Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মকুরবানি একটি মহান ইবাদত

কুরবানি একটি মহান ইবাদত

মুসলিম মিল্লাতের জন্য কুরবানি একটি মহান ইবাদত। এর মাধ্যমে কুরবানিদাতা আল্লাহ পাকের কুরবত ও নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয় এবং একই সাথে নিজের আত্মা সম্পনের পথও সহজতর করে তুলতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে কুরবানির আমলটিকে বিশ্লেষণ করে ইরশাদ করেছেন : আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের উপাস্য তো একমাত্র উপাস্য, সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও। (সূরা হজ্জ : ৩৪)। এই আয়াতে কারীমায় কুরবানি বোঝাতে ‘মানসাক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, আরবী মানসাক ও নুসুক শব্দ তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা : (১) জন্তু কুরবানি করা, (২) হজের ক্রিয়কর্ম আদায় করা এবং (৩) ইবাদত-বন্দেগী করা। আল কুরআনে মানসাক ও নুসুক শব্দদ্বয় উপরোক্ত তিনটি অর্থে বিভিন্ন আঙ্গিকে মোট সাতবার ব্যবহৃত হয়েছে। উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় এই তিনটি অর্থই গ্রহণ করা যায়।

যেমন (এক) ইমাম মুজাহিদ (রহ.) এবং কতিপয় তাফসিরকারক মানসাক শব্দের অর্থ করেছেন কুরবানি। এতে করে আয়াতের অর্থ দাঁড়াবে এই যে, উম্মতে মোহাম্মদীকে কুরবানির যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা কোনো নতুন ইবাদত নয়। বরং পূর্ববর্তী উম্মতগণকে ও কুরবানির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। (দুই) তাফসিরকারক ইমাম কাতাদাহ (রহ.) বলেছেন, মানসাক অর্থ হলো হজের ক্রিয়াকর্ম আদায় করা। এতদর্থে উল্লিখিত আয়াতে কারীমার অর্থ হলো হজের ক্রিয়াকর্ম যেমন উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপর আরোপ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও হজ ফরজ করা হয়েছিল।

(তিন) তাফসিরকারক ইবনে আরাফা (রহ.)-এর মতে মানসাক অর্থ হলো ইবাদত-বন্দেগী। এতদপ্রসঙ্গে উপরোক্ত আয়াতে কারীমার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, শুধু কেবল উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপরই ইবাদত-বন্দেগী আরোপ করা হয়নি। বরং পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও ইবাদত-বন্দেগী আদায় করা ফরজ ছিল। সময় ও কালের বিবর্তনে ইবাদত-বন্দেগীর পদ্ধতিতে কিছুটা পার্থক্য সকল উম্মতের মধ্যেই ছিল। কিন্তু ইবাদতের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সকলের মধ্যেই এক ও অভিন্ন ছিল।

প্রসঙ্গত, স্মরণ রাখা দরকার যে, আল্লাহপাকের মনোনীত ও পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে হযরত আদম (আ.)-এর আমলে এবং তা পরিপূর্ণতা ও চূড়ান্ত স্থিতিশীলতা লাভ করেছে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর মাধ্যমে। পরিপূর্ণ এই ইসলামী জীবনব্যবস্থার আর কোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হবে না। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত তা নিরঙ্কুশভাবে অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা এই দ্বীন ইসলামকে সকল ধর্মমতের ওপর বিজয়ী করবেন। এই আশ্বাসবাণী তিনি আল কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ইরশাদ হয়েছে : তারা (অবিশ্বাসীরা) তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেনÑ যদিও কাফিররা তা অপ্রীতিকর মনে করে। তিনিই আপন রাসূলকে (হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) কে) হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন এই দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের ওপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। (সূরা তাওবাহ : ৩২-৩৩)।

উল্লিখিত দু’টি আয়াতে কারীমার সারমর্ম হচ্ছে এই যে, আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আপন রাসূলকে হেদায়েত ও পথ নির্দেশনার উপকরণ কুরআনুল কারীম এবং সত্য দ্বীন ইসলাম সহকারে প্রেরণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, যাতে করে অপরাপর ধর্মের ওপর ইসলাম ধর্মের বিজয় সূচিত হয়। এই বিজয় অবশ্যম্ভাবী ও অবিসংবাদিত। তবে এই বিজয় লাভের সুসংবাদ ও প্রতিশ্রুতিগুলো অধিকাংশই অবস্থা, পরিবেশ ও কালানুপাতিক। এতদপ্রসঙ্গে হযরত মিকদাদ বিন মা’দিকারার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিশ্বনবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন : এমন কোনো কাঁচা ও পাকা ঘর পৃথিবীর বুকে থাকবে না, যেখানে ইসলাম প্রবেশ করবে না। সম্মানীতদের সম্মানের সাথে এবং লাঞ্ছিতদের সামনে লাঞ্ছনার সাথে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত যাদের সম্মানীত ও মর্যাদার অধিকারী করবেন, তারা ইসলাম কবুল করে ধন্য হবে। আর যাদের লাঞ্ছিত করবেন তারা ইসলাম গ্রহণ হতে দূরে সরে থাকবে, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত প্রজায় পরিণত হবে। (মোসনাদে আহমাদ)। আল্লাহ পাকের এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সাধিত হয় রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে শুরু করে গোটা দুনিয়ার ওপর প্রায় এক হাজারের অধিক বছর যাবত। আর এই প্রতিশ্রুতির দ্বিতীয় বার বাস্তবায়ন ঘটবে সাইয়্যেদেনা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমনের মাধ্যমে। যার আগমন অত্যাসন্ন।

মোটকথা, কুরবানি ইবাদতের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরবানির পশু যবেহের সময় তার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা এবং পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে মহান রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালন করা। এ জন্য আল্লাহ জাল্লা জালালুহু ইসলামী ইবাদতসমূহের সুন্দর সুন্দর কাঠামো দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। নামায, রোজা, হজ ও জাকাত ইবাদতসমূহ আন্তরিকতা ও মহব্বতসহ আদায় করতে হয়। বস্তুত আন্তরিকতা ও মহব্বত বর্জিত ইবাদত প্রাণহীন কাঠামো মাত্র।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments