Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeধর্মক্ষমা শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে

ক্ষমা শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে

মানুষকে বলা হয় সামাজিক জীব। সমাজে চলতে গিয়ে নানান প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় আমাদের। গরম-নরম সব প্রকৃতির মানুষের বসবাস আমাদের চার পাশে। কখনো কারো কারো আচার-আচরণে আমরা কষ্ট পাই। ফলে কেউ প্রতিশোধ নিতে সহজেই তর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার কেউ এসব এড়িয়ে ক্ষমার পথে হাঁটে। কারণ ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। মহৎ মানুষই ক্ষমা করতে পারে। খুব কম মানুষ আছে—যারা অপরের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রতিশোধের চেয়ে ক্ষমার স্বাদ অনেক অনেক বেশি। প্রতিহিংসা শুধু নিজেকেই ধ্বংস করে না, বরং একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে অন্তরায়ও বটে। হিংসার অনলে না পুড়ে যারা জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করে, তারাই বুদ্ধিমান।

আল্লাহর অনুসরণ

ক্ষমাকারী ব্যক্তি ক্ষমার মাধ্যমে মূলত আল্লাহর বিশেষ একটি গুণের অনুসরণ করে। কারণ, সকল মানুষই ভুল করে থাকে। এভাবে যদি ভুলের কারণে শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার প্রচলন হয়ে যায়, তাহলে কেউই কারো থেকে রেহাই পাবে না। পৃথিবীতে একে অপরের যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আছে—তা ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ মানুষদের তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করলে, ভূপৃষ্ঠে কোনো প্রাণীকেই তিনি রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় এসে যাবে, তখন তো আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৪৫)

সম্মান বৃদ্ধি হয়

ক্ষমার মাধ্যমে ক্ষমাকারী তার নিজের সম্মান বৃদ্ধি করে তোলে। মানুষের দিলে ও সমাজে সে অনন্য এক মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদ কমে না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)

ক্ষমার বিনিময় আল্লাহ নিজে দেবেন

ক্ষমার বিনিময় একমাত্র আল্লাহ তাআলা দেবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা। কারণ ক্ষমাকারী দুনিয়াতে ক্ষমার মাধ্যমে সংশোধনের পথ উন্মোচিত করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপস করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে আছে; নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪০)

শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে

ক্ষমা এমন এক জিনিস, যে তার আজন্ম শত্রু, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শত্রুকেও আপন বন্ধুতে পরিণত করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উত্কৃষ্ট; ফলে আপনার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩৪)

আল্লাহর ক্ষমা লাভ হয়

এর চেয়ে বড় লাভ আর কী হতে পারে যে আমি যদি কাউকে ক্ষমা করে দেই, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা আমার বিভিন্ন অপরাধ মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্তকে ও আল্লাহর রাস্তায় হিজরতকারীদের কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদের ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।’ (সুরা নুর, আয়াত : ২২)

জান্নাতের অধিকারী হয়

যারা প্রতিশোধ নেওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দেয় তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন বিশাল জান্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তীব্রগতিতে চল নিজেদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩, ১৩৪)

অনাবিল সুখ

ক্ষমাকারীকে আল্লাহ তাআলা ডাগর চোখবিশিষ্ট হুর দেবেন। যাদের চোখ হবে হরিণের মতো অপরূপ। যার রূপ ও সৌন্দর্য চাঁদ ও সূর্যের মতো উজ্জ্বল হবে। সাহল ইবনে মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তাঁর রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংবরণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সকল সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে ডেকে নেবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য থেকে তার পছন্দমতো যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৭)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments