বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকের চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা শুরু হয়। তবে তারুণ্যবেলা বা কিশোর বয়সে চুল ঝরে গেলে টেনশনটা অতিমাত্রায় চলে যায়। কিন্তু কিশোর বয়সেও এমনটি আজ প্রতিনিয়ত দেখা যায়। গবেষণা বলে, দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল ঝরলে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে এর থেকে বেশি পরিমাণ চুল পড়লে তা বিপদের কারণ হতে পারে। যদিও কিশোর বয়সে চুল পড়া কোনো শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়ে না। কারণ, কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্যই এ সময়ে চুল ঝরে যাওয়া শুরু হয়। যথাযথ যত্নে আবার একটা সময়ের পর বন্ধও হয়।বয়ঃসন্ধিতে কিশোরদের চুল পড়ার কারণ কী, তা যেমন জানতে হবে, ঠিক তেমনি সমাধানও জানা জরুরি।
হরমোন পরিবর্তন: কিশোরদের মূলত শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণেই সব থেকে বেশি চুল ঝরে। হরমোন পরিবর্তনের কারণে শারীরিক ও মানসিক অনেক ধরনের পার্থক্য দেখা যায়। হরমোনের কারণে মাথায় চুল কমে যাওয়া অনেকটা প্রাকৃতিকও বটে।
স্ট্রেস: বয়ঃসন্ধিতে কিশোরদের মধ্যে স্ট্রেস নেয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। ছোট ছোট বিষয়ে হঠাৎ করেই চিন্তা মাথায় ভর করে, যা চুল ঝরার অন্যতম কারণ। বেশি স্ট্রেসে মাথার স্ক্যাল্পে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। এতে চুল পড়তে শুরু করে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেলে মাথার ত্বকের কোষগুলো দুর্বল হয়ে যায়, কমে যায় রক্ত সঞ্চালনও, যা চুল ঝরার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ওষুধ: এ বয়সে ওষুধের বা স্টেরয়েড জাতীয় কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেক সময় চুল পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্রণ কমানো বা হতাশার জন্য যে ওষুধ খাওয়া হয়, তা অনেক সময় চুলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। আর যারা নিজে থেকে ওষুধ সেবন করেন তাদের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় চুল ঝরতে পারে।
পুষ্টির অভাব: এ বয়সে পুষ্টি চাহিদা থাকে সব থেকে বেশি। কিন্তু কোনো কারণে পুষ্টির ঘাটতি হলে তার প্রভাব পড়ে চুলে। ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২ ও ম্যাগনেশিয়ামের কমতি দেখা যায়। ফলে চুল প্রয়োজনীয় শক্তি পায় না ও গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরতে শুরু করে।
বেশি স্টাইলিং: কিশোরদের মধ্যে চুলে নতুন নতুন স্টাইল ও ফ্যাশন করার প্রবণতা বেশি। হেয়ার জেল, চুলে বিভিন্ন রকম তেল, স্প্রে স্টাইলিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া চুলে গরম তাপ দেয়া, রং করা ও চুল কাটার নানা রকম পদ্ধতি ব্যবহার করায় চুল বেশি বেশি ঝরে।
প্রতিরোধে করণীয়:
হরমোন সমস্যার চিকিৎসা: শরীরে হরমোনের অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে চুল পড়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। আবার অনেক সময় খাবার গ্রহণের জন্যও হরমোনে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ধীরে ধীরে চুল পড়ার সমস্যা কমে।
খাদ্য তালিকার পরিবর্তন: খাদ্য তালিকায় এমন ধরনের খাবার রাখতে হবে, যা পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। শরীরে কোনোভাবেই যেন ভিটামিনের ঘাটতি দেখা না দেয়, তা বুঝে খাবার নির্বাচন করা উচিত।
চুলে স্টাইলিং কমানো: চুলে অতিরিক্ত স্টাইলিং স্থায়ী ক্ষতিও করতে পারে। চুল সোজা, কোঁকড়া বা তাপ দিয়ে চুল কাটার পদ্ধতি সব থেকে বেশি ক্ষতিকর। স্টাইলিং এমন হওয়া উচিত, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এ ছাড়া চুলে নিয়মিত স্যাম্পু ব্যবহার, পরিষ্কার চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো, চুলে খুশকি থাকলে তা প্রতিরোধ করা, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা, নিয়মিত ঘুমানো, অতিরিক্ত টেনশন না করা ইত্যাদি কিশোরদের চুলঝরা প্রতিরোধে সহায়ক। এ ছাড়া কারও বংশগত টাক বা চুল ঝরার সমস্যা থাকলে, ত্বক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো।
লেখক: অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ) জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট।
চেম্বার: ২২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন-০১৭১২২৯১৮৮৭