উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এর কোনো প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না; বরং চলতি অর্থবছরের ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তারা বলছেন, সরকার নিজে থেকেই কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য কিছু প্রকল্প স্থগিত, কিছু প্রকল্পের অংশবিশেষ বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও খরচ বাড়ছে কেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেখতে হবে কোন্ ধরনের প্রকল্পে খরচ বেশি হচ্ছে। তবে এটিকে ইতিবাচকও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। যেমন পরিকল্পনা সচিব যুগান্তরকে বলেছেন, অর্থবছরের শুরুতেই ব্যয় বাড়ছে, এটি ভালো লক্ষণ। কৃচ্ছ্রসাধন করা হলেও যেসব প্রকল্পে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তারা সেই টাকার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে। তবে এক্ষেত্রে কোনো ফাঁক আছে কিনা, তা দেখা দরকার।
আমরা জানি, কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসাবে সরকার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে কোন্ প্রকল্পের জন্য কত শতাংশ টাকা ব্যয় করা যাবে, তা-ও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে এ, বি ও সি এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত প্রকল্পগুলো অবশ্যই প্রয়োজন, এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পের পুরো টাকা খরচ করা যাবে। ‘বি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করা যাবে। আর ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত থাকবে। এখন দেখার বিষয় হলো, যেসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলো কোন্ শ্রেণির। যদি ‘এ’ শ্রেণির হয়, তাহলে তা ভালো লক্ষণ অবশ্যই। কিন্তু যদি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বের অর্থাৎ ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বেশি হয়, তাহলে তা চিন্তার বিষয় বৈকি! জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোর শ্রেণি উন্নয়নে তোড়জোড় শুরু করেছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ এতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। আমরা মনে করি, সংকট মোকাবিলায় সব ক্ষেত্রেই সাশ্রয়ী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির প্রয়োজন হয়, সেগুলো বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়াই সমীচীন। তবে যেসব প্রকল্প চলমান থাকবে, সেসব প্রকল্প যেন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার।