ডেটলাইন ১৬ই জানুয়ারি
দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। হিসাবনিকাশে ব্যস্ত ভোটাররা। নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা চারপাশে। কেমন ভোট হবে? কেমন হবে ভোটের দিনের পরিবেশ। অতীতে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনের যে চিত্র দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জে কী তারই অবতারণা হবে নাকি নতুন এক ইতিহাস হবে বন্দরনগরী। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ বয়ান আলোচিত সারা দুনিয়ায়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই ‘খেলা হবে’ মাত করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।সিটি নির্বাচনের আগে এবারো শামীম ওসমান বলেছেন, ১৬ তারিখ ‘খেলা হবে’। খেলাটি কি তা অবশ্য খোলাসা করেননি তিনি। তাই জনমনে প্রশ্ন ১৬ তারিখ কী খেলা হচ্ছে? নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোটের উৎসব হবে নাকি ভিন্ন কোনো খেলা হবে- এমন প্রশ্ন এখন ভোটারদের মাঝে। নগরীর বিভিন্ন চায়ের দোকানের আড্ডায় এখানকার ভোটের চিত্র অনেকটা এভাবেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। তাদের ভাষ্য- ভোটের দিনের আগে কোনোকিছু নিয়ে এখনই বলে দেয়া সম্ভব নয়। কারণ আগের দুটি নির্বাচনেও ‘কারচুপির’ অভিযোগ রয়েছে। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে কিনা- এটাই এখন ‘মুখ্য’ বিষয়। যদিও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাসিক নির্বাচনে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। কোনো সহিংসতা বা কারচুপির সুযোগ নেই। এ পর্যন্ত নির্বাচনের আলামতও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে সংঘাত সহিংসতার কোনো অভিযোগ আসেনি। প্রধান দুই প্রার্থীর কথার লড়াইয়ে যদিও কিছুটা উত্তাপ বেড়েছে। অনেকে বলছেন, এটি নির্বাচনের সৌন্দর্য।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো শঙ্কা নেই। অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
চাষাঢ়া মোড়ে কথা হয় মুদি দোকানি সালাম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন পরিস্থিতি গতবারের তুলনায় এবার ভিন্ন। গেলবার সেলিনা হায়াৎ আইভী বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। এটি আগে থেকে বোঝা যাচ্ছিল। এবার দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের সংকট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আইভীর ভাগ্যে কী জুটবে তা বলা মুশকিল।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা খায়রুল কবির বলেন, আইভী- তৈমূরের শোডাউন দেখে বোঝার উপায় নেই- কী ঘটতে যাচ্ছে নির্বাচনে। দুজনের নির্বাচনী প্রচার জনসমাবেশ প্রায় একই রকম। আওলাদ হোসেন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। ভোটারদের যোগ্য প্রার্থী বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ততটা খারাপ হয়েছে বলা যাবে না। তবে সামনের দিনগুলো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও তাদের বাড়ি তল্লাশি চালানো হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। তবে প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে- তারা যেন নিরপেক্ষ আচরণ করে। এখানে যাতে নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অব্যাহত থাকে। ১২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোলাইমান হোসেন। পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। সোলাইমান বলেন, নির্বাচনের ফলাফলে কোনো চমকপ্রদ ঘটনা ঘটবে কিনা, তা বলা না গেলেও নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক, মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারুক- এটাই এখন আমাদের চাওয়া। এদিকে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (প্রতীক হাতি) এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, পুলিশ নৌকার পক্ষের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, তাদের বাড়িতেও যায়নি। অথচ আমার সিদ্ধিরগঞ্জের প্রধান সমন্বয়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আমার লোকজনের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তারপরও যদি বলা হয় আমার লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে না সেটা আপনারাই বিবেচনা করে দেখবেন। তৈমূর বলেন, যারা নারায়ণগঞ্জের সচেতন জনগণ, যারা শহরকে নিয়ে ভাবেন, এই ১৮ বছরের ক্ষোভ থেকে যারা অবসান চান তারা সবাই আন্তরিকভাবেই এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আমি আশা করবো নির্বাচন কমিশন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে কাজ করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেবে। নির্বাচনে যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। জনগণ যেন ভোট দিতে পারে এবং কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং যেন না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বিঘ্নে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক এটি তার প্রত্যাশা।