Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeধর্মকোরআনে বিজয় নামের সুরা

কোরআনে বিজয় নামের সুরা

পবিত্র কোরআনের ৪৮ নম্বর সুরার নাম ফাত্হ। আরবি ফাত্হ শব্দের অর্থ বিজয়। এই সুরায় মহান আল্লাহ মুমিনদের সুনিশ্চিত বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন বলে সুরার নামকরণ ফাত্হ হয়েছে। সপ্তম হিজরিতে মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার পর সুরাটি অবতীর্ণ হয়। হিজরতের পরে অবতীর্ণ হওয়ায় সুরা ফাত্হ একটি মাদানি সুরা হিসেবে গণ্য।

সুরা নাজিলের পরিপ্রেক্ষিত : আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, সপ্তম হিজরির জিলকদ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪ শ সাহাবির একটি দল নিয়ে বায়তুল্লাহ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওনা করেন। কিন্তু মক্কার মুশরিকরা তাতে বাধা প্রদান করে। অবশেষে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঐতিহাসিক এই চুক্তি বাহ্যত মুসলিম স্বার্থবিরোধী ছিল। ফলে বেশির ভাগ সাহাবি মন খারাপ করেন। চুক্তি অনুসারে মুসলিম কাফেলা যখন ওমরা পালন না করে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন আল্লাহ মুমিনদের অনাগত দিনে মহাবিজয় দানের সুসংবাদ প্রদান করেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

বিজয় দ্বারা উদ্দেশ্য : বেশির ভাগ তাফসিরবিদের কাছে এখানে বিজয় দ্বারা ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় উদ্দেশ্য। তবে বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, ‘মক্কা বিজয়কে তোমরা বিজয় মনে করছ। মক্কা বিজয়ও একটি বিজয়। কিন্তু হুদাইবিয়ার দিনে বাইআতের রিদওয়ানকে আমরা প্রকৃত বিজয় মনে করি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১৫০)

মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা ফাত্হ পাঠ করতে করতে পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০৩৪)

মুমিনদের জন্য আল্লাহর পুরস্কার : সুরা ফাতেহর ২৯টি আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের জন্য একাধিক পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন—

১.   প্রথম আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের সুস্পষ্ট বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

২.   দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর অতীত ও ভবিষ্যতের যাবতীয় পাপ মার্জনার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এই ঘোষণা মূলত তাঁকে সম্মানিত করার জন্য দেওয়া হয়েছে। কেননা মহানবী (সা.) ছিলেন যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত।

৩.   তৃতীয় আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের জন্য সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন।

৪.   চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের প্রশান্তি দানের ঘোষণা দিয়েছেন।

৫.   পঞ্চম আয়াতে তাদের জন্য জান্নাতের অঙ্গীকার করেছেন।

৬.   ১৯তম আয়াতে আল্লাহ গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন।

৭.   ২৭তম আয়াতে আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর স্বপ্ন তথা বায়তুল্লাহ জিয়ারতের অবকাশ দানের অঙ্গীকার করেছেন।

৮.   ২৮তম আয়াতে আল্লাহ সব মতাদর্শের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ছাড়া সুরা ফাত্হ-এ আল্লাহ অবিশ্বাসী, মুনাফিক ও দুর্বল ঈমানের অধিকারীদের নিন্দা করেছেন। মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।

ঐতিহাসিক বাইআতে রিদওয়ান : হুদায়বিয়ার প্রান্তরে মুসলিম কাফেলা অবস্থানরত অবস্থায় উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর শাহাদাতের সংবাদ এলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈমানি স্পৃহায় উদ্বেলিত হন এবং সত্যের পথে আমৃত্যু সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করেন। সুরা ফাতেহর ১৮তম আয়াতে আল্লাহ সাহাবিদের ঈমানি স্পৃহা ও সত্যের পথে সংগ্রামের অঙ্গীকার গ্রহণের প্রশংসা করে বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করল। তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন। তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments