Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামক্যানসার সম্পর্কিত তথ্যগুলো মানুষকে জানাতে হবে

ক্যানসার সম্পর্কিত তথ্যগুলো মানুষকে জানাতে হবে

 ডা. আরমান রেজা চৌধুরী 

৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল-এ তিন বছর ‘CLOSE THE CARE GAP’-এই প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোলের (ইউআইসিসি) উদ্যোগে বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০২২ সালে এ মূল প্রতিপাদ্যের নেপথ্যে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল এ গ্যাপ বা দূরত্ব কমানোর জন্য এর পেছনের কারণগুলো কী তা খুঁজে দেখা।

এতে দেখা গেছে, ক্যানসার চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি প্রধান অন্তরায়। পাশাপাশি ক্যানসার চিকিৎসা করতে গিয়ে যে সামগ্রিক খরচ তা অধিকাংশেরই নাগালের বাইরে। ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা, বিশেষ করে যারা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করে, তারা ক্যানসার সেবার কথা ভাবলেই কোনো না কোনোভাবে একটা বাধার সম্মুখীন হয়। আর্থিক অসচ্ছলতা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব এর অন্যতম। এমনকি পুরুষের চেয়ে নারীরা কোনো না কোনোভাবে এ ক্যানসার সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলিত হয়।

অথচ কোনো রোগ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ এসব দেখে হয় না। কিন্তু রোগের চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা, ধনী-দরিদ্র ইত্যাদি নানা প্রতিকূলতা সামনে চলে আসে। তাই ২০২২ সাল ছিল সবার মাঝে ক্যানসার চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার লড়াইয়ের নেপথ্যে যে বাধাগুলো রয়েছে, তা খুঁজে বের করার একটা প্রচেষ্টা।

এ বছর ইউআইসিসি বিষয়টি অন্যভাবে সাজিয়েছে। প্রতিপাদ্যকে সাফল্যমণ্ডিত করতে এবারের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘UNITIGN OUR VOICES AND TAKIGN ACTION’, অর্থাৎ আমরা ২০২২ সালে যে সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করেছিলাম, এখন সেই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে আমাদের নিজেদের কথা বলতে হবে, মানুষকে এ সমস্যাগুলোর কথা জানাতে হবে, এ সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে সবার মাঝে কথাগুলোকে ছড়িয়ে দিতে হবে। মোট কথা, এ সমস্যার সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ক্যানসারের চিকিৎসাসেবা প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনার মাধ্যমেই মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষকে এ চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে, এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। এলাকাভিত্তিক যারা বিত্তবান রয়েছেন, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এত বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর ক্যানসারের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

সে ক্ষেত্রে এলাকার যারা গণ্যমান্য, বিত্তবান ব্যক্তি, তারা যদি নিজ নিজ এলাকায় ক্যানসার চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেন বা এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন, তাহলে অনেক মানুষকেই আর দূরদূরান্তে গিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য দৌড়াতে হবে না। বরং তারা তাদের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে। এতে তাদের খরচ যেমন অনেকটাই কমে যাবে, তেমনি চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়, তা-ও দূর করা সম্ভব হবে।

এ দেশে যদিও প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষাধিক নতুন রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, তারপর আজও অধিকাংশ মানুষ জানে না বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থাটা কী। মানুষ জানে না কোন কোন ধরনের ক্যানসারের জন্য কোন কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, রোগ নির্ণয় করতে গেলে কী ধরনের পরীক্ষা করতে হয় কিংবা রোগের পর্যায় কোন কোন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায়।

ক্যানসারের চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো পরিষ্কার ধারণা রাখে না। ফলে দেখা যায়, তারা রোগের চিকিৎসার ব্যাপারে বা রোগের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে চায় না। কাজেই আমাদের কথা বলতে হবে, প্রিন্ট মিডিয়া-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতা নিয়ে নানাভাবে এ বার্তাগুলো সবার মাঝে পৌঁছে দিতে হবে যে, আমাদের দেশেও ক্যানসার রোগ নির্ণয়ের এবং এ সংক্রান্ত যে চিকিৎসা তা অনেক জায়গাতেই হচ্ছে।

ক্যানসারের চিকিৎসার প্রধান তিনটি ধারা হচ্ছে সার্জারি অর্থাৎ অপারেশন, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। সুখের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশেই এ তিনটি চিকিৎসার সব চিকিৎসা অনেক জায়গাতেই বিদ্যমান। শুধু আমাদের আলোচনা করে, কথা বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানাতে হবে কোথায় কোথায় এ চিকিৎসাসেবাগুলো বিদ্যমান। তাহলেই মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সঠিক স্থানে যেতে পারবে।

যদিও বলছি, আমাদের দেশেও এ ক্যানসারের চিকিৎসাসেবাগুলো অনেক জায়গাতেই বিদ্যমান, কিন্তু বেশির ভাগ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র ঢাকাকেন্দ্রিক অর্থাৎ রাজধানীকেন্দ্রিক। তাই আবারও আমাদের দেশের বিত্তবানদের, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় স্বল্প পরিসরে কিংবা বৃহৎ পরিসরে ক্যানসার চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এর ফলে আমরা অনেক মানুষকে খুব সহজেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে ভালো করে তুলতে পারব।

আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে ক্যানসার রোগ এবং এর ভয়াবহতা ও এর চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে এ বার্তাগুলো পৌঁছাতে পারব। বিশ্ব ক্যানসার দিবস সফল হোক। আসুন, স্বপ্ন দেখি একটি ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments