Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeজাতীয়এবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো ড. ইউনূসের বই

এবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো ড. ইউনূসের বই

নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা বই কিনে ‘বিপাকে’ পড়েছিল সংসদ। এখন সেই বিপাক আর নেই। কারণ এবার তালিকা থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে ড. ইউনূসের বইটি। এতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সংশ্লিষ্টরা। তালিকা থেকে বইটি বাদ দিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বইটি বাদ দিতে পেরে স্বস্তিতে আছেন বইটি কেনার সঙ্গে জড়িতরা। গত মে ও জুন মাসে দুই দফায় চার শতাধিক বই কেনে সংসদ সচিবালয়। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটিডের মাধ্যমে বইগুলো কেনা হয়। এরমধ্যে ১৯শে জুন পাঞ্জেরীকে ৩৩টি বইয়ের চূড়ান্ত তালিকা দেয়া হয়। যার অর্ডার নং-১১.০০.০০০০.৬০৪.০৭.০৮৭.২২, তারিখ: ১৯-০৬-২০২২।

এতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা-এ ওয়ার্ড অফ থ্রি জিরোস: দ্য নিউ ইকোনমিকস অফ জিরো প্রভার্টি, জিরো আনইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড জিরো নেট কার্বন ইমিশনস বইটি তালিকাভুক্ত ছিল। অর্ডার অনুযায়ী গত ৫ই জুলাই বইটির দুই কপি সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরির জন্য সরবরাহ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বইগুলোর দাম পরিশোধ করা হয়। 

এরপরই ড. ইউনূসের লেখা বইটি নিয়ে শুরু হয় টানাহেঁচড়া। সংসদ সচিবালয়ের বই নিয়ে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা প্রথম বইটি নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারা জানান, বইটিতে সরকারবিরোধী নানা ধরনের লেখা ও মন্তব্য রয়েছে। তাই এ বইটি কেনা ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবে এ বইয়ের বিষয়ে জানতে পারলে লাইব্রেরিতে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির মুখে পড়তে হতে পারে। যাচাই-বাছাই কমিটির এ মন্তব্যের পর লাইব্রেরিতে কর্মরত কর্মকর্তারা বইটি নিয়ে কি করবেন তা বুঝে উঠতে পারেননি। কারণ বইটির নাম চূড়ান্ত তালিকায় ছিল আবার তা কেনার পর দামও পরিশোধ করা হয়েছে। তাইতো প্রতিনিয়ত বইটির অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। হাতেগোনা কয়েক এমপি সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে আনাগোনা করেন। প্রথমে বইটি লাইব্রেরির শেলফে রাখা হলেও পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। লাইব্রেরিতে আসা কোনো এমপি’র নজরে যেন বইটি না পড়ে। পরে রাখা হয় উপ-পরিচালক (গ্রন্থাগার) জেব উন নেছার অফিস কক্ষে। তবে সেখানে বইটি উল্টো করে রাখা হয় যেন কারও নজরে না পড়ে। পরে সেখান থেকেও বইটি সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর মানবজমিন-এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

 এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সংসদ সচিবালয়ে। সংসদ সচিব কেএম আবদুস সালাম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে এ নিয়ে কৈফিয়ত তলব করেন। পাশাপাশি তিনি সংসদ লাইব্রেরির তথ্য কে বা কারা মিডিয়াকে দিচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেন। মানবজমিন-এ সংবাদ প্রকাশের পরেই সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক শাখার কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। তারা বইটি তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে নতুন করে তালিকা তৈরি, যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ ও বিল, ভাউচার তৈরি করেন। শুধু তালিকা থেকে ড. ইউনূসের বইটি বাদ দিতে এ ধরনের আয়োজন করে সংসদ সচিবালয়। এ প্রসঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মো. আরিফুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা তো ড. ইউনূসের কোনো বই কিনিনি। তাই বাদ দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বইটি কেনা হয়েছিল, লাইব্রেরির শেলফে রাখা হয়েছিল ও বিল পরিশোধ করা হয়েছিল এমন তথ্য ও প্রমাণাদি রয়েছে জানিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাহলে এ বিষয়ে কথা বলার উপযুক্ত ব্যক্তি তিনি নন। 

বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক লাইব্রেরির এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নতুন করে ডকুমেন্টস তৈরি করা হয়। সংশোধনী আনা হয় চূড়ান্ত তালিকা ও বিলে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা ২৮৮ পৃষ্ঠার বইটির প্রথম সংস্করণ বের হয় ২০১৭ সালে। রকমারিতে যার মূল্য দেয়া রয়েছে ১০৭৮ টাকা। বইটি প্রকাশ করে ভারতের বিখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা হাচিতী ইন্ডিয়া।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments