Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মইসলামে সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারের গুরুত্ব

ইসলামে সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারের গুরুত্ব

মানুষের পার্থিব জীবনের প্রয়োজন পূরণে সম্পদ অপরিহার্য। ইসলাম মানুষের এই প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অনুমতি দিয়েছে। তবে সম্পদকে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পরিণত করতে নিষেধ করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ ও কাঙ্ক্ষিত হিসেবে উত্কৃষ্ট।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)

উল্লিখিত আয়াতে সম্পদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট হয়। তা হলো সম্পদ জীবনের জন্য প্রয়োজন এবং তা থাকা ভালো। কিন্তু সম্পদকে জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্যে পরিণত করা যাবে না। মুমিনের জীবনে চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো পরকাল।

সম্পদ আল্লাহর অনুগ্রহ : ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদ আল্লাহর অনুগ্রহ। সম্পদের সঠিক ব্যবহার মানুষের জন্য কল্যাণকর। কাব বিন মালিক (রা.) নিজের সমুদয় সম্পদ দান করার ইচ্ছা করলে মহানবী (সা.) বলেন, কিছু সম্পদ তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। এটি তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৫৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আনাস বিন মালিক (রা.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে সম্পদের অনুগ্রহ কামনা করেছেন। তিনি দোয়া করেন, হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দিন এবং তাতে বরকত দিন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩৩৪)

সম্পদ অর্জন করা দোষের নয় : বৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনে ইসলামে কোনো বাধা নেই। নবী-রাসুল (আ.) থেকে সাহাবায়ে কিরাম ও পূর্ববর্তী বহু মনীষী বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হন। তবে পার্থক্য হলো, তাঁদের সম্পদ তাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করতে পারেনি। নবী (সা.) বলেছেন, একবার আইয়ুব কাপড় খুলে গোসল করছিলেন, তাঁর ওপর একপাল সোনার টিড্ডি পড়ল, তিনি তা মুষ্টি মুষ্টি করে কাপড়ে তুলছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর প্রতিপালক তাঁকে ডেকে বলেন, ‘হে আইয়ুব, আমি কি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করিনি—যা দেখছ তা থেকে?’ তিনি বললেন, অবশ্যই হে আমার প্রতিপালক! তবে আপনার বরকত থেকে আমার অমুখাপেক্ষিতা নেই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৯১)

সায়িদ ইবনে মুসায়্যিব (রা.) বলতেন, ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে সম্পদ অর্জন করে না যার দ্বারা সে তার ঋণ পরিশোধ করবে, সম্ভ্রম রক্ষা করবে। যদি মারা যায়, তাহলে পরবর্তীদের জন্য রেখে যাবে। (আল-হাসসু আলাত-তিরাজারা, পৃষ্ঠা ৮০)

সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলতেন, বর্তমান যুগে সম্পদ হাতিয়ারস্বরূপ। (তাফসিরে কুরতুবি : ৩/৪২০)

উৎপাদনশীল ব্যবহারে ইসলামের নির্দেশনা

সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে ইসলাম নানামুখী নির্দেশনা দিয়েছে। নিম্নে এমন কিছু নির্দেশনা তুলে ধরা হলো।

১. অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখা বারণ : ইসলাম সম্পদ অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখতে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সাবধান! যে ব্যক্তি এমন এতিমের তত্ত্বাবধান করে যার সম্পদ আছে, সে যেন ওই সম্পদ ব্যবসায় খাটায়, অহেতুক ফেলে না রাখে। নতুবা জাকাত তা খেয়ে শেষ করে ফেলবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৪১)

২. উৎপাদনের ভিত্তিকে সম্পদের মালিকানা : সম্পদের উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে ইসলাম কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে মালিকানা প্রদানের বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কেউ যদি অনাবাদি ভূমি আবাদ করে, তবে সে তার মালিক। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৭৩)

উল্লিখিত হাদিসের আলোকে ফকিহ আলেমরা বলেন, মানুষের ব্যক্তিমালিকানাধীন নয় এমন অনাবাদি ভূমি যদি কেউ আবাদ করে, তবে সে তার মালিকানা লাভ করবে। তবে শর্ত হলো, এমন ভূমি গ্রহণের পর তা অনাবাদি অবস্থায় তিন বছরের বেশি সময় ফেলে রাখতে পারবে না। (ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ, পৃষ্ঠা ১৮০)

৩. নির্বোধের হাতে সম্পদ নয় : সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারবে না, বরং তা অবিবেচকের জন্য নিঃশেষ করে ফেলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যাকে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জীবনধারণের মাধ্যম বানিয়েছেন, তা তোমরা নির্বোধ ব্যক্তিদের অর্পণ করেছ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখলে তাদের সম্পদ তাদের ফিরিয়ে দেবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৬)

৪. বর্ধনশীল সম্পদে জাকাতের বিধান : জাকাত সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। কেননা জাকাত ফরজ হয় বর্ধনশীল সম্পদে। কেউ যদি কোনো বর্ধনশীল সম্পদ অনুৎপাদনশীল অবস্থায় ফেলে রাখে, তবে নিসাবের চেয়ে কমে যাওয়া পর্যন্ত তাকে নির্ধারিত হারে জাকাত দিতে হবে। সুতরাং জাকাত বিধান প্রয়োগ করা হলে মানুষের ভেতর সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

৫. সম্পদের সঠিক ব্যবহার : ইসলাম অর্জিত সম্পদ শেষ হওয়ার আগে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। তাকে এ কথা শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যে সম্পদের পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন, তা চূড়ান্ত হিসাবে সীমিত। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।’ (সুরা : কামার, আয়াত : ৪৯)

৬. শ্রমদানে উৎসাহ : ইসলাম জীবিকার অনুসন্ধানে শ্রমদানে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। কেননা ব্যক্তি পরিশ্রমী না হলে তার অর্জিত সম্পদ ক্রমেই নিঃশেষ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)

৭. ভাগ্য বদলের চেষ্টা : ইসলাম ভাগ্যকে দোষারোপ না করে অর্জিত সম্পদের উৎপাদনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করতে বলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১১)

মূলত বৈধ উপায়ে উপার্জন ও বৈধ উপায়ে ব্যয়ের শর্তে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ায় ইসলামের কোনো নিষেধ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সৎ ব্যক্তির জন্য হালাল সম্পদ কত উত্তম বিষয়। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৭৫৬)

আল্লাহ সবাইকে সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার তাওফিক দিন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments