ইউসুফ : আয়াত : ৮৭)।

মুমিন বান্দাহ যতই পাপাসক্ত হোক না কেন, যদি আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি তাদের রহমতের মাধ্যমে ক্ষমা করার আশার বাণী শুনিয়েছেন। আল কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ‘সে দিন যার ওপর থেকে আজাব দূর করা হবে, সুতরাং আল্লাহ তার ওপর রহমত করেছেন, ইহাই স্পষ্ট সফলতা।’ (সূরা আল আনআম : আয়াত: ১৬)।

এ ছাড়া যারা কাফের তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি মিথ্যারোপকারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, ‘সুতরাং যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চায়, তাহলে বলে দাও যে, তোমাদের প্রতিপালক সুবিস্তৃত রহমতের অধিকারী এবং তাঁর আজাবকে গোনাহগারদের ওপর হতে ফেরানো যাবে না।’ (সূরা আল আনআম : আয়াত: ১৪৮)।

পবিত্র কুরআন মজিদে মহান আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের রহমত লাভ ও ক্ষমা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করার বিষয়ে নির্দেশনা এভাবে দিয়েছেন বলো, হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই দয়ালু (সূরা মুমিনূন : আয়াত : ১১৮)।

করুণার আধার আল্লাহপাকের রহমত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) অসংখ্য হাদিস বিদ্যমান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যখন মাখলুক সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন, একটি লিপি লিখলেন যা তাঁর কাছে তাঁর আরশের ওপর আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধ অতিক্রম করেছে’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৪)।

আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর একশ রহমত রয়েছে, যা থেকে একটি মাত্র রহমত তিনি জিন, মানুষ, পশু ও কীটপতঙ্গের মধ্যে নাজিল করেছেন। এ দ্বারাই তারা একে অন্যকে মায়া করে। এর মাধ্যমেই একে অন্যকে দয়া করে এবং এর মাধ্যমেই ইতর প্রাণীরা তাদের সন্তানদের ভালোবাসে। বাকি নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামতের দিনের জন্য রেখে দিয়েছেন; যা দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের প্রতি রহমত করবেন’। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৫)।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যদি মুমিন জানত আল্লাহর কাছে কী শাস্তি রয়েছে, তাহলে তাঁর জান্নাতের আশা কেউ করত না। আর যদি কাফের জানত আল্লাহর কাছে কী পরিমাণ দয়া রয়েছে, তবে কেউ তার জান্নাত হতে নিরাশ হতো না’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৬৭)।

পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিসগুলোর পর্যালোচনায় আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, একমাত্র রহমত লাভই মুমিন জীবনের প্রত্যাশা। কেননা রহমতের বারিতে সিক্ত মুমিন বান্দারাই আল্লাহপাকের ক্ষমা, প্রতিদান ও সফলতা লাভে ধন্য। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাঁর করুণা লাভের নিমিত্তে রহমতের ফল্গুধারা, জান্নাতের সুশীতল ছায়া ও অতুলনীয় নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments