Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামএমপিওভুক্তিতে ঘুস বাণিজ্য

এমপিওভুক্তিতে ঘুস বাণিজ্য

দেশে শিক্ষা খাতের দুর্নীতি নিয়ে এত সমালোচনা সত্ত্বেও এ খাতে দুর্নীতি না কমার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ খাতের দুর্নীতি রোধে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছিল।

এগুলো আমলে নেওয়া হলে এ খাতে দুর্নীতি অনেক কমে আসত, অনুমান করা যায়। এখনো টিআইবির সুপারিশগুলো আমলে নিতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশন। তা না হলে এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।

গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজে বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্য চলছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিভিন্ন কার্যালয়ে সেবাপ্রার্থীদের নির্ধারিত হারে ঘুস দিতে হয়। অথবা প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির করাতে হয়।

যারা এ দুটির কোনোটির আশ্রয় নিতে পারেন না, তাদের যে কোনো কাজের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। মাউশির প্রায় সব আঞ্চলিক কার্যালয়ে এমপিওসংক্রান্ত যত কাজ আছে, তাতে কমবেশি অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয়ে মাঝেমধ্যে দু-একটি লোক দেখানো সতর্ক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করে কর্তৃপক্ষ।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এমপিওর কাজে ঘুস লেনদেনসংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল টিআইবি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদে পদে ঘুস দিতে হয়।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, তাদের গবেষণায় মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, এমপিওভুক্তি থেকে শুরু করে পদে পদে আর্থিক লেনদেনের চিত্র উঠে এসেছিল। এ খাতে সুশাসনের ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তিনি।

সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে সক্ষম হচ্ছেন কি না, তা জোরালোভাবে যাচাই করে দেখা উচিত। এ ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। যিনি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য নন, তিনি যদি এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেতে সক্ষম হন, তাহলে তার কাছে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কাক্সিক্ষত সময়ে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে হলে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরাই পারেন মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ যাতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের মান প্রশ্নবিদ্ধ হলে দেশের মানবসম্পদের উন্নয়নে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে।

শিক্ষা খাতের দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাউশির বিভিন্ন কার্যালয়ে যারা সেবা নিতে আসেন, তারা সবাই শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগররা অব্যাহতভাবে হয়রানির শিকার হবেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যেসব কর্মকতা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অন্য দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবেন। বস্তুত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে তাদের বেপারোয়া আচরণে সৎ কর্মকতা-কর্মচারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দেশের সব খাতের দুর্নীতি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments