আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, আমি তো কেবল ওহির মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু যারা বধির তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা শোনে না। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৫)
তাফসির : আলোচ্য আয়াতে দুটি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এক. ওহি শব্দের অর্থ ইশারা দেওয়া এবং গোপনে কিছু জানানো। এর পারিভাষিক অর্থ হলো আল্লাহর নির্বাচিত বান্দাদের মধ্যে কারো ওপর বিশেষ বার্তা অবতরণ করা বা কোনো বিষয়ে জানানো।
যুগে যুগে ওহির মাধ্যমে মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের নিজ নির্দেশনা প্রেরণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার কাছে ওহি পাঠিয়েছি, যেমন—নুহ ও তাঁর আগের নবীদের কাছে ওহি পাঠিয়েছিলাম, ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউনুস, হারুন ও সুলায়মান (আ.)-এর কাছে ওহি পাঠিয়েছিলাম এবং দাউদকে জাবুর দিয়েছিলাম। অনেক রাসুল পাঠিয়েছি, যাদের কথা আগে আপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসুলের কথা আপনাকে বলিনি, এবং মুসার সঙ্গে আল্লাহ আলাপ করে ছিলেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬৩)
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর ওহির মাধ্যমে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এরই আলোকে তিনি ইসলাম প্রচার করেছেন। তিনি কোরআনের নির্দেশনায় অবিশ্বাসীদের সবাইকে আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতেন। এসব সতর্কবার্তা মহানবী (সা.)-এর নিজের পক্ষ থেকে নয়; বরং তিনি আল্লাহর নির্দেশনার প্রচারক মাত্র। তাঁর দায়িত্ব কেবল মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া এবং কেউ তাঁর নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তাদের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তা তো ওহি, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩-৪)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করে। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৪)।
আয়াতের দ্বিতীয়াংশে আল্লাহর অবাধ্যদের বধির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তারা নিজেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের কাজে ব্যয় করে না। মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই এসব অঙ্গের নিষ্ক্রিয়তার মানে মানুষের অন্তর ও দেহের নিষ্ক্রিয়তা। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নির্দেশনা অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে বিশেষভাবে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো, তারা বলল—না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি তার অনুসরণ করব, যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছু বুঝত না, এবং তারা সৎ পথেও পরিচালিত ছিল না। যারা কুফরি করে, তাদের উপমা হলো যেমন—কোনো ব্যক্তি এমন কিছুকে ডাকে, যা হাঁকডাক ছাড়া আর কিছুই শোনে না—বধির, মূক, অন্ধ। সুতরাং তারা বুঝবে না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭০-১৭১)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে, ভালো কাজ করেছে এবং তাদের রবের প্রতি বিনয়ী, তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। দল দুটির উপমা হলো অন্ধ ও বধিরের এবং চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তি সম্পন্নের মতো, তারা উভয়ে কি সমান? তবু কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ২৪)।
মহান আল্লাহ সবাইকে তাঁর নির্দেশনা পালন করার তাওফিক দিন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ