Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মউপকারকারী প্রতিদানের হকদার

উপকারকারী প্রতিদানের হকদার

কেউ উপকার করলে তাকে প্রতিদান দেওয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ ছিল। এ বিষয়ে ইমরান বিন হুসায়ন (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো এক সফরে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম।

প্রভাতের নিকটবর্তী সময়ে আমরা এক গন্তব্যে অবতরণ করলাম। আমাদের চোখ ঘুমে পরিপূর্ণ ছিল, এমনকি সূর্য উঠে গেল। আমাদের মধ্যে আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম জেগে উঠলেন। আমাদের অভ্যাস ছিল, যখন নবী করিম (সা.) ঘুমাতেন তখন ঘুম থেকে তাঁকে জাগাতাম না, যতক্ষণ না নিজে জেগে উঠতেন। এরপর ওমর (রা.) জেগে উঠলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে তাকবির দিতে লাগলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.) জেগে উঠলেন। মাথা তুলে দেখতে পেলেন যে সূর্য উদিত হয়েছে।

তিনি বলেন, তোমরা চলো। তিনি আমাদের নিয়ে চললেন। যখন সূর্যের আলো পরিষ্কার হয়ে গেল তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। লোকদের মধ্য থেকে একজন আলাদা রইল। সে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করল না। সালাত শেষ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক, কোন জিনিস তোমাকে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় থেকে বিরত রাখল? সে বলল, হে আল্লাহর নবী, আমার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের আদেশ করেন। সে মাটি দ্বারা তায়াম্মু করে সালাত আদায় করল।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন আরোহীসহ আমাকে পানির তালাশে আগে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা ভীষণ পিপাসিত ছিলাম। আমরা যখন পথ চলছিলাম, তখন আমরা এক নারীকে দেখতে পেলাম। সে উটের পিঠে দুটি পানির মশকের মধ্যে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায় আছে? সে বলল, অনেক অনেক দূরে, তোমরা পানি পাবে না। আমরা বললাম, তোমার বাড়ি থেকে পানির স্থানের দূরত্ব কতটুকু? সে বলল, এক দিন ও এক রাতের পথ। আমরা বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে চলো। সে বলল, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে? আমরা তার সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে চললাম এবং তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে নিয়ে গেলাম। তিনিও তাকে জিজ্ঞেস করলেন। সে তাঁর কাছে সেরূপ বলল, যেরূপ আমাদের কাছে বলেছিল। সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এও জানাল যে সে একজন বিধবা, তার কয়েকজন এতিম বাচ্চা আছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পানি বাহক উট সম্পর্কে নির্দেশ দিলে সেটি বসানো হয়। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) মশক দুটির ওপরের মুখ দুটিতে কুল্লির পানি ঢেলে দিলেন। এরপর আমরা ৪০ জন তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম এবং আমাদের সঙ্গে যে মশক ও পাত্র ছিল, তা ভরে নিলাম। আমাদের সে সঙ্গীটিকেও গোসলের পানি দিলাম। সেও ভালোভাবে গোসল করল। তবে আমাদের উটগুলোকে পানি পান করাইনি। এদিকে মশক দুটি পানিতে ফেটে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল।

অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেন, তোমাদের সঙ্গে যার যা আছে নিয়ে এসো। আমরা তাঁর জন্য রুটির টুকরা ও খেজুর একত্র করলাম। আর তাঁর জন্য এগুলো একটি পোটলায় বেঁধে দেওয়া হলো। রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই নারীকে বলেন, তুমি যাও আর এগুলো তোমার পরিবারকে এবং তোমার এতিম বাচ্চাদের খাওয়াও। আর জেনে রেখো, আমরা তোমার পানি হ্রাস করিনি। তারপর সে যখন তার পরিবারের কাছে এলো তখন বলল, আমি আজ মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বড় ‘জাদুকরের’ (ওই নারীর প্রাথমিক ধারণা মতে) সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। অথবা তার ধারণা অনুযায়ী, তিনি নবী। পরে ওই নারী ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে আল্লাহ তাআলা সেই নারীর অসিলায় তার গোত্রকে হিদায়াত দান করেন। তারাও ইসলাম গ্রহণ করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৮২)

আমাদের উচিত, উপকারীর উপকার অকপটে স্বীকার করা এবং তাকে সাধ্যমতো প্রতিদান দেওয়া।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments