গতকাল চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। করোনার অভিঘাতে নির্দিষ্ট সময়ের বহু পরে অনুষ্ঠিত এবারের এসএসসিতে গত বছরের চেয়ে পাশের হার কমেছে; তবে বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ বছর ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এ হিসাবে গতবারের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৮৬ হাজার ২৬২ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০। অন্যদিকে, এবার পাশ করেছে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী। পাশের হার কমেছে গতবারের চেয়ে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। গতবার পাশ করেছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাশের হার ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ; মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গড় পাশের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশিত হওয়ার যে রেওয়াজ রয়েছে, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। সময়মতো পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ধাপের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এবার পাশের হার কেন হ্রাস পেল-শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা নিশ্চয়ই তা মূল্যায়ন করবেন। মাধ্যমিকে পাশের হারের উল্লম্ফন শুরু হয়েছিল মূলত ‘অবজেকটিভ’ পদ্ধতির প্রশ্নপত্র চালুর পর। ইতোমধ্যে দেশে চালু হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র। উদ্দেশ্য, মুখস্থ বিদ্যার ওপর শিক্ষার্থীদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। তবে দেশে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদানে সক্ষম শিক্ষকের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এদিকটায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, জিপিএ-৫ বৃদ্ধির চেয়েও জরুরি হলো শিক্ষার মান বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি কতটা, এর নিরীক্ষা হওয়া দরকার। বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা অনেকটা কমেছে-এটা ঠিক; তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। এগুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা উদ্বেগজনক।
শিক্ষার্থীদের জীবনে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করে তবেই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়, যা ভবিষ্যৎ জীবন গঠন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। মূলত শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় হলো ভিত মজবুত করার উপযুক্ত সময়। যারা এ সময়টাকে কাজে লাগায়, স্বভাবতই তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না মানসম্পন্ন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগদান জরুরি। আশঙ্কাজনক হলো, পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ে। এ বাস্তবতায় ঝরে পড়া রোধসহ শিক্ষার মান বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এবার যারা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের সবার প্রতি রইল অভিনন্দন। যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আগামী দিনে ভালো ফলের জন্য এখন থেকেই তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।