সেদিন সারারাত কাটলো শাহজালাল বিমানবন্দরে। জায়গাটা পারত পক্ষে এড়িয়ে চলি। মানুষের বিদায়ের দৃশ্য দেখতে আমার কেমন যেন লাগে। বিদায় জানানোর ভেতর যেমন স্বপ্ন থাকে, তেমন চোখ ভারি করা দৃশ্যও থাকে। আন্তর্জাতিক টার্মিনালে অপেক্ষায় ছিলাম এক স্বজনকে স্বাগত জানাতে। তার কিছু আগে এক সৌদি ফ্লাইট আসে। যাত্রীরা বের হয়ে আসছেন। এক প্রবাসী দুই-তিনটা লাগেজ নিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে আসছেন। ডানে বামে তাকাচ্ছেন। কাকে যেন বারবার ফোন করছেন।
সম্ভবত ফোন ধরছে না ওই প্রান্ত থেকে কেউ।
অন্য যাত্রীদের স্বজনরা এসেছেন তাদের বিদেশ ফেরত স্বজনকে স্বাগত জানাতে। জড়িয়ে ধরছেন, কেউ আবেগে আপ্লুত হচ্ছেন প্রিয়জনকে বহুবছর পর কাছে পেয়ে।
কিন্তু সেই লোকটা চারপাশে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজতে লাগলেন অনবরত।
আবার নম্বর চেক করে করে ফোন করছেন।
তার সঙ্গে আসা অন্য প্রবাসীরা গাড়িতে করে ইতিমধ্যে রওনা দিয়েছেন যে যার বাড়ির দিকে। তিনি বারবার পায়চারি করছেন। কাউকে তার পাশে দেখা যাচ্ছে না।
কেটে গেল টানা চল্লিশ মিনিট। এক পর্যায়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে একটু দূরে মেঝেতেই বসে পড়লেন। চোখে মুখে হতাশা। কিছুক্ষণ পর তার কল এলো।
লোকটি বললেন, কই রে তোরা?
ও প্রান্ত থেকে কি বলল তাতো জানি না।
লোকটি বেশ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন, তোরা কেউ আমারে নিতে আইলি না।
কার লাইগা দেশে আইলাম রে… কাদের লাইগা এত কষ্ট করলাম। বলেই ফোন রেখে দিলেন। চোখ মুছলেন বোধহয়। কাছে গেলাম। ভাই আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?
লোকটা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন, কাকে আর খুঁজিরে ভাই। আমার কষ্টের ইনকামের টাকা ভালো লাগে কিন্তু আমাকে ভালো লাগেনি কারো। কথা শেষ না করেই লোকটা লাগেজের ট্রলি নিয়ে এলোমেলো হাঁটতে থাকলেন। হয়তো হিসাব মেলাচ্ছেন কার জন্য তিনি এতদিন বিদেশে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন। কি প্রতিদান পেলেন তিনি এই জীবনের এত কঠোর-কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে …