ইসলামের সোনালি যুগের মসজিদ ও তার কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে যে বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়, তা হলো সারল্য, আড়ম্বরহীনতা, ভাবগাম্ভীর্য, আধ্যাত্মিক পরিবেশ, শান্তিপূর্ণ নিরুত্তাপ প্রতিবেশ। একই সঙ্গে তা ছিল তাওহিদ বা একত্ববাদের প্রতীক এবং পৃথিবীর অপরাপর ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপাসনালয় থেকে একেবারেই ভিন্ন। পবিত্র কোরআনে সে যুগের মসজিদ ও মুসল্লিদের বর্ণনা এভাবে দেওয়া হয়েছে, ‘সে সব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সে সব লোক যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সে দিনকে যে দিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৬-৩৭)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য।
সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না। ’ (সুরা জিন, আয়াত : ১৮)
মুমিনের নামাজ কেমন হবে তাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক সিজদাস্থলে (নামাজে) তোমাদের লক্ষ্য স্থির রাখবে এবং তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাকবে। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৯)
মসজিদগুলো তখন মুসলমানদের দ্বিনি কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র এবং তাদের শিক্ষা, দীক্ষা, সংস্কার, সংশোধন ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনা লাভের উেস পরিণত হয়েছিল। মসজিদেই মুসলমানের সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যাগুলোর সমাধান হতো, জীবনের নানা শাখায় বিভিন্ন কর্মতৎপরতার প্রয়োজনীয় বিধান এখানেই প্রণীত হতো। যখন সমাজ বা রাষ্ট্রে কোনো কোনো ঘটনা ঘটত বা কোনো জাতীয় প্রশ্ন সামনে এসে যেত, তখন মুসলিম দূর-দূরান্ত থেকে কেন্দ্রীয় মসজিদে একত্র হতো এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরাও তাদের ‘আস-সালাতু জামিয়াতুন’ (নামাজ একত্রকারী) ঘোষণায় ডেকে পাঠাতেন।
দীর্ঘ যুগ পর্যন্ত মসজিদের এই কেন্দ্রীয় ভূমিকা ও সামগ্রিকতা বজায় ছিল। মুসলমানদের জীবনধারা একে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো। জ্ঞান ও হিদায়াতের উৎস, সংস্কার ও সংশোধন, ধর্মীয় আন্দোলন সব কিছুই মসজিদ থেকে সৃষ্টি হতো এবং তা চতুর্দিকে বিস্তার লাভ করত।
ভাষান্তর : আবরার আবদুল্লাহ