Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মইসলামে সহনশীলতার চর্চা

ইসলামে সহনশীলতার চর্চা

আজ আন্তর্জাতিক ইসলামভীতি প্রতিরোধ দিবস। গত বছরের ১৫ মার্চ ক্রমবর্ধমান ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাবোধ রোধে জাতিসংঘের অনুমোদনের পর এবছরই প্রথম দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পক্ষে পাকিস্তানের উত্থাপিত প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশের পাশাপাশি রাশিয়া, চীনসহ আরো আটটি দেশের সমর্থনে প্রস্তাবটি পাস হয়। ২০১৯ সালের এই দিনে জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল-নুর মসজিদ ও লিনউড ইসলামিক সেন্টারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়। মূলত ভয়াবহ এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় রাখতে এটিকে আন্তর্জাতিক ইসলামভীতি প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। 

সাধারণত ইসলামভীতি বলতে ইসলামবিদ্বেষ কিংবা মুসলিমবিরোধী মনোভাবকে বোঝানো হয়। ক্যামব্রিজ ডিকশনারি মতে, মুসলিম বা ইসলামের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অপছন্দ বা ভয় এবং কুসংস্কার লালন করা। সাধারণত ইসলামসংশ্লিষ্ট স্থান যেমন—মসজিদ, ইসলামী প্রতিষ্ঠান, কোরআন ও হাদিস, বোরকা-হিজাব, দাড়ি, টুপি ইত্যাদির প্রতি ভয় ও ঘৃণাবোধ থেকে দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে মুসলিমদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ পায়। ইসলামফোবিয়া ১৯২৩ সালে ইংরেজিতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। ১৯১০ সালে প্রকাশিত ফরাসি গবেষক অ্যালাইন কোয়েলিয়ানের একটি থিসিসে ইসলামের বিরুদ্ধে বৈষম্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই ইসলামফোবিয়া বিদ্যমান। ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি অনেক মুসলিম দেশেও এ ধরনের মনোভাব বাড়ছে। ওআইসির ১৪তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ইসলামোফোবিয়ার হটস্পট হিসেবে বিশ্বের ১০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেসব দেশের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা হলো ফ্রান্স, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, দখলকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ড, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া।

সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে করণীয়

বৈশ্বিক শান্তি ও সম্প্রীতি বিস্তার ও সবার মধ্যে ইসলামের প্রতি সহনশীল মনোভাব তৈরি করতে নিম্মোক্ত উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা : ইসলাম একটি সামাজিক জীবনব্যবস্থা। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ মানুষকে সর্বোত্তম কাজের নির্দেশ দেয়। তাই ইসলাম অনুসরণকারী চিন্তা-বিশ্বাস ও কাজকর্মে সমাজের সবচেয়ে অগ্রগামী সদস্য। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার লালনের প্রতি ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছে তার মাধমে আখিরাতের অনুসন্ধান কোরো এবং দুনিয়ায় তোমার অংশের কথা ভুলো না, তুমি অনুগ্রহ কোরো যেভাবে আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না, আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৭৭)

সুন্দর আচার-ব্যবহারের জন্য মহানবী (সা.) ছিলেন সবার কাছে সুপরিচিত। তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য অনুগ্রহ হিসেবে পাঠানো হয়েছে। তিনি তার আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের সর্বোত্তম নমুনা ছিলেন। রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘তাঁর চরিত্র হলো পবিত্র কোরআন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৮১৩)

ইসলামের মৌলিক শিক্ষার প্রসার : একমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা বাস্তব জীবনে পালন করাই একজন মুসলিমের প্রধান কর্তব্য। তাই পবিত্র কোরআনে ভালো কাজ করা ও ভালো কথা বলার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো এবং সঠিক কথা বোলো। তিনি তোমাদের কাজকে ত্রুটিমুক্ত করবেন, তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন, যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৭১)

মসজিদভিত্তিক কার্যক্রম বৃদ্ধি : মসজিদ মুসলিম সমাজের প্রধান কেন্দ্র। তাই মসজিদে নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। যেন সমাজের সঙ্গে মসজিদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। মসজিদে এসে সবাই যেন ইসলামের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না, অতএব আশা করা যায় যে তারা সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১৮)

সামাজিক সুসম্পর্ক তৈরি : আল্লাহর প্রথম আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) সব মানুষের আদি উৎস। তাই মানুষের সুসম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। আর সবার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হবে জীবনের সবক্ষেত্রে আল্লাহভীরু হওয়া এবং ভালো কাজ করা। তাই অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, সুখ-দুঃখের সময় একে অপরকে দেখতে যাওয়া, ভালো কাজে সহযোগিতাসহ সব ধরনের ভালো কাজের প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ভালো কাজ ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে পরস্পরকে সহযোগিতা কোরো এবং পাপ কাজ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা কোরো না, আল্লাহকে ভয় কোরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)

কল্যাণমূলক কাজের পরিধি বৃদ্ধি : অন্যের উপকার করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রিয় হয়। তাই কল্যাণমূলক কাজের পরিধি বৃদ্ধি করা উচিত। আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো সেই ব্যক্তি যে মানুষের বেশি উপকার করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোনো মুসলিমকে আনন্দ দেওয়া কিংবা তার কোনো বিপদ দূর করা বা ঋণ পরিশোধ করা বা ক্ষুধা নিবারণ করা। কোনো ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে হেঁটে যাওয়া আমার কাছে এই মসজিদে ইতিকাফের চেয়ে অনেক প্রিয়। যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও রাগ সংবরণ করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার অন্তরকে সন্তুষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি কোনো ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে হেঁটে গেল এবং তা পূরণ করল আল্লাহ সেই দিন তার পা সুদৃঢ় রাখবেন যেদিন সব পা পিছলে যাবে।’ (তাবারানি, হাদিস : ৬০২৬)

পারস্পরিক দূরত্ব কমানো : অনেক সময় ইসলামের নামে সমাজে ভুল বার্তা ছড়ানো হয়। যা পারস্পরের প্রতি ভুল ধারণা ও দূরত্ব তৈরি করে। তখন অনেকে অন্যায় কাজ ও বিশৃঙ্খলা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়। সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সঠিক বার্তা সমাজে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায়ভিত্তিক সাক্ষ্যদানে অবিচল থাকো, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার কোরো, তা আল্লাহভীতির অধিক নিকটতম এবং আল্লাহকে ভয় কোরো, তোমরা যা কর আল্লহ তা সম্পর্কে অবগত। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments