Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মকারবালা ট্র্যাজেডি: নিরপেক্ষতার জন্য গভর্নর পদ হারালেন যিনি

কারবালা ট্র্যাজেডি: নিরপেক্ষতার জন্য গভর্নর পদ হারালেন যিনি

নুমান ইবনে বাশির (রা.) দ্বিতীয় হিজরি সনে রবিউস সানি মাসে রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের আট বছর সাত মাস আগে জন্মগ্রহণ করেন। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের সময় তিনি আট বছরের বালক।

নুমান ইবনে বাশির (রা.) একজন সৌভাগ্যবান পিতার ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পরশেই বেড়ে ওঠেন। ফলে তাঁর জীবনে মুহূর্তের জন্যও কুফর-শিরকের আঁচড় লাগেনি।

বাচ্চা থাকতেই তিনি পিতার সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর দরবারে যাওয়া-আসা করতেন। ফলে বুঝ-বুদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঈমানের দৌলতে ধন্য হন। ধর্মীয় সংস্কৃতি ও বিধি-নিষেধের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে ওঠেন। ফলে শৈশবকালেই তিনি নামাজ-রোজা ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির প্রতি মনোযোগী হন। রাসুল (সা.)-এর আচার-আচরণ ও কার্যক্রমের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন। বাচ্চা-বয়সে যতটুকু সম্ভব হয়েছে, রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে উচ্চারিত হাদিস ও হিদায়াতি বাণী স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছেন। আর রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর সাহাবিদের থেকে ইলমে ওহির বিশাল  অর্জন করেছেন।

নুমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে ১১৪টি হাদিস বর্ণিত আছে।

নুমান ইবনে বাশির (রা.) মুয়াবিয়া (রা.)-এর অধীনে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। কিছুকাল কুফায়, কিছুকাল দিমাশকে, কিছুকাল হিমসে। মুয়াবিয়া (রা.) তাঁকে সর্বপ্রথম কুফার গভর্নর নিয়োগ করেন। প্রায় সাত মাস এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ৬০ হিজরির রজব মাসে ইন্তেকাল করেন মুয়াবিয়া (রা.)। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন পুত্র ইয়াজিদ। ইয়াজিদ আপামর মুসলিম জনসাধারণকে তার হাতে বাইআতের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মদিনার কতিপয় মহান সাহাবি—ইমাম হুসাইন (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-কে।

এদিকে কুফাবাসী ইয়াজিদের বাইআত অস্বীকার করে, হুসাইন (রা.)-কে খলিফা হিসেবে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ জন্য তারা ইমাম হুসাইনকে মদিনা থেকে কুফায় চলে আসার আমন্ত্রণ জানাল। অনেকেই হুসাইন (রা.)-এর পক্ষে অগ্রিম শপথও গ্রহণ করে নিয়েছিল।

এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতে নুমান কোনো সংঘাতে না গিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ইয়াজিদ-ভক্তরা পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে ইয়াজিদের কাছে পত্র পাঠাল সিরিয়ায়। তাদের বক্তব্য ছিল, নুমান ইবনে বাশীরের দ্বারা কুফার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না; প্রয়োজন মজবুত লোকের। তাই তারা ইয়াজিদের কাছে নুমানের অপসারণ এবং তাঁর স্থানে এমন একজন গভর্নরের নিয়োগ দাবি করল, যে হবে আপসহীন, কঠোর ও সংগ্রামী। বার্তা পেয়ে ইয়াজিদ নুমানকে কুফার গভর্নর পদ থেকে অপসারণ করে। তত্স্থানে বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে নিয়োগ দিল। উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ছিল স্বভাবজাত কঠোর ব্যক্তি।

এরপর ইয়াজিদ নুমান (রা.)-কে হিমসের গভর্নর পদে নিয়োগ করেন। এ পদে তিনি ইয়াজিদের মৃত্যু পর্যন্ত বহাল থাকেন।

৬৪ হিজরিতে খালিদ ইবনে খালিয়া নামে এক ব্যক্তির হাতে তিনি শহীদ হন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/২৪৪)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments