কবি কামাল চৌধুরীর ৬৬তম জন্মদিন ২৮ জানুয়ারি। জন্মদিনে বাংলা ভাষার বিশিষ্ট এই কবিকে শুভেচ্ছা।
যুদ্ধ
এই একটি গল্প সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে
তোমারও সীমানা জানা নেই
অস্ত্রের পরেও আমি গম রুটি নিয়ে যুদ্ধ করতে শিখে গেছি
কারণ যা ঘটবে, যা ঘটতে দেখেছি,
যা ইতিহাসে লেখা আছে সেখানে
তুমিও উদ্বাস্তু শিবিরের ছেলে
হয়তো পরের বছর তুমি আটলান্টিক পাড়ি দেবে
সমুদ্রে লংমার্চ শেষে যারা মরে যাবে তারাও সার্বভৌম নয়
যেখানে তটরেখা অস্পষ্ট, পতাকার রং মুছে যেতে যেতে
সেখানে লোনাপানির চিৎকার আছড়ে পড়ে
তিমিসমান ঢেউ
সেখানে বোমার শব্দে তড়িঘড়ি ফেলে আসা
সুটকেসের মতো তোমাকেও খুঁজে পাবেনা কেউ
কারণ তুমি পরিত্যক্ত বাড়ি, তুমি চুরমার তৈজসপত্র,
তুমি রক্তস্রোত, রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন শরীর-
তোমাকে তাড়িয়ে নিচ্ছে সীমান্তহীন ট্যাংক ও দানব
শস্যখেতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোমার মনে
পড়ছে ভাতের থালা, রুটি মাংস, দ্রাক্ষানিবাস
হয়তো-বা পাশের বাড়ির মেয়েটিকেও
যে তোমাকে সীমা অতিক্রম করতে দেয়নি কখনো…
অনুশীলন
তোমাকে লিখেছি আমি বারবার, পুনরুক্তি নেই
কলমের পাশে তবু প্রতিশব্দ অনুশীলনের
সাদাখাতা খুললেই রোদ ভেঙে নার্সিসাস আসে
তোমাকে খুঁজছি একা, প্রতিজন্মে, অচেনা মায়ায়।
শরীরে বারুদগন্ধ, ধ্বংসকাল, ভেঙে পড়ছে মেরু
হয়তো পরের দৃশ্যে পেয়ে যাবো গলিত তুষার
আমার কবিতা অস্ত্র, ধেয়ে আসছে ট্যাংকের বহর
নিরাপত্তা আমি দেবো, এ কবিতা ভূমি দখলের।
ভাষা ফের নম্র করি, যুদ্ধ নয়, অপেক্ষার ভাষা
আলো এসে ঠিকরে পড়ে, ধূলি লেখে অপূর্ণ সময়
সমস্ত পৃথিবী যদি পা-ুলিপি, আমিও মুকুটহীন,
একটি পঙ্ক্তি শুধু বেঁচে থাক, এই স্বপ্নে লিখি।
আশ্চর্য সমুদ্র তীরে তবু হাওয়াবালিকার ধুলো
যে ভিখিরি গান গায়, তার পাত্রে ঝাউ বিনিময়;
আমাকে উড়িয়ে নিলে, মনে হয় চাঁন্দের গাড়িতে
অনন্ত ভ্রমণগুচ্ছে এইপথ হারাতে এসেছি।
প্রেমনীতি
এই প্রেম রাজনীতি জানে
এই প্রেম জীবনে মরণে
লিফলেট বিলি করে যাবে
রাতজাগা চাঁদের কিরণে।
শান্তি
পাখিরা উড়ুক, জানালাটা রাখো খোলা
নদীজলে রাখো নৌকার পাল তোলা
বসন্ত হাসুক পথে পথে বারবার
আজ পৃথিবীর শান্তিই দরকার।
আঁধারে ফুটুক আলোর সূর্যমুখী
আমরা মানুষ শান্তির অভিমুখী।