Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মএকজন নওমুসলিমকে যেভাবে ইসলাম শিখিয়েছেন মহানবী (সা.)

একজন নওমুসলিমকে যেভাবে ইসলাম শিখিয়েছেন মহানবী (সা.)

নবীজি (সা.)-এর কাছে প্রথমদিকে যেসব সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আমর ইবনে আবাসা (রা.) তাঁদের একজন। দীর্ঘ সত্য সন্ধানের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মূর্তি উপাসনা ও আরাধনা তাঁর অপছন্দ ছিল। শিরকের প্রতি ঘৃণা আর সত্যসন্ধানী মন তাঁকে ইসলামের পথে উদ্বুদ্ধ করেছে।

তিনি বলেন, সত্যের সন্ধানে আমি মক্কার উদ্দেশে বের হলাম। মক্কায় পৌঁছে জানলাম, রাসুল (সা.) গোপনে ইসলাম প্রচার করছেন। আর তাঁর গোত্রের লোকেরা তাঁর প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। আমি চুপিচুপি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তিনি মক্কায় ওকাজ নামক স্থানে ছিলেন। আমি সেখানে পৌঁছে তাঁকে সালাম দিলাম। এবং ইসলাম বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা করলাম।

আমি আবেদন করলাম, আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই এবং আপনার অনুসরণ করতে চাই। বললেন, এখন তা সম্ভব নয়। দেখছ না, পরিস্থিতি কত প্রতিকূল? আমি গোপনে দাওয়াত দিচ্ছি আর আমার জাতি চরম বিরোধিতা করছে। তুমি এখন পরিবারের কাছে ফিরে যাও। যখন শুনবে আমার বিজয় হয়েছে তখন আমার কাছে চলে এসো। ’ এ কথা শুনে আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে এলাম।

আমর ইবনে আবাসা বলতেন, ‘তখন আমি ছিলাম ইসলামের (মুসলমানদের) চারভাগের একভাগ। অর্থাৎ চারজনের একজন। ’ এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করলেন। আমি স্বদেশেই অবস্থান করছিলাম ও সব তথ্য রাখছিলাম। এরই মধ্যে একদিন মদিয়ার একটি কাফেলা এলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মক্কা থেকে যিনি মদিনায় গিয়েছেন তাঁর খবর কী?’ তারা বলল, ‘মানুষ খুব দ্রুত তাঁর ধর্ম গ্রহণ করছে। তাঁর কওম তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল, পারেনি। ’

তখন আমি মদিয়ায় গেলাম ও রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘মক্কায় আমার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। ’

আমি বললাম, জি। তারপর জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আল্লাহর রাসুল, আমার অজানা বিষয়, যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দিন। আমাকে নামাজ শিক্ষা দিন। ’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘ফজরের নামাজ আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ওই সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে। ‘যখন সূর্য উঁচু হয় তখন নামাজ পড়বে। কারণ নামাজ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এরপর যখন বর্শার ছায়া সংক্ষিপ্ত হয় (অর্থাৎ সূর্য মধ্য গগনে উঠে আসে) তখন নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়।

এরপর যখন ছায়া দীর্ঘ হতে আরম্ভ করে তখন নামাজ পড়বে। মনে রাখবে, সব নামাজ আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়।

আসরের নামাজের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য অস্ত যায় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ওই সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে।

আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসুল, আমাকে অজু শেখান। ’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যখন তোমার সামনে অজুর পানি আসবে প্রথমে কুলি করবে। তারপর নাকে পানি দেবে ও নাক ঝাড়বে। তখন চেহারা, মুখের ও নাকের গুনাহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক মুখমণ্ডল ধৌত করবে তখন পানির সঙ্গে দাঁড়ির অগ্রভাগ দিয়ে চেহারার গুনাহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন কনুইসহ দুই হাত ধৌত করবে তখন আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে দুই হাতের গুনাহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন মাথা মাসেহ করবে তখন চুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথার গুনাহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন টাখনুসহ দুই পা ধৌত করবে তখন পায়ের আঙুলির অগ্রভাগ দিয়ে পায়ের গুনাহ ঝরে পড়বে। এরপর যদি বান্দা নামাজে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর শান মোতাবেক হামদ, সানা ও তাঁর মহত্ব বর্ণনা করে, অন্তরকে সব কিছু থেকে খালি করে একমাত্র আল্লাহমুখী হয়, তাহলে সে নামাজ শেষ করার পর সদ্যোজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। ’

এ হাদিস শুনে সাহাবি আবু উমামা (রা.) বললেন, ‘হে আমর ইবনে আবাসা, কী বলছেন, ভেবে দেখুন। এভাবে একবার নামাজ পড়লেই বান্দা এই ফজিলত লাভ করবে?

আমর বললেন, ‘আবু উমামা, আমার বয়স হয়েছে, মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় কিসের আশায় আমি আল্লাহর রাসুলের নামে মিথ্যা বলতে যাব? আমি যদি রাসুল থেকে এ কথা একবার, দুবার, তিনবার, সাতবার না শুনতাম আমি তা বর্ণনা করতাম না। আমি তো এই কথা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে এর চেয়েও বেশিবার শুনেছি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৩২)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments